বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন উপহার পেতে চলেছে কাশ্মীর! মাত্র কয়েক মাসের অপেক্ষা উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই চালু হবে স্বপ্নের বন্দে ভারত ট্রেন। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, ভারতীয় রেলের গর্ব। প্রতিটি রাজ্যই স্বপ্নের বন্দে ভারত ট্রেনের বিষয়ে আশাবাদী। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাজ্যে শুরু হয়েছে বন্দে-ভারত ট্রেন পরিষেবা। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এবার ছুটবে জম্মু ও কাশ্মীরেও। এই রাজ্যে আরেকটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালানোর প্রস্তুতি চলছে। এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি বলেছেন যে কাশ্মীর উপত্যকার তাপমাত্রা এবং সেখানে তুষারপাতের কথা মাথায় রেখে বিশেষ ভাবে বন্দে ভারত ট্রেনের ডিজাইন করা হচ্ছে।
বর্তমানে, কাশ্মীর উপত্যকায় রেলপথ চালু থাকলেও উপত্যকাটি এখনও দেশের প্রধান অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এটি এখনও রেললাইনের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। তবে এ জন্য দ্রুত কাজ চলছে। একেবারে স্পেশাল বন্দে ভারত ট্রেন চালানো হবে কাশ্মীরে। সেখানকার তাপমাত্রা দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে একেবারেই আলাদা। শীতে প্রবল তুষারপাতের কারণে সেজন্য ট্রেনে এমন কিছু রাখতে হবে করতে হবে যাতে তুষারপাতের মধ্যেও ট্রেনটি নির্বিঘ্নে চলতে পারে। এছাড়াও ট্রেনের ভিতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে।
এই লাইনটি উপত্যকার শ্রীনগর এবং বারামুল্লাকে রেলপথের মাধ্যমে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় মহাসড়কের বিকল্প হিসাবে গড়ে উঠবে এই রেল পথ। জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ে সরবরাহ প্রায়শ ভূমিধসের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে বলেই আশা। চেনাব রেল সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ, এখন চলছে রেললাইন বসানোর কাজ। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন যে রাজ্যের জন্য একটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা বন্দে ভারত ট্রেন তৈরি করা হচ্ছে। এই বিশেষ ট্রেন তৈরির সময় তাপমাত্রা, তুষারপাতের মত বিষয় মাথায় রাখা হচ্ছে। জম্মু থেকে শ্রীনগরের সঙ্গে সংযোগকারী উধমপুর বানিহাল লাইন এই বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের শুরুর দিকে শেষ হবে। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী বলেন, উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লাইনে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। চেনাব ও আঞ্জি সেতু এবং বড় টানেল নির্মাণের কাজও চলছে এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
এই ট্রেনটি জম্মু থেকে শ্রীনগর মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টায় পৌঁছে যাবে। এই যাত্রাপথে এই ট্রেনটি বিশ্বের সর্বোচ্চ আর্চ ব্রিজ চেনাব রেল ব্রিজ অতিক্রম করবে। এই সেতুর উচ্চতা এক হাজার ফুটের বেশি এবং এটি ১৩৫১ মিটার দীর্ঘ। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, জানান, উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্কের (USBRL) কাজ পুরোদমে চলছে। এই প্রকল্পের কাজ ২০২৩-এর ডিসেম্বর অথবা ২০২৪-এর জানুয়ারির মধ্যে শেষ হবে।
বর্তমানে জম্মুর কাটরা থেকে নয়াদিল্লির মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন চালানো হচ্ছে। মাতা বৈষ্ণো দেবীর দর্শন করতে সারা দেশ থেকে কাটরায় আসা ভক্তদের মধ্যে এই ট্রেনটি খুবই জনপ্রিয়। উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল সংযোগ প্রকল্পের সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীর দেশের অন্যান্য অংশের সাথে রেলের মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত হবে। এই রেললাইন চালু হলে কাশ্মীরের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। আপেল এবং কাশ্মীরের অন্যান্য কৃষি পণ্য সহজেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছে যাবে। পর্যটকরাও কাশ্মীরে পৌঁছে যাবেন সহজেই এবং প্রচুর সংখ্যায়।
বন্দে ভারত তার বিলাসবহুল সুবিধা এবং দ্রুত গতির কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ট্রেনটি স্বয়ংক্রিয় গেট, এসি কোচ, অনবোর্ড ওয়াই-ফাই এর মতো অনেক সুবিধা দিয়ে সজ্জিত। এই উচ্চ গতির ট্রেনটির সর্বোচ্চ গতি ১৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। যদিও বর্তমানে ট্রেনটি ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার বেশি দ্রুত ছোটে না।
ট্রেনটি শ্রীনগর এবং জম্মুর মধ্যে যাতায়াতের সময়কে বর্তমান সময়ের থেকে আরও দুই থেকে আড়াই ঘন্টা কম করবে। রেলমন্ত্রী বৈষ্ণবের মতে, বন্দে ভারত ট্রেনে যাত্রীরা জম্মু থেকে শ্রীনগরে যেতে এবং একই দিনে সন্ধ্যায় জম্মুতে ফিরে আসতে পারবেন। ট্রেনটি দেশের অন্যান্য অংশে আপেল, শুকনো ফল, কাশ্মীরি শাল, হস্তশিল্প ইত্যাদির মতো পণ্যের পরিবহন আরও সহজতর করে কাশ্মীরের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। দেশের অন্য কোথাও থেকে উপত্যকায় দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র পরিবহনের খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বানিহাল এবং বারামুল্লার মধ্যে চারটি কার্গো টার্মিনাল তৈরি করা হবে; এর মধ্যে তিনটি টার্মিনালের জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।