১৮ জুন রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী কমিশনের তরফ থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলি ২০২১-২২ সালের জন্য নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী আসনে ভারতকে ব্যাপক সমর্থন দিয়ে জিতিয়েছে। ভারত ১৯২টি ভোটের মধ্যে ১৮৪ টি ভোট পেয়েছে। ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস শ্রীমূর্তি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলি যে ভাবে ভারতের উপর আস্থা রেখেছে তাতে তিনি অভিভূত।
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী আসন কী?
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১৫ সদস্য- চিন, ফ্রান্স, রাশিয়ান ফেডারেশন, আমেরিকা ও ব্রিটেন, এই ৫টি দেশ স্থায়ী, এ ছাড়া ১০ টি অস্থায়ী সদস্য দেশ, যারা সাধারণ সভায় নির্বাচিত হয়। অস্থায়ী সদস্য দু বছরের জন্য নির্বাচিত হয়, ফলে প্রতি বছর ১০টির মধ্যে পাঁচটি দেশকে প্রতি বছর নির্বাচন করা হয়।
আরও পড়ুন, লাদাখ কেন ভারত ও চিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ- ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও কৌশলগত প্রেক্ষিত
এই ১০টি আসন সারা বিশ্বের মধ্যে বিস্তৃত- আফ্রিকা ও এশিয়ার পাঁচ আসন, একটি ইউরোপিয়ান দেশগুলির মধ্যে, দুটি লাতিন আমেরিক ও ক্যারিবিয়ান দেশের মধ্যে এবং দুটি পশ্চিম ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের মধ্যে।
আফ্রিকা ও এশিয়ার পাঁচ দেশের মধ্যে তিনটি আফ্রিকার ও দুটি এশিয়ার। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বেসরকারি বোঝা পড়া রয়েছে একটি আসন আরব দেশগুলির জন্য ছাড়ার। প্রতি দু বথর অন্তর আফ্রিকা ও এশিয়া প্যাসিফিক গোষ্ঠী আরব সদস্য স্থির করে।
প্রতি জোড় সংখ্যার বছরে দুই আফ্রিকান, এবং পূর্ব ইউরোপ, এশিয়া প্যাসিফিক, এবং দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানদের একটি করে সদস্য দেশের নির্বাচন হয়। বিজোড় সংখ্যার বছরে দুটি পশ্চিম ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ এবং এশিয়া প্যাসিফিক, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানদের একটি করে সদস্য নির্বাচিত হয়।
বর্তমানে নিরাপত্ত পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হল বেলজিয়াম, ডোমিনিকান রিপাবলিক, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা- এদের মেয়াদ এ বছর শেষ হচ্ছে এবং ২০২১ -এ মেয়াদ শেষ হচ্ছে এস্তোনিয়া, নাইজের, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনেডাইনস, তিউনিশিয়া এবং ভিয়েতনামের।
ভারতের মেয়াদ শুরু হবে ২০২১ সালের শেষে এবং ২০২২ পর্যন্ত তারা সদস্য থাকবে।
ভারতের নির্বাচন জয়
এশিয়া প্যাসিফিকের একমাত্র প্রার্থী ছিল ভারত। এশিয়া প্যাসিফিক গোষ্ঠীর তরফে ৫৫টি সদস্য দেশই ভারতকে সমর্থন জানিয়েছিল, যার মধ্যে ছিল পাকিস্তান ও চিনও। ২০১৯ সালের ২৬ জুন এ খবর জানিয়ে সব দেশকে ধন্যবাদ দিয়েছিলে সে সময়ে রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন।
আরও পড়ুন, সীমান্তে ভারত-চিন সংঘর্ষ: পরিস্থিতি কতটা গুরুতর, এর পর কী?
এর অর্থ ছিল নির্বাচনে ভারতের নিশ্চিত জয়।
ভারত, চিন ও পাকিস্তান ছাড়া এশিয়া প্যাসিফিকের অন্যান্য সদস্য় দেশ হল আফগানিস্তান, বাহরিন, বাংলাদেশ, ভুটান, ব্রুনেই, কাম্বোডিয়া, সাইপ্রাস, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, জারান, জর্ডন, কাজাখাস্তান, কিরিবাতি, কুয়েত, কিগিজস্তান, লাওস, লেবানন, মালয়েশিয়া, মালদ্বীর, মার্সাল আইল্যান্ড, মাইক্রোনেশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, নাউরু, নেপাল, ওমান, পালাউস পাপুয়া নিউ গিনি, ফিলিপিনস, কাতার, সামোয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সলোমন আইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তিমোর-লেসতে, টোংগা, তুর্কি, তুর্কিমেনিস্তান, তুভালু, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, উজবেকিস্তান, ভানুয়াটি, ভিয়েতনাম ও ইয়েমেন।
আগে কি ভারত রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ছিল?
১৯৫০-৫১, ১৯৬৭-৬৮, ১৯৭২-৭৩, ১৯৮৪-৮৫, ১৯৯১-৯২ ও ২০১১-১২ -তে ভারত নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য ছিল। ২০১১-১২-তে কাজাখাস্তান সরে দাঁড়াবার পর ১৯০ ভোটের মধ্যে ১৮৭ টি ভোট পেয়েছিল ভারত।
আফ্রিকার ক্ষেত্রে তিনটি আসনের মধ্যে রোটেশন পদ্ধতি জারি থাকলেও এশিয়া প্যাসিফিকে তেমনটা নেই। ফলে এখানে প্রায়শই আসনের জন্য প্রতিযোগিতা হয়। ২০১৮ সালে মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে লড়াই হয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে ভোটাভুটি বেশ কয়েক রাউন্ড পর্যন্ত গড়াতে পারে। ১৯৭৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আট রাউন্ড গড়ায় যাতে শেষ পর্যন্ত জিতেছিল পাকিস্তান। ১৯৯৬ সালে ভারত জাপানের কাছে হেরে গিয়েছিল।
গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোনও সদস্য দেশের কথা বলা হলেও জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে ওই দেশকে দুই তৃতীয়াংশ ভোট নিশ্চিত করতে হয়। ১৯৩ টি সদস্য দেশই যদি অংশগ্রহণ করে, তাহলে ১২৯ ভোট পাওয়া বাধ্যতামূলক।
১৯২ টি ভোটের মধ্যে ১৮৪ ভোট পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের দেশগুলিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।