অযোধ্যা সমস্যা সুষ্ঠু ভাবে সমাধান করার জন্য একটি তিন সদস্যের প্যানেল নিয়োগ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। মধ্যস্থতাকারী এই প্যানেলের শীর্ষে থাকছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্ত বিচারপতি এফ এম ইব্রাহিম কলিফুল্লা। এ ছাড়া ওই প্যানেলের অন্য় সদস্যরা হলেন আর্ট অফ লিভিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী শ্রী রবি শংকর এবং প্রবীণ আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু।
২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্টের দেওয়া এক রায়ের রিভিউ পিটিশনের শুনানি চলছিল শীর্ষ আদালতে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট উল্লিখিত রায়ে বলেছিল বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি নির্মোহী আখড়া, সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড এবং রামলালা বিরাজমনের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হোক।
আরও পড়ুন, অযোধ্যা সমস্যার সমাধানে মধ্যস্থতাপ্রয়াসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ওই প্যানেলকে ৮ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মাথায় প্যানেলকে এ কাজে অগ্রগতি সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে এই প্যানেলে আরও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা যাবে, এমন অনুমতিও দিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
অযোধ্যা সমস্যা সমাধানে তিন মধ্যস্থতাকারী কারা
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এফ এম ইব্রাহিম কালিফুল্লা
বিচারপতি কলিফুল্লা, প্রয়াত বিচারপতি এম ফকির মহম্মদের পুত্র। তাঁর আদি বাসস্থান তামিল নাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার করাইকুডিতে। ১৯৭৫ সালের ২০ অগাস্ট তিনি আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হন। সে সময়ে তাঁর মূল কাজের জায়গা ছিল শ্রম আইন সম্পর্কিত মামলা। বেশ কিছু সরকারি বেসরকারি ক্ষেত্রে মামলা লড়েছেন তিনি। তামিলনাড়ু বিদ্যুৎ পর্ষদের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন কলিফুল্লা।
২০০০ সালে তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন। কলিফুল্লার দেওয়া রায়ের ভিত্তিতে চেন্নাই সিটি কর্পোরেশনের ভোট স্থগিত রাখা হয়।
ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানশিক্ষায় বেদিক জ্যোতিষচর্চার সূচনা নিয়ে তাঁর রায়ও ছিল স্মরণীয়। তাঁর রায়ে তিনি বলেন, ”শিক্ষার প্রাথমিক উদ্দেশ্যই হল জ্ঞানার্জন এবং শিক্ষাকে শিক্ষকের শিক্ষক বলেও গণ্য করা হয়ে থাকে। ফলে জ্ঞানতৃষ্ণা মেটানোর জন্য যে কোনও বিদ্যার সমস্ত দিক খোলা রাখা উচিত। সে সুযোগবৃদ্ধির জন্য যে কোনও দিক থেকে যে কোনও রকম চেষ্টাকেই আমার মতে রদ করা উচিত নয়।”
২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কলিফুল্লা জম্মু কাশ্মীরের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১১ সালের ২ এপ্রিল তিনি সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে কর্মভার গ্রহণ করেন।
বিসিসিআইয়ের কার্যপদ্ধতি, রূপরেখা এবং ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন যে বেঞ্চ, তারও সদস্য ছিলেন বিচারপতি কলিফুল্লা।
২০১৬ সালের ২২ জুলাই তিনি অবসরগ্রহণ করেন।
শ্রী শ্রী রবিশংকর
শ্রী শ্রী রবি শংকরের জন্ম তামিল নাড়ুর পাপানসমে। তিনি একজন আধ্যাত্মিক গুরু। দুশ্চিন্তামুক্ত, হিংসামুক্ত এক পৃথিবী তাঁর লক্ষ্য। শ্রী শ্রী আর্ট অফ লিভিং এবং মানবিক মূল্যবোধের আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা।
অযোধ্যা সমস্যার আদালতের বাইরে সমাধান করার পক্ষে এর আগে সওয়াল করেছেন তিনি।
গত বছর শ্রী শ্রী বলেন হিন্দু ও মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বৃহৎ এক মন্দির বানালে অযোধ্যা সমস্যার সমাধান হতে পারে। একেই তিনি সমাধানের একমাত্র উপায় বলেও উল্লেখ করেছিলেন।
প্রবীণ আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু
শ্রীরাম পঞ্চুও তামিল নাড়ুর চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। এর আগেও মধ্যস্থতাকারীর কাজ করেছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে সর্বপ্রথম মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে অন্যতম বলে উল্লেখ করেছে। বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক বিভিন্ন সমস্যায় তিনি মধ্যস্থতা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য মধ্যস্থতার মধ্যে রয়েছে আসাম ও নাগাল্যান্ডের মধ্যেকার ৫০০ বর্গ কিলোমিটার নিয়ে সমস্যা এবং বম্বের পার্সি সম্প্রদায়ের মধ্যেকার একটি সমস্যা।
তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মধ্যস্থতাকারী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী সংগঠনের থেকেও তিনি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
Read the Full Story in English