মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে আমেরিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অর্থ জোগানো বন্ধ করবে। তাঁর অভিযোগ এই সংস্থা করোনাভাইরাস অতিমারী আসবে বলে বুঝতে পারেনি।
ট্রাম্পের অভিযোগ, হু এ ব্যাপারে ভুল করেছিল এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল চিনকেন্দ্রিক। তিনি বলতে চেয়েছেন বেজিং যখন এই রোগের প্রাদুর্ভাবের বিপদ কম করে দেখাতে চেয়েছিল, তখন তাদের সঙ্গ দিয়েছিল হু।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন- যে ওষুধে এখন সবার নজর
ট্রাম্প শুরুতে ঘোষণা করেছিলেন হু-এর ফান্ডিং বন্ধ করা হবে, তবে পরে তিনি নিজের বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে বলেন, তিনি এব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করবেন।
হু-কে অর্থ জোগায় কে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় চার ধরনের আর্থিক অবদান আসে।
সেগুলি হল নির্ধারিত অবদান (assessed contributions), নির্দিষ্ট স্বেচ্ছামূলক অনুদান (specified voluntary contributions), মূল স্বেচ্ছানুদান (core voluntary contributions) এবং পিআইপি অনুদান।
হুয়ের ওয়েবসাইট অনুসারে প্রথমোক্ত অর্থ সংস্থান হল এই সংগঠনের সদস্য হিসেবে দেয় অর্থ। কোনও সদস্য দেশের সম্পদ ও জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে এই পরিমাণ নির্ধারিত হয়।
দ্বিতীয় ধরনের অনুদান হল সদস্য রাষ্ট্রগুলির থেকে তাদের নির্দিষ্ট দেয় অর্থের সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ, য়া অন্য সহযোগীদের কাছ থেকেও আসতে পারে। এই অর্থের পরিমাণ নমনীয়ও হতে পারে বা অতি সুনির্দিষ্টও হতে পারে।
এই অতিমারীর সময়ে কিউবা কী করে অন্য দেশে ডাক্তার পাঠাচ্ছে?
মূল বা কোর স্বেচ্ছামূলক অনুদান যেসব কর্মসূচি পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সাহায্য পায় না, সেগুলিতে কাজে লাগানো হয়, বিশেষ করে যখন অর্থের অভাবে কাজ আটকে যাবার উপক্রম হয়।
পিআইপি অনুদান বা প্যানডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রিপেয়ার্ডনেস অনুদান শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মধ্যে অতিমারী ঘটাতে সক্ষম ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের তথ্য আদানপ্রদান বৃদ্ধি এবং উন্নয়নশীল দেশে প্রতিষেধক ও মহামারী মোকাবিলার অন্যান্য উপাদান সহজলভ্য করা।
সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নির্দারিত অনুদান বন্ধ হয়ে গিয়েছে, ফলে হুয়ের এক চতুর্থাংশ আয়ের রাস্তা বন্ধ। এই অর্থ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষে অতি প্রয়োজনীয়, কারণ এর মাধ্যমে একটা পর্যায় অবধি পূর্বানুমান করা সম্ভব এবং ছোট অনুদানকারীদের উপর নির্ভরতা কমে।
সংস্থার বাকি অর্থ আসে স্বেচ্ছানুদান থেকে।
বর্তমানের অর্থসংস্থান
২০০৯ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে মোট অনুদানের পরিমাণ ছিল ৫.৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে নির্ধারিত অনুদান ছিল ৯৫৬ মার্কিন ডলার, নির্দিষ্ট স্বেচ্ছানুদান ছিল ৪.৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, মূল স্বেচ্ছানুদান ছিল ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পিআইপি অনুদান ছিল ১৭৮ মিলিনয় মার্কিন ডলার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল আর্থিক জোগানদাতা এখন আমেরিকা, মোট আয়ের ১৪.৬৭ শতাংশ অর্থাৎ ৫৫৩.১ মিলিয়ন ডলার দিয়ে থাকে তারা।
এর পরেই রয়েছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন- যারা ৯.৭৬ শতাংশ অথবা ৩৬৭.৭ মিলিয়ন ডলার দিয়ে থাকে।
তৃতীয় বৃহত্তম অনুদানকারী সংস্থা হল গাবি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, তারা দিয়ে তাকে ৮.৩৯ শতাংশ। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান রয়েছে যথাক্রমে ব্রিটেন ৭.৭৯ শতাংশ, এবং জার্মানি ৫.৬৮ শতাংশ।
পরবর্তী চার বৃহত্তম অনুদানকারী হল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (৫.০৯ শতাংশ), বিশ্ব ব্যাঙ্ক (৩.৪২ শতাংশ), রোটারি ইন্টারন্যাশনাল (৩.৩ শতাংশ), এবং ইউরোপিয়ান কমিশন (৩.৩ শতাংশ)। ভারত মোট অনুদানের ০.৪৮ শতাংশ দিয়ে থাকে, চিন দেয় ০.২১ শতাংশ।
এই অর্থের মধ্যে আফ্রিকিয় এলাকার জন্য বরাদ্দ ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ ১.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, হুয়ের সদর দফতরের জন্য বরাদ্দ ৯৬৩.৯ মিলিয়ন। এর পরেই রয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া (১৯৮.৭ মিলিয়ন ডলার), ইউরোপ (২০০.৪ বিলিয়ন ডলার), পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (১৫২.১ মিলিয়ন ডলার) এবং আমেরিকা (৩৯.২ মিলিয়ন ডলার)। ভারত দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। এখানে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পোলিও দূরীকরণে (২৬.৫১ শতাংশ)। এর পর রয়েছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিষেবা পৌঁছন (১২.০৪ শতাংশ) এবং প্রতিরোধযোগ্য রোগের প্রতিষেধক (৮.৮৯ শতাংশ)।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন