তিনি ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের খোলনলচে বদলে দিয়েছিলেন। তিনি অর্থাৎ টিএন শেষন, ভারতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে ফের অতি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন।
কে ছিলেন শেষন?
পুরো নাম তিরুনেল্লাই নারায়ণা আইয়ার শেষন। সংক্ষেপে, টিএন শেষন নামেই তিনি বেশি পরিচিত। জন্মেছিলেন কেরলের পালাক্কাদ জেলায়। নির্বাচনী ক্ষেত্রে সংস্কার ঘটিয়ে তিনি বাহবা কুড়িয়েছিলেন। ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে টিএন শেষন নামটা আজও যেন প্রথম এবং শেষ কথা। ১৯৯০ সালের ১২ ডিসেম্বর শেষন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিযুক্ত হন। ১৯৯৬ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের সচিব এবং মহাকাশ দফতরের যুগ্মসচিব পদে ছিলেন।
কী করেছিলেন শেষন?
ভারতীয় নির্বাচন কমিশন তৈরি হয়েছিল ১৯৫০ সালে। দেশে মুক্ত এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন স্রেফ সাক্ষীগোপাল ছাড়া যেন আর কিছুই ছিল না। সেই সময়ে ঘুষের লেনদেন ছিল একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে শেষন। তিনি নির্বাচনের ধারায় বদল আনেন। নির্বাচনে ১৫০টি অসাধু কাজের তালিকা তৈরি করেন। যার মধ্যে রয়েছে মদ বিতরণ, ভোটারদের ঘুষ দেওয়া, বিনা অনুমতিতে কারও বাড়ির দেওয়ালে লিখন, নির্বাচনী বক্তৃতায় ধর্মের সাহায্য নেওয়া। তিনি নির্বাচনে ভোটার কার্ড, আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি এবং নির্বাচনী খরচের ঊর্ধ্বসীমা স্থির করে দেন।
কেন তিনি বর্তমানে প্রাসঙ্গিক
বর্তমান সময়ে তাঁর কার্যকলাপ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ, 'নিরপেক্ষতা' নিশ্চিত করতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বাছাই করার জন্য নিয়োগ কমিটিতে ভারতের প্রধান বিচারপতিকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি তুলে ধরেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই ব্যাপারে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে তারা প্রয়াত টিএন শেষনের মত শক্তিশালী চরিত্রের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার চায়।
আরও পড়ুন- অনলাইন গেম, রেসিং, ক্যাসিনোয় জিএসটি বাড়ছে? কী বলছে সরকার ও জিএসটি কাউন্সিল?
কী বলেছে সুপ্রিম কোর্ট?
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে সংবিধান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য দুই নির্বাচন কমিশনারের 'কাঁধে' বিশাল দায়িত্ব অর্পণ করেছে। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট মনে করে যে এমন কারও প্রধান বিচারপতি হওয়া উচিত, 'যিনি নিজেকে প্রভাবিত হতে দেবেন না।' বিচারপতি কেএম জোসেফের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছে যে সুপ্রিম কোর্ট এমন একটা ব্যবস্থা স্থাপন করতে চায়, যাতে 'সেরা ব্যক্তি' মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হতে পারেন।
বেঞ্চ কী জানিয়েছে?
বিচারপতি অজয় রাস্তোগি, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস, বিচারপতি হৃষীকেশ রায় ও বিচারপতি সিটি রবিকুমারকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানিয়েছে, 'এরপর অনেকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন। কিন্তু, টিএন শেষনের মত কেউ হতে পারেননি। আমরা চাই না, কেউ মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে প্রভাবিত করুক। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং দুই নির্বাচন কমিশনারের কাঁধে বিশাল দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য সেরা ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে। প্রশ্ন হল, আমরা কীভাবে সেই মানুষটিকে খুঁজে পাব? কীভাবে আমরা সেরা মানুষটিকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ করতে পারব?'
Read full story in English