মূত্র থেকে ইউরিয়া নিয়ে নিতিন গড়করির ভাবনা: গবেষণা ও সমস্যা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে ইউরিয়ার ব্যবহার অর্ধেক করে ফেলা হবে। প্রসঙ্গত ভারতে ইউরিয়ার দাম দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র তথা চিনের চেয়ে কম।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে ইউরিয়ার ব্যবহার অর্ধেক করে ফেলা হবে। প্রসঙ্গত ভারতে ইউরিয়ার দাম দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র তথা চিনের চেয়ে কম।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Urine to urea explained

ভারত বছরে ৩০ মিলিয়ন টন ইউরিয়া থেকে তৈরি সার ব্যবহার করে

দেশের পরিবহণ ও সড়কমন্ত্রী নিতিন গড়করি রবিবার বলেছেন যদি দেশের জনগণ মূত্র সংরক্ষণ করে তা ইউরিয়া উৎপাদনের কাজে লাগায়, তাহলে সার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ওই রাসায়নিকটি আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না।

Advertisment

এর আগেও এমন কথা বলেছিলেন গড়করি। ২০১৫ সালে তিনি বলেছিলেন, নিজের বাগানের জন্য ৫০ লিটারের পাত্রে মূত্র সংরক্ষণ করেন তিনি। তিনি সেবার বলেছিলেন, যেসব গাছে শুধু জল দেওয়া হয়, তার চাইতে দ্রুত বাড়বৃদ্ধি ঘটে মূত্রসেচিত গাছপালায়। ২০১৭ সালে গড়করি বলেছিলেন, ইউরিয়া উৎপাদনের জন্য প্রতিটি তহশিলে মূত্র ব্যাঙ্ক গড়ে তোলা হোক।

আরও পড়ুন, সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ নং অনুচ্ছেদ: কী, কেন, কোথা থেকে এল

Advertisment

রবিবার ফের এই আইডিয়ার কথা পুনরুচ্চারণ করেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, “বিমানবন্দরগুলিতে আমি মূত্র সংরক্ষণের কথা বলেছি। আমরা ইউরিয়া আমদানি করি, কিন্তু যদি সারা দেশ মূত্র সংরক্ষণ করে, তাহলে ইউরিয়া আমদানি করার দরকার থাকবে না। এ ব্যাপারে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেক্ষেত্রে কিছুই নষ্ট হবে না।“

ভারতের ইউরিয়া চাহিদা

ভারতের প্রতি বছর ইউরিয়ার প্রয়োজন হয় ৩০ মিলিয়ন টন। এর মধ্যে ২৪ মিলিয়ন টন ইউরিয়া দেশে তৈরি হয়, ৬ মিলিয়ন টন আমদানি করা হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে মন কি বাতে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে ইউরিয়ার ব্যবহার অর্ধেক করে ফেলা হবে। প্রসঙ্গত ভারতে ইউরিয়ার দাম দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র তথা চিনের চেয়ে কম।

মূত্র থেকে ইউরিয়া

সারা পৃথিবী জুড়ে বিজ্ঞানীরা মূত্র থেকে ইউরিয়া নিষ্কাশন নিয়ে কাজ করে চলেছেন।

২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন মল থেকে মূল্যবান উপাদান নিষ্কাশন করার উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ উপযোগী একটি টয়লেট ব্যবস্থার নকশা তৈরি এবং তার প্রণয়নের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৪০০০০০ ডলার অনুদান দিয়েছিল।

৯-এর দশকের গোড়ার দিকে সুইডেনে একটি মূত্র পৃথগীকরণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পে লোকের বাড়ি বাড়ি বিশেষ শৌচাগার এবং ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছিল এবং স্থানীয়ভাবে মূত্র ব্যবহার করা হত।

এ সব জায়গা থেকে সংগৃহীত মূত্র কোনও কোনও ক্ষেত্রে কৃষকদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হত বলে স্টকহোমের তিনটি সংস্থার গবেষকদের এক স্টাডিতে বলা হয়েছে।

ওই গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে প্রথম পর্যায় থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে প্রকল্পটির সময় লেগেছে পাঁচ বছর, এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে গ্রামাঞ্চল থেকে তা স্থানান্তরিত হয়েছে শহরাঞ্চলে। ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটি পিছু হঠে, তার কারণ ছিল পুরসভাহুলি এ ব্যাপারে যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য করছিল না। চতুর্থ পর্যায়ে পুরসভাগুলিই পুনর্ব্যবহারে উৎসাহ জোগানোর নীতি গ্রহণ করে।

হিসেব অনুসারে ২০০৬ সালে ১০০০০ এর কিছু বেশি পোর্সিলিনের তৈরি মূত্র নিষ্কাশনি শৌচাগার সুইডেনের বিভিন্ন বাড়িতে ব্যবহার করা হত।

ভারতে অনিশ্চিত

তবে দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখানে মূত্র সংগ্রহ সংরক্ষণ, পরিবহণ এবং তা থেকে ইউরিয়া নিষ্কাশন যথেষ্ট সমস্যার।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র অধ্যাপকের কথায় “প্রথমত, সেক্ষেত্রে গোটা শৌচাগার ব্যবস্থাই সুইডেনের মত করে পাল্টে ফেলতে হবে, বিশেষ শৌচাগার বসাতে হবে যেখানে মূত্র ও কঠিন বর্জ্য পৃথক করা যায়। বিশেষ ধরনের ভূগর্ভস্থ ট্যাঙ্ক তৈরি করতে হবে। মূত্র থেকে ইউরিন নিষ্কাশন করার জন্য বেশ কয়েকটি রাসায়নিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। এই পর্যায়ে উন্নীতকরণ এবং প্রকল্পের বাস্তবায়নে সমস্যা রয়েছে।“

রবিবার গড়করি অভিযোগ করেছেন যে, ”আমার আইডিয়াগুলো চমৎকার বলে লোকে আমাকে সমর্থন করে না। সংবাদ সংস্থা পিটিআই তাঁকে উদ্ধৃত করেছে।  তিনি বলেছেন পুরসভাগুলিও তাঁকে সমর্থন করবে না কারণ সরকারে এমন লোকজন রয়েছে যারা চালু পথেই হাঁটার ব্যাপারে প্রশিক্ষিত, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখার অভ্যেস তাদের নেই।”

Read the Full Story in English

bjp