Advertisment

Explained: টুইট-বিতর্কে জেরবার এলন মাস্কই টুইটার-মালিক, টুইটারের মঙ্গল হবে কি আগামী দিনে?

টুইটারে মাস্কের ফলোয়ার ৮০ মিলিয়নের বেশি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Elon Musk

বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি এলন মাস্ক

বড় হওয়ার রাস্তায় ঘাতপ্রতিঘাত ছিল। কিন্তু শূন্য থেকে মোটেই শুরু করেননি তিনি। পরিবার এতটাই ধনী ছিল যে, টাকা রাখার বিরাট সিন্দুকও বন্ধ করা যেত না। বানিয়ে বলছি না, নিজেই বলেছিলেন এলন মাস্ক। করোনাকালে পৃথিবীর মুখ যখন মাস্কে ঢাকা, যখন বাইরের দরজাটা টেকসই বিশাল তালা এঁটে বন্ধ করে দিয়েছে মহামারি, তখনই তিনি বিলিয়নিয়ারের তালিকায় হু-হু করে উপরের দিকে উঠতে শুরু করে দিলেন। ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটকে ২০২০-র জুলাইতে টপকে গেলেন। ২০-র শুরুতে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৭ বিলিয়ন ডলার, আর ওয়ারেন বাফেটকে যখন টপকালেন, তাঁর সম্পত্তি দাঁড়িয়ে, মাস সাতেকের মধ্যে, ৭০.৫ বিলিয়ন ডলারে। ওয়ারেন বাফেটের বয়স ৯০ পেরিয়েছে, আর এলন মাত্র ৫০। ফলে এই চড়চড়ানি দেখে ঈশ্বর উপর থেকে মুচকি একটু হেসে বললেন বোধ হয়, এটা তো সবে ট্রেলার… আগে আগে দেখিয়ে হোতা হ্যায় ক্যায়া। হ্যাঁ, দেখা গেল, কথা হাড়ে হাড়ে ফলল ঈশ্বরের। শ্রীমাস্ক এক এক জনকে ছাপিয়ে গেলেন ওই বিলিয়নিয়ারের তালিকায়। অ্যামাজনের সর্বেসর্বা জেফ বেজোসকে ছাড়ালেন। পৃথিবী এক দিকে কোভিডে কাঁপছে, আর এলন মাস্ক-কে টাকা রাখার জন্য জামাকাপড়ের নতুন নতুন পকেট বানাতে হচ্ছে যেন। তো, এখন তিনি এক নম্বর ধনকুবেরই শুধু নন, তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বেজোসের থেকে অ-নে-ক এগিয়ে। এলনের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২৬৮.২ বিলিয়ন ডলার। আর বেজোসের ১৭১.৯ বিলিয়ন! যেন মাস্কের মহাজাদু এক! তা ছাড়া বেজোস বয়সে এলনের চেয়ে আট বছরের বড়ও বটে।

Advertisment

ড্যাম স্মার্ট এলন মাস্ক নাচতে ভালবাসেন। কখনও চিনে গিয়ে নাচতে দেখা গিয়েছে তাঁকে, কখনও আবার নেচেছেন জার্মানিতে। তবে শুধু যে হাতেপায়ে নাচেন তা নয়, নৃত্যরত স্বপ্নও দেখে চলেন নিরবচ্ছিন্ন ভাবে। দেখেন বলেই এই আমেরিকান ধন-চুম্বক এবার টুইটারকে পকেটে পুরেছেন। এটি কিনেছেন তিনি ৪৪ বিনিয়ন ডলারে। ডিল ঘোষণায় কিছু বাণীও দিয়েছেন, মহাপুরুষের মতোই (দেবেনই বা না কেন!)। বলেছেন, 'স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশই গণতন্ত্রণের ভিত্তিভূমি। টুইটারের ডিজিটাল টাউন স্কোয়্যারে মানবতার আগামীর পক্ষে যা গুরুত্বপূর্ণ, সেই সব নিয়েই বিতর্ক চলে।'

টুইটারে মাস্কের ফলোয়ার ৮০ মিলিয়নের বেশি। কিন্তু বার বার তিনি এই প্ল্যাটফর্মে বিতর্কে জড়িয়েছেন। বিতর্কিত টুইটের জেরে তাঁকে তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে। মানহানির মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। টুইটে টেসলার (মাস্কের ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাণ সংস্থা) বিনিয়োগকারীদের ভুল পথে পরিচালনা করার জন্য তাঁকে এবং টেসলাকে মোট ৪০ মিলিয়ন ডলার অর্থদণ্ড দিতে হয়েছে বলেও জানা যায়, যদিও তা মোটেই স্বীকার করেন না এলন।

সোমবার তিনি অবশ্য বলেছেন, 'আমার চূড়ান্ত সমালোচকও টুইটারে রয়েছেন। এটাই মত প্রকাশের স্বাধীনতার মানে।'
অনেকে বলছেন, এই যে পৃথিবীর এক নম্বর ধনী টুইটার কিনে নিলেন, তাতে এই সংস্থাটির ভাল হবে। কারণ, বেশ কিছু দিন ধরেই গণমাধ্যমটি চাপে রয়েছে। নানা জনের নানা ভুলভাল টুইট, মানে মিথ্যা খবর রটানো-য় টুইটার তিতিবিরক্ত। চাপ বাড়ছিল ডান কি বাম-- দু' দিক থেকেই। এমনকি গত বছর তারা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পকেও ব্যান করে দিয়ে জানিয়েছিল, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হিংসায় উসকানি দিতে পারেন ট্রাম্প। অনেকে বলছেন, এবার যখন টুইটারকে নিজের বগলে পুরেছেন এলন, তখন গ্যালন গ্যালন ভুল-তথ্য গাঁধা টুইট করে তো ইনসভেস্টারদের ভুল পথে পরিচালিত করতেই পারেন। না, এলনের কেরিয়ার থেকে সেই আশঙ্কা পুরো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে, নানা রেগুলেটরি সংস্থা আছে, তাদের পাশ কাটিয়ে যাওয়াটা মোটেই সহজ কাজ না।
তা ছাড়া উল্টোও হতে পারে, তিনি নিজেই যখন টুইটারের মালিক, তখন আরও সতর্কতা দেখাতে পারেন সেখানে পোস্টানোয়। কারণ, তাতে তাঁর সমালোচনা হলে তো, সরাসরি টুইটারের গুড উইলে আঁচ পড়ে যাবে। শেয়ারে তার ছাপও পড়তে পারে, তাই না!

আমেরিকার সরকারপক্ষ অবশ্য মাস্কের এই টুইটার ক্রয় নিয়ে কিছু বলতে চায়নি। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি শুধু রিপোর্টারদের বলেছেন, 'কে টুইটার কিনলেন, সেটা বড় ব্যাপার নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার বিশালতা, ক্ষমতাটা প্রেসিডেন্ট বাইডেন বোঝেন।'

এবার একটু ভারতের কথায় আসা যাক। এ দেশে টুইটার কিন্তু তোপের মুখে পড়েছে বার বার। বিতর্কে জেরবার হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাত বেঁধেছে টুইটার কর্তৃপক্ষের। গত বছর ভিডিও ছড়িয়ে ভুল তথ্য প্রচারের অভিযোগ উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ডেকে পাঠায় টুইটারের ভারতের তখনকার প্রধান মণীশ মহেশ্বরীকে। গত বছরের জানুয়ারিতে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া সাইটকে কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগ করতে হবে। যাঁর দায়িত্ব হল, ভুল কিছু না ছড়িয়ে পড়ে ওই সাইটের মাধ্যমে, তা সুনিশ্চিত করা। টুইটারই এর মূল লক্ষ্য জলের মতো ছিল স্পষ্ট। এবং টুইটার সেই পথে চলতে বাধ্য হয়েছে, এ ছাড়া উপায়ই বা কি!

এলন মাস্কের হাতে টুইটারের নবজবন্ম হতে চলেছে সন্দেহ নেই। নানা চমক হয়তো অপেক্ষা করছে। কিন্তু যাঁরা এখন টুইটার চালাচ্ছেন, তাঁদের কী হবে, সেই প্রশ্ন ঘুরছে। টুইটারের বর্তমান সিইও পরাগ আগরওয়াল, বলা হচ্ছে, ১২ মাসের মধ্যে তাঁকে যদি বরখাস্ত করে দেওয়া হয় তা হলে আগরওয়ালকে দিতে হবে ৪২ মিলিয়ন ডলার। টুইটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডোরসি অবশ্য এলনের এই ক্রয়ে সুলক্ষণই দেখছেন। একের পর টুইট করেছেন হেভিওয়েট ডিল ঘোষণার পর। যা হোক, নতুন নায়ক প্রাপ্তিতে টুইটারের আগামী আদৌ কুসুমাস্তীর্ণ হয় কিনা, সে জন্য আমাদের বেশি অপেক্ষা বোধ হয় করতে হবে না।

Read story in English

twitter Elon Musk
Advertisment