দুমাসের বেশি সময় পর গত সপ্তাহে রেস্তোরাঁ ও শপিং মল খুলেছে। কিন্তু একদিন নিজেদের বাড়িতে ও এলাকায় বন্দি হয়ে থাকা মানুষ সেখানে ভিড় করছেন না। শপিং ডেস্টিনেশনের নিকটবর্তী পার্কিংয়ের হিসেব দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে মানুষের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতির চেহারা।
আনলক ১.০-র এক পক্ষ কাটার পর এই জায়গাগুলি মানুষের মনের অনিশ্চয়তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে। আনলকডাউন শুরুর পর দু সপ্তাহ কেটেছে- সেচা সময় হিসেবে অল্পই বটে, কিন্তু সূচক হিসেবে যথেষ্টই। লকডাউন পূর্ববর্তী সময়ে পুরোপুরি ফেরার ব্যাপারে মানুষের অনীহা স্পষ্ট।
কোভিড-১৯-এর ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। ভারতে গত দু সপ্তাহে আরও ১.৪ লক্ষ নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে- প্রতি সপ্তাহেই আগের সপ্তাহ থেকে সংখ্যা বাড়ছে। সম্ভবত এর সব সংক্রমণই এখনও সক্রিয়। সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে সব সময়েই আশঙ্কা থাকছে রোগ ঘাড়ের উপর এসে পড়ার, যে আশঙ্কা আগের চেয়ে বেড়েছে।
আরও পড়ুন, মেঘালয় কেন ধরে নিচ্ছে রাজ্যের সকলেই উপসর্গবিহীন বাহক?
গত সপ্তাহে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, আমেদাবাদের মত শহুরে হটস্পটগুলি গত মাসের চেয়ে ভাল অবস্থায়। গত চার সপ্তাহ ধরে জাতীয় স্তরে এই জায়গাগুলির অবদানের পরিমাণ কমছে, এবং পরিযায়ীদের যাতায়াতের কারণে বাকি ভারতে সংখ্যা বড়ছে। তবে অবশিষ্ট ভারতের বৃদ্ধির হার অত বেশি দ্রুত নয়- অন্যদিকে হটস্পট রাজ্যগুলিতে নতুন সংক্রমণের পরিমাণ ক্রমবর্ধমান।
এই ধারা গত সপ্তাহে দেখা গিয়েছে এবং এমনটা যদি চলতে থাকে, তাহলে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই ও আমেদাবাদের মত কেন্দ্রস্থলগুলিতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এর জেরে সুপ্রিম কোর্ট গত সপ্তাহে সমস্ত রাজ্যের ক্যাবিনেট সচিবকে বলেছে কনটেনমেন্ট ও টেস্টিংয়ের চেয়ে মৃত্যুহার কমানোর উপর বেশি নজর দিতে।
এই উৎকেন্দ্রগুলি থেকে আসা রিপোর্ট কেবল জাতীয় স্তরের সংবাদশিরোনামেই স্থান পাচ্ছে না, একই সঙ্গে অতিমারী মোকাবিলার ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। উপসর্গ থেকে টেস্টিং, অ্যাম্বুল্যান্স থেকে হাসপাতালে ভর্তি এবং ক্রিটিকাল কেয়ারের ব্যবস্থা- সর্বত্র যে যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তা মানুষের বিশ্বাসে ক্ষয় ধরাচ্ছে।
আরও পড়ুন, দিল্লিতে কোভিড মৃত্যুর হিসেবে গরমিলের কারণ কী?
প্রত্যেক রোগীর জন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুব্যবস্থা করার প্রচেষ্টা এ সপ্তাহের মূল লক্ষ্য হবে। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বৈঠকে পৌরোহিত্য করেছেন এবং হাসপাতালের বেডের তৎকাল পরিকল্পনার কথা বলেছেন। দিল্লির কেজরি সরকারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
১৬-১৭ জুনের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে এই প্রচেষ্টার উপরেই আরও জোর দেওয়া হবে বলেই মনে হয়। হটস্পট রাজ্যগুলিতে ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ অন্য রাজ্যগুলির কাছে একটি বার্তাও বটে, যে তাদের এই যুদ্ধে শিথিলতার কোনও অবকাশ নেই।
মৌসুমি বায়ু চলে এসেছে, খরিফ শস্য কাটাও শুরু হয়ে গিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অর্থনীতিতে প্রবল ধাক্কা লাগতে চলেছে, তবু আশা করা যাক কৃষি ক্ষেত্র থেকে এই অতিমারীর সময়ের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে স্বাভাবিকতার পথে ফেরার হদিশ মিলবে।