ট্রাফিক আইন ভাঙলে মোটর ভেহিকেল আইনেই শুধু নয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতাতেও তা অপরাধযোগ্য। সুপ্রিম কোর্ট এ কথা জানিয়েছে। সোমবার শীর্ষ আদালত বলেছে, ভারতীয় দণ্ডবিধি ও মোটর ভেহিকেলসা আইনের মধ্যে কোনও সংঘাত নেই এবং দুটি সংস্থানই সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে প্রযোজ্য। শীর্ষ আদালত এদিন গৌহাটি হাইকোর্টের একটি রায় নাকচ করে একথা জানিয়েছে। গৌহাটি হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়েছিল, পথে ট্রাফিক আইন ভাঙার অপরাধ কেবলমাত্র ১৯৮৮ সালের মোটর ভেহিকেল আইনের আওতাতেই বিচার্য এবং ট্রাফিত বা মোটর ভেহিকেল আইন ভঙ্গ করা হলে ১৮৬০ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে তার বিচার আইনের স্বীকৃতি পেতে পারে না।
কী বলেছিল গৌহাটি হাইকোর্ট
২০০৮ সালের ২২ ডিসেম্বর গৌহাটি হাইকোর্টের আগরতলা বেঞ্চ বলেছিল, মোটর ভেহিকেল আইন ভারতীয় দণ্ডবিধি বা ফৌজদারি কার্যবিধির তুলনায় নিম্নতর কোনও আইন নয়।
গৌহাটি হাইকোর্ট একই সঙ্গে বলেছিল, "যদি কোনও ব্যক্তি বেপরোয়া ও বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করা সত্ত্বেও মোটর ভেহিকেল আইন অনুযায়ী অপরাধী সাব্যস্ত না হন, তাহলে তাঁকে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারেও অপরাধী সাব্যস্ত করা যায় না, কারণ রাস্তায় ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করা আইপিসির সরাসরি আওতায় আসে না।"
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: তফশিলি জাতি উপজাতি আইন, সুপ্রিম কোর্টের পর্যালোচনা
হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছিল, "মোটর ভেহিকেল সংক্রান্ত অপরাধে মোটর ভেহিকেল আইন ছাড়া অন্য কোনও আইনে অপরাধী সাব্যস্ত করার অর্থ মোটর ভেহিকেল আইনকে ছাপিয়ে যাওয়া, যে মোটর ভেহিকেল আইন সংসদে বিশেষ আইন হিসেবে পাশ করানো হয়েছে।"
আদালত বলেছিল, "সাধারণ নিয়ম হল, মোটর ভেহিকেল আইনের আওতাতেই সড়ক দুর্ঘটনার অপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারার আওতায় অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড ছাড়া) এবং এ ব্যাপারে ভারতীয় দণ্ডবিধি লাগু করা আইনের নীতিবিরোধী এবং মোটর ভেহিকেল আইন প্রণয়ণের উদ্দেশ্যবিরোধী।"
হাইকোর্ট আসাম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মণিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম, এবং অরুণাচল প্রদেশকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা ব্যাতিরেকে অন্য সব ধরনের ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের মামলাকে মোটর ভেহিকেল আইনের আওতায় নথিবদ্ধ করার নির্দেশ দিতে বলেছিল।
সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছে
বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা এবং সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ বলেছে মোটর ভেহিকেল আইন (বিশেষ করে তার ১৩ নং পরিচ্ছেদ, ১৭৭-২১০ নং ধারা) মোটর গাড়ি দুর্ঘটনায় অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করার ব্যাপারে ভারতীয় দণ্ডবিধিকে ছাপিয়ে যায় না। ১৩ নং পরিচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধ ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৭, ৩০৪, ৩০৪ এ, ৩৩৭ এবং ৩৩৮ ধারার সংস্থানকে রগ করে না বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের মতে, এ ভাবে যদি ব্যাখ্যা করা হতে থাকে তাহলে কোনও অপরাধী কেবল জরিমানা দিয়েই ছাড়া পেয়ে যেতে পারে। তা অনুমোদনযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে আদালত। মোটর গাড়ি দুর্ঘটনায় যুক্তদের শাস্তি দিতেই হবে বলে জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেছে, "ট্রাফিক সংক্রান্ত মৃত্যু ও জখম ভারতে ক্রমবর্ধমান। পরিবারের উপার্জনকারীকে হারিয়ে যে আর্থিক ক্ষতি ও ট্রমার মধ্যেদিয়ে যেতে হয় তা পরিমাপযোগ্য নয়।"
অপরাধ ও শাস্তির মধ্যে অনুপাতের নীতি অবলম্বনের কথাও বলেছে শীর্ষ আদালত। মোটর ভেহিকেল আইনে প্রথমবার অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ৬ মাস এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় প্রথমবার অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর- এই ফারাকের দিক উল্লেখ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতিরা বলেছেন, "মোটর ভেহিকেল আইন একটি পূর্ণাঙ্গ বিধি। তবে এর সঙ্গে ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতায় গাড়ি দুর্ঘটনার বিচারের কোনও বিরোধ নেই।"