/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/01/sheikh-shahjahan-calcutta-high-court.jpg)
sheikh shahjahan-calcutta high court: শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে না-পারায় পুলিশকে ভর্ৎসনা আদালতের। (ফাইল ছবি)
TMC vs BJP in Sandeshkhali West Bengal: গত দেড় মাস ধরে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্কের কেন্দ্রে সুন্দরবন ব-দ্বীপের সন্দেশখালি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালি গ্রাম এবং জেলার বৃহত্তর সন্দেশখালি-১ ব্লককে ঘিরে কেন এত বিতর্ক?
- - ইডি এখনও হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে, কোথায় শেখ শাহজাহান?
- - সামনেই লোকসভা নির্বাচন, সন্দেহখালি ইস্যু ছাড়তে নারাজ বিরোধীরা।
- - 'সন্ত্রাসের রাজত্ব' সন্দেশখালি! কবে শান্ত হবে সুন্দরবনের এই দ্বীপ?
একটা ইডি অভিযান, তৃণমূলের একজন পলাতক বাহুবলী নেতা
গত ৫ জানুয়ারি, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর একটি দল রাজ্যের জনসাধারণের অভিযোগ করা বণ্টন ব্যবস্থায় অনিয়মের তদন্তে স্থানীয় বাহুবলী নেতা, তথা তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি)-এর শেখ শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালাতে সন্দেশখালি-১ ব্লকে গিয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, শাহজাহানের সমর্থকরা ইডির দলের তিন কর্তার ওপর হামলা চালায়। তাতে তিন আধিকারিক আহত হন। অভিযোগ, সমর্থকরা শেখ শাহজাহানকে পালাতে সাহায্য করেছিল। তারপর থেকেই শেখ শাহজাহান পলাতক।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/01/Sheikh-Shahjahan-Sandeshkhali.jpg)
যৌন নির্যাতন ও জমি দখলের অভিযোগ
গত ৮ ফেব্রুয়ারি, কিছু স্থানীয় মহিলা ঝাড়ু এবং লাঠি নিয়ে সন্দেশখালির প্রধান সড়ক অবরোধ করে। শাহজাহান এবং তার দুই সহযোগী শিবপ্রসাদ হাজরা এবং উত্তম সরদারকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানায়। তাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন এবং হয়রানির অভিযোগও আনে। আন্দোলনকারী মহিলাদের মধ্যে একজন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'ওরা আমার শাড়ি ধরে টেনেছে। শরীরের গোপনাঙ্গ স্পর্শ করেছে। আমি চুপ থেকেছি। কারণ, জানতাম যে প্রতিবাদ করলে কী হতে পারে।' পরের দিন, ৯ ফেব্রুয়ারি- মহিলা বিক্ষোভকারীরা শিবপ্রসাদ হাজরার সম্পত্তিতে হামলা চালায়। তার পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দেয়। অভিযোগ ওঠে, অবৈধভাবে দখল করা জমিতে ওই পোল্ট্রি ফার্ম চালাচ্ছিল শিবপ্রসাদ ওরফে শিবু হাজরা।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/02/Mamata-Banerjee-Sheikh-Shahjahan.jpg)
সুন্দরবন ব-দ্বীপ দ্বীপের রাজনৈতিক অর্থনীতি
অভিযোগ উঠেছে, শাহজাহান ও তাঁর লোকজন সন্দেশখালিতে কার্যত 'সন্ত্রাসের রাজত্ব' চালাত। সন্দেশখালি, সুন্দরবন ব-দ্বীপের শত শত দ্বীপের একটি। এখানে গঙ্গা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র প্রণালি বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এটি ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সীমারেখা দিয়ে জোয়ারের জলপথ, নদী, খাল এবং খাঁড়ি দ্বারা বেষ্টিত। দ্বীপের জলীয় বাস্তুতন্ত্র পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এবং মাছ চাষের জন্য আদর্শ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সন্দেশখালি-১ ব্লকের প্রায় ৪৯% হিন্দু, ৩০% মুসলিম এবং ১৫% খ্রিস্টান। অমুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩০%। যার মধ্যে রয়েছে তফসিলি জাতি (এসসি) এবং ২৬% তপশিলি উপজাতি (এসটি)। সন্দেশখালি দ্বীপে বসবাসকারী বেশিরভাগ এসসি এবং এসটি-পেশাগতভাবে কৃষক এবং মৎসজীবী।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/01/shahjahan-sheikh-ed.jpg)
তেভাগা আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল
এই সন্দেশখালি তেভাগা আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল (১৯৪৬-৪৭)। এখানে কৃষকরা কৃষি উৎপাদনের ভাগের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। সন্দেশখালি ২০১০ পর্যন্ত সিপি(এম) এর শক্ত ঘাঁটি ছিল। সিপি(এম)-এর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার, এখানকার বাসিন্দাদের জমি (পাট্টা) দিয়েছিল। এই বাসিন্দাদের অনেকেই দেশভাগের পর পূর্ব বাংলা থেকে উৎখাত হয়ে এসে উঠেছিলেন এই সন্দেশখালিতে। বামফ্রন্ট তাঁদের পাট্টা দেওয়ার বিনিময়ে অটল সমর্থন আদায় করেছিল। ২০১১ সালে বামেদের পরাজয়ের পরে পরিস্থিতিটা বদলে যায়। ২০১৬ থেকে টিএমসি হয়ে ওঠে এলাকায় সবচেয়ে প্রভাবশালী। সন্দেশখালির উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা টিএমসির প্রধান ভোটব্যাংক। শেখ শাহজাহান ২০১৩ সালে টিএমসিতে যোগ দেন। জেলার মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ (মৎস্য উন্নয়নের দায়িত্বে) ছিলেন শাহজাহান। অভিযোগ ওঠে, রাজ্যের শাসক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় শাহজাহানের লোকজন, কৃষকদের জমি দখল করতে শুরু করে। সেই সব জমি মৎস্য উন্নয়নের কাজে লাগানো হয়। লাভজনক হয়ে ওঠে শাহজাহানের মাছের খামার। যাঁরা জমি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিলেন, তাঁদের নিশানা করেছে শাহজাহানের বাহিনী। আর যাঁরা শাহজাহানের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন, তাঁরা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাননি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/02/vandalize.jpg)
বিষয়গুলো ক্রমশ বাড়তে থাক, তাতে ঢুকে পড়েন রাজনীতিবিদরাও
স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, পুলিশ সব অভিযোগ পেলেও শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে হাত গুটিয়ে ছিল। শাহজাহানকে গ্রেফতার করেনি। শুধু তাই নয়, ক্ষিপ্ত জনগণ শিবু হাজরার খামারে আগুন লাগানোর পর, পুলিশ সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি করে। পাশাপাশি, আন্দোলনকারী মহিলারাও টিএমসির গুন্ডাদের থেকে হুমকি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। প্রবল চাপের মুখে পুলিশ উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরাকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু, শাহজাহানকে গ্রেফতার করেনি। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা প্রথমে মহিলাদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগও গ্রহণ করতে চায়নি। কিন্তু পরে স্থানীয় টিএমসি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। বিরোধী বিজেপি, নির্বাচনের আগে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সুযোগের গন্ধ পেয়ে, আক্রমণাত্মক মেজাজে এগিয়ে গেছে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/02/fire.jpg)
রাজ্যপালের পরিদর্শন
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ১২ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালি পরিদর্শন করেন। তিনি সন্দেশখালির পরিস্থিতি 'ভয়াবহ, মর্মান্তিক' বলে বর্ণনা করেছেন। রাজ্যপাল ঘোষণা করেছেন, 'রাজভবনের দরজা নির্যাতিত মহিলাদের জন্য খোলা আছে। তাঁরা চাইলে রাজভবনে আসতে পারেন। সেখানে থাকতে পারেন।' শুধু তাই নয়, রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে একটি রিপোর্টও জমা দেন। সন্দেশখালির ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান জানান। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার সন্দেশখালি পরিদর্শন করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, সন্দেশখালিতে 'কোনও গণতন্ত্র' নেই। সিপি(এম) নেত্রী বৃন্দা কারাতও পরিদর্শন করেন সন্দেশখালি। বৃন্দা অভিযোগ করেন যে, স্থানীয় টিএমসি নেতারা সন্দেশখালিতে 'সন্ত্রাসের রাজত্ব' চালাচ্ছেন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/02/sandeshkhali-pic.jpg)
মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ১৫ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় বলেছিলেন, বিজেপি সন্দেশখালিতে হিংসায় উৎসাহ দিচ্ছে। বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে আসছে। আর, 'আদিবাসী (এসটি) বনাম সংখ্যালঘু (মুসলিম) লড়াই তৈরি করছে। এটা নতুন নয়। এখানে আরএসএসের ঘাঁটি আছে। সাত-আট বছর আগে এখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল। আমরা সরস্বতী পুজোর সময় দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি। কারণ, ওদের অন্যরকম পরিকল্পনা ছিল। একটি অশুভ ছক এখানে কাজ করছে।' এদিকে, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছে, 'যে ব্যক্তি (শাহজাহান) মূল অভিযুক্ত, তাকে আজ পর্যন্ত গ্রেফতার করা যায়নি!'
আরও পড়ুন- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস! বাংলার জীবনে যার মূল্য অপরিসীম, ইতিহাসে জড়িয়ে বাঙালির গর্ব, অহংকার
খালিস্তানি বিতর্ক
এসবের মধ্যেই সন্দেশখালিতে ‘খালিস্তানি’ বিতর্ক নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। সোমবার বিজেপি কর্মী ও নেতারা প্রতিবাদ জানানোর সময়, একজন শিখ আইপিএস অফিসারকে 'খালিস্তানি' বলে চিহ্নিত করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, এমনটাই অভিযোগ। অফিসার, এসএসপি (আইবি) জসপ্রিত সিং সেই পুলিশ দলের অংশ ছিলেন, যে দল বিজেপি কর্মী ও নেতাদের সন্দেশখালিতে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল। এক পুলিশ অফিসারকে বিজেপি নেতারা খালিস্তানি বলায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির 'বিভেদমূলক রাজনীতি'র তীব্র সমালোচনা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি, 'আমাদের শিখ ভাই ও বোনেদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার প্রচেষ্টার' তীব্র সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি, 'বাংলার সামাজিক সম্প্রীতি' রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ, তাদের অধিকারিকের বিরুদ্ধে 'খালিস্তানি' শব্দের ব্যবহারের অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আর, একটি বিবৃতি জারি করেছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বলেছে, 'সিং শিখ হিসেবে গর্বিত। তিনি একজন দক্ষ পুলিশ অফিসার। আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন।' শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য ওই শিখ অফিসারকে ‘খালিস্তানি’ অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।