NCP of Sharad Pawar and Turha: অবিভক্ত দলের সুপরিচিত 'ঘড়ি' প্রতীক ভাইপো অজিত পাওয়ারকে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর তাঁর নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) দলকে কমিশন, নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে 'তুরহা' বা শিঙা বরাদ্দ করেছে। অজিত পাওয়ারের দলকেই আসল এনসিপি দলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আর, তিনি অর্থাৎ শরদ পাওয়ার গোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন এনসিপিকে, 'জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি- শরদচন্দ্র পাওয়ার' নাম দেওয়া হয়েছে। যার ফলে, ঘড়ি নয়। 'তুরহা'ই এখন শরদ পাওয়ার গোষ্ঠীর নতুন নির্বাচনী প্রতীক।
- শিবপুজোয় 'তুরহা' বাজানোর রীতি আছে।
- প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ছত্তিশগড়ের ট্যাবলোয় প্রদর্শিত হয়েছে 'তুরহা'।
- ভারত ছাড়াও নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাতেও ধর্মীয় বাদ্যযন্ত্র হিসেবে 'তুরহা' ব্যবহৃত হয়।
কী এই 'তুরহা'?
এটি দেখতে অনেকটা ভেরীর মত। লম্বা, বাঁকা অনেকটা শিঙার মত। আকারটা যেন অনেকটা বিপরীত 'C'। যা একটি সুতো বা স্ট্রিং দিয়ে সজ্জিত থাকে। তুরহাকে 'তুরহি', 'তুরাহি' বা 'তুর্তুরি'ও বলা হয়। মহারাষ্ট্রের অঞ্চলভেদে 'তুরহা'কে এইসব উচ্চারণ এবং নামে লেখা হয়। বর্তমানে ধাতুর তৈরি 'তুরহা' কিনতে পাওয়া যায়। তার আগে এই বাদ্যযন্ত্র গোরুর শিং দিয়ে তৈরি হত। সাধারণত পুরুষরাই একচেটিয়াভাবে এই ভেরী বাজিয়ে থাকেন। যাঁদের অধিকাংশই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই ভেরী বাজানোর শিল্পে পারদর্শিতা অর্জন করেছেন।
'তুরহা' বাজানোর ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং অর্থ
আগের যুগে, তুরহায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফুঁ দেওয়া হত। যা রাজা, অভিজাত এবং অন্যান্য উচ্চমর্যাদার ব্যক্তিদের আগমনের সূচনা বোঝাত। মহারাষ্ট্রে, ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের দরবারে তুরহা একটি জনপ্রিয় যন্ত্র ছিল। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের সফটওয়্যার তৈরিকারী সংস্থা সোয়ার ক্লাসিক্যালের মতে, বিজাপুরের আদিলশাহি রাজাদের (১৪৯০-১৬৮৬) শাসনকালে তুরহা রাজা-বাদশাদের স্যালুট দিতে বাজানো হত। তুরহায় ফুঁ দেওয়া, একটি গুরুত্বপূর্ণ যাত্রার সূচনা বা কাজের প্রস্তুতির পাশাপাশি যুদ্ধেরও সূচনা করত। এটি যুদ্ধের শুরু এবং শেষের সংকেত দেওয়ার জন্যও বাজানো হত। সোয়ার ক্লাসিক্যাল তার ওয়েবসাইটে জানিয়েছে যে, ঔপনিবেশিক শাসনকালে তুরহা বাদ্যকাররা ব্রিটিশদের হাত থেকে বাঁচতে মন্দিরে লুকিয়ে থাকতেন। আর, এভাবেই তুরহার বাজনা ধর্মীয় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে ওঠে।
'তুরহা' বাজানোর প্রথা আজও অব্যাহত
তুরহা বাজানোর প্রথা আজও অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে এই যন্ত্রটি হামেশাই বিবাহ বা অন্যান্য আনন্দের অনুষ্ঠানে বাজানো হয়। মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমাবেশেও ব্যবহৃত হয় এই যন্ত্র। ২০২০-২১ সালে কৃষক বিক্ষোভের সময় সমাবেশের ডাক দিতে তুরহা বাজানোর চল বেড়েছিল। তুরহায় ফুঁ দেওয়ার পাশাপাশি, প্রায় ঢোলের মত তালবাদ্যও বাজানোই রীতি। পুনেতে বার্ষিক গণেশ উৎসবের সময়ও ঢোল-তাশার পাশাপাশি, তুরহা বাজানো হয়ে থাকে। তুরহা ছাড়া যেন এই উৎসব সম্পূর্ণরূপেই অসম্পূর্ণ।
'তুরহা' বাজানোর চল রয়েছে ভারতের অন্যত্রও
ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও তুরহা বাজানোর চল রয়েছে। ব্যবহৃত হয়, সেইসাথে ভারতের বাইরে কিছু জায়গায়। মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশে, গোন্ড আদিবাসীদের তুতারি ফুঁকানোর রীতি আছে। এটি ছত্তিশগড় এবং উত্তরাখণ্ডের একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র, যেখানে এটি ভগবান শিব এবং কিছু অন্যান্য দেবতার পূজার সময় বাজানো হয়। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, শঙ্খের ধ্বনি (ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত অন্যান্য সাধারণ বায়ু যন্ত্র) শিবের চারপাশে ভূত, প্রেত এবং রাক্ষস আত্মাকে আন্দোলিত করে, তাই তুরহির শব্দটি আরও উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। যন্ত্রটি প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ছত্তিশগড়ের ফ্লোটে প্রদর্শিত হয়েছে এবং নেপাল ও শ্রীলঙ্কায়ও এটি একটি ধর্মীয় বাদ্যযন্ত্র হিসাবে বাজানো হয়।
আরও পড়ুন- বেসরকারি সংস্থার প্রথম সফল চন্দ্রাভিযান, কী ঘটতে চলেছে চাঁদমামার দেশে?
'তুরহা' ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও ব্যবহৃত হয়
মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশে, গোন্ড আদিবাসীদের মধ্যে 'তুরহা' বাজানোর রীতি আছে। এটি ছত্তিশগড় এবং উত্তরাখণ্ডের একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র। ভগবান শিবের আরাধনা এবং অন্যান্য কিছু দেবতার পূজার সময় এই বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, শঙ্খের ধ্বনি শিবের চারপাশ থেকে ভূত, প্রেত এবং রাক্ষস আত্মাকে সরিয়ে দেয়। তুরহার, শব্দ এই ব্যাপারে আরও কার্যকরী বলেই মনে করা হয়। তুরহা, প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ছত্তিশগড়ের ট্যাবলোয় প্রদর্শিত হয়েছে। ভারত ছাড়াও নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাতেও এই ধর্মীয় বাদ্যযন্ত্র বাজানোর রীতি প্রচলিত আছে।