Advertisment

আনলক ২.০- সীমান্ত বন্ধ করতে পারবে না রাজ্য, এর প্রভাব কী হতে পারে?

লকডাউনের জেরে অর্থনীতি গুরুতর ধাক্কা খেয়েছে এবং সরকার মনে করছে সমস্ত সীমান্ত দিয়ে অবাধ মানুষ ও পণ্য যাতায়াতের ব্যবস্থা না হলে অর্থনীতি ধুঁকতেই থাকবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Unlockdown 2.0

আনলকডাউনে গতি ফিরছে কলকাতার বড়বাজারে (ছবি- শশী ঘোষ)

সোমবার কেন্দ্র দ্বিতীয় পর্যায়ের আনলকের নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। ক্রমবর্ধমান কোভিড-১৯ সংক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে যেসব বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকছে তা হল, স্কুল কলেজ খোলায় নিষেধাজ্ঞা। এ ছাড়া মাল্টিপ্লেক্স, জিম, বার খোলা যাবে না, এবং শুরু করা যাবে না মেট্রো রেল পরিষেবাও।

Advertisment

তবে সোমবার রাতের ঘোষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল, রাজ্যের হাতে আর তাদের সীমান্ত সিল করার অধিকার রইল না।

গত মাসে কেন্দ্র সরকার আনলকের মাধ্যমে অর্থনীতি সচল করা ও জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও বেশ কিছু রাজ্য তাদের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত সিল করেছে। তামিলনাড়ু ও কর্নাটকের মত রাজ্য লকডাউনও ঘোষণা করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নতুন নির্দেশিকায় যেসব রাজ্যে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তারা অস্বস্তিতে পড়বে, এবং এ নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে কিছুটা হলেও সংঘাত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

আনলক ২.০- নির্দেশে কী বলা হয়েছে?

দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউনের আওতায় সরকার কনটেনমেন্ট জোনে লকডাউন ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে - তবে কনটেনমেন্ট জোনের বাইরের এলাকায় শিথিলতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টার নাইট কারফিউয়ের সময়সীমা কমিয়ে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা করা হয়েছে।

যেসব বড় শোরুমে অনেকটা জায়গা রয়েছে, সেখানে একইসঙ্গে পাঁচজনের বেশি খরিদ্দার ঢুকতে পারবেন, তবে তাঁদের নিজেদের মধ্যে ৬ ফিটের দূরত্ব রাখতে হবে। শপিং মলগুলির কাছে এটা একটা হাঁফ ছাড়ার মত সিদ্ধান্ত।

কেন্দ্র বলেই দিয়েছে যে অই শিথিলতার পরেও, রাজ্যগুলি যদি মনে করে, তাহলে তারা অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। তবে তারা মানুষ বা পণ্য যাতায়াতের জন্য সীমান্ত সিল করতে পারবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গাইডলাইনে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত পেরোনোর জন্য কোনও পৃথক পারমিশন, অ্যাপ্রুভাল, ই পারমিট এসব কিছুই লাগবে না।

এই নির্দেশের অর্থ কী?

৩০ মে-র প্রথম পর্যায়ের আনলকের নির্দেশিকার সঙ্গে তুলনা করলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। আগের নির্দেশিকাতেও এই শব্দগুলিই ব্যবহৃত হয়েছিল, কিন্তু একটা ক্যাভিয়েট ছিল।

যদি কোনও রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জনস্বাস্থ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে জনগণের চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করতে চায়স তাহলে সে ব্যাপারে আগে থেকে ব্যাপক স্তরে জানান দিতে হবে এবং নি্দিষ্ট পদ্ধতি মানতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক বরিষ্ঠ আধিকারিকের ব্যাখ্যায় সাম্প্রতিক নির্দেশে বলা হয়েছে কোনও রাজ্য সীমান্ত বন্ধ করতে পারবে না বা রাজ্যের মধ্যে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় কোনও রোগ আটকাতে, বা কোনও বিপর্যয় মোকাবিলায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মানতে রাজ্য বাধ্য, যদি না কেন্দ্রীয় সরকার তাদের এ ব্যাপারে ছাড় দিয়ে থাকে।

তাহলে সমস্যা কোথায়?

সমস্যা হল, রাজ্যগুলি ফের বলতে পারে, অতিমারী নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে অতি কেন্দ্রিকতা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে অতিমারী বিভিন্ন ভাবে ছড়াচ্ছে এবং সমস্ত রাজ্য তাদের সুবিধানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যেমন বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ে ফের লকডাউন ঘোষিত হয়েছে।

গত দুমাসে উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানা বেশ কয়েকবার তাদের সঙ্গে দিল্লির সীমান্ত বন্ধ করেছে, আরও অনেক রাজ্যই তাদের প্রতিবেশী রাজ্যের ব্যাপারে এরকম পদক্ষেপ করেছে বা সম্প্রতি আন্তঃজেলা চলাচলেরর ক্ষেত্রেও এ ধরনের পদক্ষেপ করা হয়েছে।

যেমন এই ২৯ জুনেই মুম্বই তার শহরতলির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। ২৭ জুন তামিলনাড়ু তাদের সঙ্গে কর্নাটকের সীমান্ত বন্ধ করে। রাজস্থান গত ১০ জুন তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল এবং আন্তঃ রাজ্য চলাচলের জন্য প্রশাসনিক পাসের প্রয়োজন হচ্ছিল। গুজরাটে সংক্রমণ বাড়ায় দমন সে রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করেছিল।

এই সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের যুক্তি ছিল ক্রমবর্ধমান কোভিডের কারণে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং বিশ্লেষণ দেখাচ্ছে প্রতিবেশী রাজ্য থেকেই সংক্রমণ বেড়েছে।

তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এ সিদ্ধান্ত নিল কেন?

কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তের কারণ অর্থনীতিকে আরও বেশি করে সচল করা, তার অর্থ যদি অতিমারী ছড়িয়ে পড়া হয়, তাতেও কিছু করার নেই। লকডাউনের জেরে অর্থনীতি গুরুতর ধাক্কা খেয়েছে এবং সরকার মনে করছে সমস্ত সীমান্ত দিয়ে অবাধ মানুষ ও পণ্য যাতায়াতের ব্যবস্থা না হলে অর্থনীতি ধুঁকতেই থাকবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিকের কথায়, "আমরা এখন এমন এক পর্যায়ে রয়েছি যখন কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে একক লড়াই করা যাবে না। এটা একটা সামগ্রিক লড়াই। সমস্ত রাজ্যকেই অতিমারী রোধ ও অর্থনীতি সচল করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। দিল্লির সাপেক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যেই বলেছেন এনসিআরের ধারণা বাতিল করা যাবে না এবং হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ ও দিল্লিকে একযোগে অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে।"

এ পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলি কী করতে পারে?

আইনগত দিক থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশ মান্য করা ছাড়া রাজ্যের কিছু করার নেই।

তবে যেসব রাজ্য অধিকমাত্রায় ভুক্তভোগী তারা কেন্দ্রের কাছে এই সংকট মোকাবিলায় আরও স্বাধীনতার জন্য অনুরোধ করতে পারে। রাজ্যগুলি বলে আসছে যে তাদের পরিস্থিতি তারা বেশি ভাল বুঝছে এবং সে কারণে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বেশি থাকা উচিত। কেন্দ্র গত দু মাসে রাজ্যগুলিতে তাদের কোভিড সংক্রমণ রোখার ব্যাপারে বেশি স্বাধীনতা দিয়েছে।

তবে এই নয়া সিদ্ধান্তে রাজ্যগুলি কতটা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে এবং কেন্দ্র কতটা ছাড় দেয়, সেদিকে চোখ রাখতে হবে।

Lockdown COVID-19
Advertisment