Three prime ministers in two years: ত্রিশঙ্কু লোকসভা নিয়ে ভয়টা গত কয়েক দশকে দলবদলু আর মোর্চাবদলু নেতাদের কল্যাণে ভারতের ঘুচে গেছে। লোকসভায় সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দলকে কীভাবে প্রধান বিরোধী বানাতে হয়ে, সেই বীজগণিত-পাটিগণিত এই শতকের আগেই সরাসরি শিখে নিয়েছেন ভারতবাসী। সৌজন্যে অবশ্যই সংসদের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদরা।
৯৬-এর ধারাপাত
কংগ্রেসের নরসিমহা রাও সরকারের পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী অবশ্য কাটাকুটির খেলায় ১৩ দিনের বেশি সরকার টিকিয়ে রাখতে পারেননি। তাঁকে সরিয়ে কুর্সিতে বসেছিলেন ১৩ দলের জোটের প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রে জোট সরকার গড়ার চেষ্টা যদিও নতুন নয়। ১৯৭৭-এ হয়েছিল। সরকার ১৯৭৯ পর্যন্ত টিকেছিল। ফের ১৯৮৯-এ জোট সরকার। সেবার দৌড় ছিল ১৯৯১ পর্যন্ত। ১৯৯৬-এর সংস্করণটা বেঁচেছিল ১৯৯৮ অবধি।
১১তম লোকসভা নির্বাচন
একাদশ লোকসভা নির্বাচন। সেটাই ছিল ৯৬-এর ভোটাভুটি। ২৭ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত, ৫৯.২৫ কোটি ভোটারের ৫৭.৯৪% বা ৩৪.৩৩ কোটি নাগরিক ভোট দিয়েছিলেন সেবার। মোট ৭.৬৭ লক্ষ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ১৩,৯৫২ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছিল। ৫৪৩ আসলের লোকসভায় শুধু অন্ধ্রপ্রদেশের নালগোন্ডা নির্বাচনী কেন্দ্রে ৪৮০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আসনটা জিতে নেয় সিপিআইয়ের বোম্মাগনি ধর্ম বিক্রাম।
কংগ্রেসের অবক্ষয়
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত, সেবারই সবচেয়ে কম আসনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। সংখ্যাটা ছিল ১৪০। জনতা জমানায় ১৯৭৭-এও কংগ্রেস তার চেয়ে ১৪টা বেশি আসনে জিতেছিল। ৯৬-এ পিভি নরসিমহা রাওয়ের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে কংগ্রেস পেয়েছিল ২২টা আসন। বিজেপি জিতেছিল ১৬১টিতে। অবিভক্ত উত্তরপ্রদেশের ৮৫টি আসনের মধ্যে ৫২টিতে উঠেছিল গেরুয়া ঝড়। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রদেশের ৪০টির মধ্যে ২৭টি গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। অন্যান্যদের মধ্যে জনতা দল ৪৬, সিপিএম ৩২, ডিএমকে এবং সমাজবাদী পার্টি ১৭টা করে, সিপিআই ১২, বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) ১১ আসনে জিতেছিল।
বিশিষ্টদের জয়
বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও অন্ধ্রপ্রদেশের নান্দিয়াল ও ওড়িশার বেরহামপুর থেকে জিতেছিলেন। হোশিয়ারপুর থেকে জিতেছিলেন বিএসপির কাঁসিরাম, বালিয়া থেকে সমতা পার্টির চন্দ্রশেখর, পিলভিট থেকে জনতা দলের মানেকা গান্ধী, বিজয়রাজে সিন্ধিয়া গুনা ও বসুন্ধরারাজে ঝালোয়ার থেকে জিতেছিলেন। প্রাক্তন দস্যুরানি ফুলনদেবী সমাজবাদী পার্টির টিকিটে জিতেছিলেন মির্জাপুর থেকে। প্রথমবার লোকসভায় পা রেখেছিলেন মুলায়ম সিং যাদব।
বাজপেয়ীর ১৩ দিনের সরকার
রাষ্ট্রপতি শংকরদয়াল শর্মা বিজেপিকে সরকার গড়তে ডাকেন। অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন ১৯৯৬-এর ১৬ মে। কিন্তু, মাত্র সাড়ে তিন বছর আগের বাবরি ধ্বংসের স্মৃতি তখন টাটকা। যার সুবাদে, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিজেপি সেই সময় অস্পৃশ্য ছিল। তাদের তখন বন্ধু বলতে বাল ঠাকরের মহারাষ্ট্রের দল শিবসেনা আর প্রকাশ সিং বাদলের পার্টি পঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দল। ২৭ মে বাজপেয়ী সংসদে আস্থা প্রস্তাব পেশ করেন। দু'দিন বিতর্ক চলার পর প্রস্তাব পাশ হয়নি। বাজপেয়ী তখন বলেন, 'আমি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করতে যাচ্ছি।'
ইউনাইটেড ফ্রন্ট
অকংগ্রেসি বিরোধীরা চন্দ্রবাবু নাইডুর নেতৃত্বে তৈরি করেছিল ১৩ দলের ইউনাইটেড ফ্রন্ট। তার হয়ে কর্ণাটকের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া ১ জুন প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন। তিনি তখনও সাংসদ ছিলেন না। পরে, সেবছর সেপ্টেম্বর রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন। দেবেগৌড়ার সরকারকে বাইরে থেকে কংগ্রেস সমর্থন করেছিল।
আরও পড়ুন- ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী মন্দির! ভেঙে পড়ল একাংশ
কংগ্রেস সভাপতি কেশরী
গান্ধী পরিবার লোকসভা নির্বাচনে হারের পর নরসিমহা রাওকে কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। সেই সময় ১৯৭৯ থেকে কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ পদে থাকা সীতারাম কেশরীকে গান্ধী পরিবারের মদতে কংগ্রেস সভাপতি করা হয়। কংগ্রেস ১৯৯৭ সালের ৩০ মার্চ, দেবেগৌড়া সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। সরকার ১৯৯৭ সালের ১১ এপ্রিল ২৯২-১৫৮ ভোটে আস্থা হারায়। কংগ্রেস চেয়েছিল মুলায়ম সিং যাদব প্রধানমন্ত্রী হোক। কিন্তু, লালুপ্রসাদ ও শরদ যাদব বেঁকে বসেন। তার জেরে ইন্দ্রকুমার গুজরাল ১৯৯৭ সালের ২১ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন। কংগ্রেস ১৯৯৭ সালের ২৮ নভেম্বর গুজরাল সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়। সরকারের পতন ঘটে।