জাতীয় সাক্ষরতায় শীর্ষস্থানে থাকা ত্রিপুরায় এখন স্কুলে ভর্তি নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারের সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ৪৩৯৮টি সরকারি স্কুলের মধ্য়ে ১৪৭টি স্কুলে ছাত্রসংখ্য়া ১০জনেরও কম, এবং ১৩টি স্কুলে কোনও ছাত্রছাত্রীই নেই। সংকট মেটাকে বিজেপি আইপিএফটি সরকার ১৩টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০টি স্কুল বেসরকারি ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
স্কুল শিক্ষা দফতরের দেওয়া তথ্য়ানুসারে ২০টি স্কুলের মধ্য়ে ৭টি স্কুল তুলে দেওয়া হয়েছে ইসকনের হাতে। এ স্কুলগুলি পশ্চিম ও দক্ষিণ ত্রিপুরায় অবস্থিত। এ ছাড়া খোয়াইয়ের দুটি পাবলিক স্কুল, গোমতী জেলার একটি এবং সিপাহীজলা জেলার তিনটি স্কুলকে ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ভর্তি সংকট কেন?
পূর্বতন সিপিএম সরকার প্রচুর স্কুল তৈরি করেছিল রাজ্য়ে, যার মধ্য়ে বহু স্কুল ছিল প্রত্য়ন্ত আদিবাসী গ্রামে। এর শুরু হয়েছিল আদিবাসী নেতা দশরথ দেববর্মা, সুধন্য় দেববর্মা, অঘোর দেববর্মার মত ত্রিপুরা জনশিক্ষা আন্দোলনের মাধ্য়মে। এর মধ্য়ে দূরবর্তী গ্রামগুলির বেশ কিছু স্কুলে পড়ানোর মত কোনও ছাত্রই ছিল না। সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে সরকার প্রতি বছর প্রাথমিক স্তরে ছাত্র পিছু ২১,১৩৮ টাকা ব্য়য় করে এবং অন্য় দিকে বুনিয়াদি স্তরে ছাত্র পিছু ব্য়য় করে ৭৬ হাজার টাকা। কিন্তু যেখানে স্কুলে পড়ার মত কোনও ছাত্রই নেই, সেসব ক্ষেত্রে পুরো টাকাটাই জলে যাচ্ছে। দু বছর আগে বাম সরকারের সময়েই ৩৫টি স্কুল বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।
শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ, যিনি মন্ত্রিসভার মুখপাত্রও বটে, তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৩টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার।
কোন লক্ষ্য়ে সরকারের এই পদক্ষেপ?
রতন লাল নাথ বলেছেন, তিনি চান সমস্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন সরকারি ক্ষেত্রে সঙ্গে ব্য়াপক কিন্তু স্বাস্থ্য়কর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। তাঁর দাবি তাঁদের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে ছাত্র ও অভিভাবক উভয়েই।
এ ছাড়া রাজ্য় সরকার পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর ৩০০০ ছাত্রছাত্রীকে আগামী শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি স্কুলে নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার ব্য়াপারে সাহায্য় করবে। তিনি আরও বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রতি বছর দরিদ্র পরিবারের ২৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করবে।
ম্য়ানেজমেন্ট বদলির শর্তগুলি কী কী?
বেসরকারি ট্রাস্টগুলিকে সরকার যে শর্ত দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে সিবিএসই এবং আইসি এসইতে অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন করার সময়ে অন্তত ৩০ জন ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করতে হবে।
তবে সরকার একই সঙ্গে এ কথাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে স্কুলের মালিকানা ইসকনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পাঁচবছরের জন্য় ম্য়ানেজমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হবে ইসকনকে। পার্ফরম্য়ান্স ইতিবাচক হলে চুক্তির সময়সীমা বাড়বে।
এ ব্য়াপারে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজ্য় সরকারের মৌ শীঘ্রই স্বাক্ষরিত হবে। অন্তর্বতীকালীন সময়ে সরকার বিনামূল্য়ে পাঠ্য়বই, মিড ডে মিল ও ইউনিফর্মের খরচ জোগাবে।
Read the Full Story in English