Advertisment

কেন তৃণমূলের পিছু ছাড়বে না সারদা

সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি এবং সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার সন্দেহে তদন্তকারীরা যতজন তৃণমূল নেতাকে তালিকায় রেখেছেন, ডেরেক ও'ব্রায়েন সেই তালিকায় নবতম সংযোজন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Derek O’Brien, ডেরেক ও’ব্রায়েন

ডেরেক ও’ব্রায়েন। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

সম্প্রতি সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই-এর সমন পেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন। অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে গোয়েন্দা সংস্থার দফতরে হাজিরা দেবেন ডেরেক, যেখানে তৃণমূলের মুখপত্র 'জাগো বাংলা'র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হবেন তিনি। উল্লেখ্য, 'জাগো বাংলা'র প্রকাশক ডেরেক সমন পেয়েই শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে টুইট করেন, যেখানে তিনি মনে করিয়ে দেন যে কিছুদিন আগে পত্রিকার সম্পাদক সুব্রত বক্সীর নামেও সমন জারি করে সিবিআই।

Advertisment

সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ বারবার এনেছে বিজেপি। অন্যদিকে, দলীয় নেতাদের হেনস্থা করতে সিবিআই-এর অপব্যবহার করা হচ্ছে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ জানিয়ে এসেছে তৃণমূল।

ফিরে দেখা: সারদা কেলেঙ্কারি এবং তৃণমূল

সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি এবং সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার সন্দেহে তদন্তকারীরা যতজন তৃণমূল নেতাকে তালিকায় রেখেছেন, ডেরেক ও'ব্রায়েন সেই তালিকায় নবতম সংযোজন। সারদা সাম্রাজ্য তৈরি করার সময় স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে তৎপর ছিলেন সুদীপ্ত, পাশাপাশি তিনি অধিগ্রহণ করেন একাধিক সংবাদমাধ্যম।

অভিনেত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় এবং বাঙালি বাবু মিঠুন চক্রবর্তী বেশ কিছুদিন ধরে সারদার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হিসেবে নানা ধরনের প্রচারে অংশগ্রহণ করেন।

সারদার মালিকানাধীন মিডিয়া গ্রুপের সিইও নিযুক্ত হন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হয় এই মিডিয়া গ্রুপে, নিযুক্ত হন প্রায় ১,৫০০ সাংবাদিক। ২০১৩ সালে দেখা যায়, পাঁচটি ভাষায় আটটি সংবাদপত্র চালাচ্ছে সারদা, এবং সিইও হিসেবে মাসের শেষে ১৬ লক্ষ টাকা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কুণাল ঘোষ।

তখনকার আরেক তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসুও সারদা গ্রুপের মিডিয়া কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এবং গ্রুপের কর্মচারী ইউনিয়নের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন রাজ্য পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। এক ডজনেরও বেশি তৃণমূল বিধায়ক এবং সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শেষমেশ সৃঞ্জয় বসু, মদন মিত্র এবং কুণাল ঘোষকে গ্রেফতার করে সিবিআই।

জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় ছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন সহ-সভাপতি তথা বাংলার প্রাক্তন ডিজিপি রজত মজুমদার, তৎকালীন তৃণমূল যুব কংগ্রেস প্রধান শঙ্কুদেব পণ্ডা (যিনি এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যোগ দেন বিজেপিতে), শতাব্দী রায় এবং অভিনেতা তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। অন্যদিকে, প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

একনজরে সারদা কেলেঙ্কারি

২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে 'সমষ্টিগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা' হিসেবে সারদা গ্রুপের পত্তন করেন সুদীপ্ত সেন। ছোট বিনিয়োগকারীদের কার্যত অবাস্তব রকমের চড়া আয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। টাকা তোলা হয় বিস্তৃত এজেন্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, যাঁদের ভাগ্যে জুটত বড়সড় রকমের কমিশন।

কয়েক বছরের মধ্যেই ২,৫০০ কোটি টাকা তুলে ফেলে সারদা। সেই টাকায় আসে চিত্রতারকাদের অংশগ্রহণ, একাধিক ফুটবল ক্লাবে বিনিয়োগ, নানা ধরনের সংবাদমাধ্যম, এবং স্পন্সরড দুর্গাপুজো। সংস্থার কাজ বিস্তার লাভ করে বাংলার বাইরে, ওড়িশা, আসাম, ত্রিপুরায়। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৭ লক্ষে।

২০১২ সালে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জেস বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) সারদাকে নির্দেশ দেয় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করতে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেখা যায়, 'ক্যাশ ইন-ফ্লো'র চেয়ে বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে 'ক্যাশ আউট-ফ্লো', যে কোনও 'পনজি স্কিমের' (এমন স্কিম যার মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ পুরনো বিনিয়োগকারীদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়) যা অবশ্যম্ভাবী পরিণতি।

এপ্রিল ২০১৩-র মধ্যেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে তাসের ঘর, এবং পুলিশের কাছে বিনিয়োগকারী এবং এজেন্টদের তরফে জমা পড়ে অসংখ্য অভিযোগ। বাংলা ছেড়ে পালান সুদীপ্ত সেন, কিন্তু ২০ এপ্রিল, ২০১৩ সালে তাঁর সহযোগী দেবযানী মুখোপাধ্যায় সমেত ধরা পড়েন কাশ্মীরে।

tmc trinamul Saradha Scam All India Trinamool Congress
Advertisment