Advertisment

কেন্দ্রীয় বাজেট কী ভাবে প্রস্তুত করা হয়?

বাজেটের বিভিন্ন সংখ্যার বিশ্বাসযোগ্যতাও ক্রমশ কমছে। অনেকেই বলছেন, বাজেটে যে সংখ্যা দেখানো হচ্ছে আর যা বাস্তবত ঘটছে, তার মধ্যেকার ফারাক প্রথমে ঘোচানো দরকার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Union Budget 2020

১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ

১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ লোকসভায় ২০২০-২১ সালের বাজেট পেশ করবেন। ভারতের অর্থনীতি যখন ক্রমশ গতি হারাচ্ছে, সে সময়ে দাঁড়িয়ে বাজেট পেশ করা খুব সহজ নয়।

Advertisment

সে কারণেই অর্থমন্ত্রী এখন তাঁর সামনে পরস্পরবিরোধী বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছেন।

অনেকেই মনে করেন, বাজেটে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাড়াতে সরকারি খরচ বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। অনেকে আবার ঠিক উল্টোটা মনে করেন। তাঁদের বিশ্বাস সরকার অতিরিক্ত খরচ করছে বলেই আর্থিক ঘাটতি বাড়ছে। আবার অনেকে সরকারের প্রকৃত রাজস্বে যে ফারাক সে দিকে নির্দেশ করছেন।

বাজেটের বিভিন্ন সংখ্যার বিশ্বাসযোগ্যতাও ক্রমশ কমছে। অনেকেই বলছেন, বাজেটে যে সংখ্যা দেখানো হচ্ছে আর যা বাস্তবত ঘটছে, তার মধ্যেকার ফারাক প্রথমে ঘোচানো দরকার।

এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরণ হলেও দিল্লি মুম্বইয়ের বাড়ি ছাড়ছে না সরকার

তাহলে একজন অর্থমন্ত্রী বাজেটের ব্যাপারে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন?

অর্থমন্ত্রী কী করতে পারেন, এবং কী করা উচিত সে কথা বোঝার আগে বাজেট কীভাবে তৈরি হয়, তা বোঝা প্রয়োজন। অন্যভাবে বলতে গেলে, অর্থমন্ত্রীর হাতে কী কী রয়েছে এবং বাজেট প্রস্তুত করার সময়ে তাঁকে কোন ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয়।

কেন্দ্রীয় বাজেট শুরু হয় কী ভাবে?

ন্যাশনাল ইনস্টিট্যুট অফ পাবলিক ফিনান্স অ্যানড পলিসি (NIPFP)-র অধ্যাপক এন আর ভানুমূর্তির ব্যাখ্যায় নমিনাল জিডিপি হল বাজেট তৈরির মৌলিক বিষয়। তাঁর কথায় নমিনাল জিডিপি হল বাজেটের গণেশ ঠাকুর। তার কারণ হল বর্তমান বছরের নমিনাল জিডিপির পূর্ণ সংখ্যা না পাওয়া গেলে কেউ পরের বছরের বাজেট তৈরি করতে পারে না।

ভানুমূর্তি বলেন, বাজেট হল কেন্দ্রীয় সরকারের পরবর্তী আর্থিক বর্ষের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। বাস্তবত বিষয়টি হল, সরকার রাজস্ব কীভাবে খরচ করবে তার একটা হিসেব। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় সরকারকে আর্থিক দায় ও বাজেট পরিচালনা আইন অনুসারে আর্থিক ঘাটতি মেটাতে হবে।

আর্থিক ঘাটতি হল সরকারকে এক বছরে কত ঋণ করতে হয়। আর্থিক ঘাটতির টার্গেট তৈরি নমিনাল জিডিপির শতকরা হিসেবের মাধ্যমে। অন্যভাবে বলতে গেলে যদি নমিনাল জিডিপি বেশি হয়, তাহলে সরকার তার খরচের জন্য বাজার থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে।

কিন্তু বর্তমান বছরের নমিনাল জিডিপি যদি না জানা যায়, তাহলে সরকার পরবর্তী আর্থিক বছরের নমিনাল জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে পারবে না। নমিনাল জিডিপি সম্পর্কে সম্পূর্ণ স্পষ্টতা না থাকলে, সরকার ঠিক কতটা আর্থিক ঘাটতির দায় নিতে পারবে সে সম্পর্কে অনুমান করতে পারবে না, আবার একই সঙ্গে পরবর্তী বছরে কত পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে তাও অনুমান করতে পারবে না। এবং যদি ঠিক কত রাজস্ব আদায় হবে, তার পরিমাণ সম্পর্কে না জানা থাকে, তাহলে সরকার এটাও ঠিক করতে পারবে না কোন খাতে কতটা খরচ করা হবে।

ফলে প্রথম যেটা বুঝতে হবে তা হল নমিনাল জিডিপির গুরুত্ব। অর্থমন্ত্রী নমিনাল জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেন, প্রকৃত জিডিপির নয়।

কিন্তু সর্বত্রই তো প্রকৃত জিডিপির হিসেবেই বৃদ্ধির মাপ করতে দেখা যায়!

এটা ঘটনা যে প্রকৃত জিডিপি দিয়েই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের আর্থিক বৃদ্ধি পরিমাপ করা হয়। প্রকৃত জিডিপির বৃদ্ধি নমিনাল জিডিপি বৃদ্ধির হার থেকে মুদ্রাস্ফীতির হার বাদ দিয়ে হিসেব করা হয়ে থাকে। প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির মাধ্যমে যদি বিষয়টি দেখা যায়, তাহলে যেসব দেশে মুদ্রাস্ফীতির মাত্রা বিভিন্ন রকম, তাদের আর্থিক বৃদ্ধির ভাল ছবি পাওয়া যায়।

ধরা যাক কোনও একটি অর্থনীতিতে কেবলমাত্র আপেল উৎপাদিত হয়, প্রথম বছরের চেয়ে দ্বিতীয় বছরে আপেলের উৎপাদন বাড়েনি। কিন্তু এই অর্থনীতিতেও আপেলের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে। এরকম ক্ষেত্রে, নমিনাল জিডিপি বৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ কিন্তু তার পুরোটাই হবে মূল্যবৃদ্ধির সাপেক্ষে, উৎপাদনে নয়।

কিন্তু ভানুমূর্তি বলছেন, প্রকৃত জিডিপির বৃদ্ধি হারকে কেউ টার্গেট করে না। ভানুমূর্তির ব্যাখ্যায়, প্রকৃত জিডিপি একটি প্রাপ্ত সংখ্যা। সরকার তার আর্থিক নীতির মাধ্যমে নমিনাল জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে, আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে। এই দুই রাশির চলমানতার মধ্যে থেকে প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধি প্রকাশিত হয়।

বাজেট তৈরির জন্য, নমিনাল জিডিপি সংখ্যার দিকেই আসল নজর থাকে। এই পরিসংখ্যান দিয়েই পরের বছরের বাজেট প্রস্তুত হয়।

তাহলে বাজেট প্রস্তুতির মূল পদক্ষেপগুলি কী?

 বাজেটের আগের হালুয়া উৎসবের ব্যাপারটা জানেন তো?

প্রথম ধাপ- প্রথমে বর্তমান অর্থবর্ষের নমিনাল জিডিপি জানাতে হবে অর্থমন্ত্রীকে।

দ্বিতীয় ধাপ- এরপর এই সংখ্যাগুলি নিয়ে আগামী বছরের নমিনাল জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে।

বাজেট পেশের সময়ে এক নজরে বাজেট নামে যে নথিটি দেওয়া হয়, তাতে সরকার এই হিসেব দেয়।

যেমন জুলাই মাসে পেশ হওয়া ২০১৯-২০ বাজেটে সরকার বলেছিল, ২০১৯-২০ সালের জিডিপি ২,১১,০০,৬০৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হচ্ছে। ২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত জিডিপি ১,৮৮,৪০,৭৩১ কোটি টাকার উপর ১২ শতাংশ বৃদ্ধি হার ধরে এই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হচ্ছে।

অন্যভাবে বললে, ২০১৮-১৯ সালের নমিনাল জিডিপি (ভারতের সীমানার মধ্যে উৎপাদিত পণ্য ও পরিষেবার বাজার মূল্য) ছিল ১,৮৮,৪০, ৭৩১ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী এর পর অনুমান করেছিলেন ২০১৯-২০ সালে নমিনাল জিডিপি ১২ শতাংশ বাড়বে এবং তার জেরে নমিনাল জিডিপি ২০১৯-২০ সালে, অর্থাৎ বর্তমান আর্থিক বর্ষে হবে ২,১১,০০,৬০৭ কোটি টাকা।

তৃতীয় ধাপ- নমিনাল জিডিপির দেওয়া হলে সরকার FRBM আইনকে টার্গেট করতে পারে এবং আর্থিক ঘাটতির চূড়ান্ত মাত্রা স্থির করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী যে কদিন আগে বললেন অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত, সে ব্যাপারটা কী?

চতুর্থ ধাপ- আগামী বছরে অর্থনীতির স্বাস্থ্য একবার আঁচ করতে পারলে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ হল রাজস্বের দিক থেকে কত টাকা আয় হবে সে ব্যাপারে বাজেট প্রস্তুত করা।

পঞ্চম ধাপ- এতক্ষণে সরকার জেনে ফেলেছে যে তার রাজস্ব কত হতে পারে এবং কতটা আর্থিক ঘাটতি সরকার অনুমোদন করতে পারবে। এবার সময় খরচের মাত্রা স্থির করার। অর্থাৎ দেখতে হবে খরচ এত বেশি না হয় যাতে আর্থিক ঘাটতি পেরিয়ে যায়।

ষষ্ঠ ধাপ- একবার সরকার যদি গোটা খরচ স্থির করতে পারে, তাহলে কোন খাতে কত খরচ হবে তার পরিমাণও স্থির করা যাবে।

Union Budget 2020
Advertisment