Advertisment

Explained: আমেরিকায় গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞা, যুগান্তকারী রায় সম্পর্কে জানেন কি?

রো ভার্সেস ওয়েড মামলার রায়ের ১৯ বছর পর ফের গর্ভপাত সংক্রান্ত এক মামলা আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
american protest

ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, কিন্তু রিপাবলিকান প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পই কেল্লা ফতে করেছেন ইউএস সুপ্রিম কোর্টে। তাঁর আমলে নিযুক্ত হওয়া কনজারভেটিভ বিচারপতিদের জোরে সে দেশে এখন গর্ভপাত নিধিদ্ধ বলা যায়। রো ভি. ওয়েড বা রো ভার্সেস ওয়েড। এই প্রসিদ্ধ মামলায় গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাগ সেই আইনটিকেই খারিজ করে দিয়েছে। এতে তীব্র বিস্ময়াবিভূত মানবাধিকার আন্দোলনের সারা পৃথিবীর বহু মানুষ।

Advertisment

আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তোপ দেগেছেন শীর্ষ আদালতের বিরুদ্ধে। বলেছেন, এই রায়ের ফলে জন্মদানের অধিকারকে অপরাধ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হল। মেয়েদের গালে একটি চড় এই রায়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, আমেরিকার দুঃখের দিন এটা। এর পর তো হুলস্থূল শুরু হয়ে গিয়েছে আমেরিকা জুড়ে। গর্ভপাতের পক্ষে যাঁরা, তাঁদের অনেকেই যেমন প্রতিবাদে নেমেছেন, তেমনই সমর্থকের দলটা কম বড় নয়। সে দেশের ভোটেও এই রায়ের গভীর প্রভাব পড়বে, সেটা বুঝতে পারছেন যে কোনও মার্কিনিই।

রো ভার্সেস ওয়েড কী?
সাল ১৯৬৯। নর্মা ম্যাককোর্ভি, ২২ বছর বয়স তখন, সিঙ্গল প্রেগন্যান্ট বা একক অন্তসত্ত্বা। তিনি টেক্সাসের ডালাসের বাসিন্দা। কিন্তু তখন গর্ভপাত টেক্সাসে কার্যত নিষিদ্ধ, কার্যত এই কারণে বলছি যে, মায়ের জীবন ঝুঁকিবহুল না হলে গর্ভপাত করা যাবে না, এই আইন ছিল তখন। আইনের বিরুদ্ধে জিস্ট্রিক্ট কোর্টে গেলেন নর্মা। নর্মা ম্যাককোর্ভি নামে নয়, গোপনীয়তা রক্ষার কারণে একটি ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছিল আইনের খাতায়, ছদ্মনামটিই হল, জেন রো। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা লড়েছিলেন আইনজীবী হেনরি ওয়েড।

জেন রো-এর বক্তব্য ছিল, গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞা সংবিধান বহির্ভূত, এবং টেক্সাস সরকারকে এই আইনটি প্রয়োগের বিরুদ্ধে যেন পদক্ষেপ করতে বলে আদালত। আদালত রো-র বক্তব্য মেনে নিলেও, টেক্সাস সরকারকে কোনও নির্দেশ দিল না। ফলে হেরে গেলেন রো । কিন্তু এর মধ্যে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি, ফলে প্রশ্ন উঠল তিনি কী ভাবে গর্ভপাতের এই মামলাটি নিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন। রোয়ের আইনজীবী লিন্ডা কফি এবং সারা ওয়েডিংটন সুপ্রিম কোর্টে এই মামলাটিকে রাইট টু প্রিভেসি-র মামলা হিসেবে তুলে ধরেন। হ্যাঁ, রো-কে সামনে রেখেই।

সেটা ১৯৭১ সাল। সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের বক্তব্য ছিল, চিকিৎসক এবং যিনি গর্ভপাত করাবেন, তাঁদের দুজনের বিচার্য এই বিষয়টি, ব্যক্তি গোপনীয়তার স্বার্থে এ ব্যাপারে অন্য কেউ মাথা গলাতে পারেন না। সুপ্রিম কোর্টের ন' জন বিচারপতির মধ্যে সাত জন রোয়ের পক্ষে যান। তবে, সেটা অবশ্যই ভ্রুণের স্ব-ক্ষমতা (গর্ভের বাইরেও ভ্রুণটির জীবিত থাকতে পারার ক্ষমতা) জন্মানোর আগে করতে হবে। ৫০ বছর আগে, এই রায়ের সময় ভ্রুণের স্ব-ক্ষমতা তৈরির সময়টাকে ২৮ সপ্তাহ বা সাত মাস ধরা হত। কিন্তু তা এখন, আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী কমে হয়ে গিয়েছে ২৩ অথবা ২৪ সপ্তাহ। ৬ মাস বা তার থেকে একটু কম। আবার একেবারে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এটা ২২ সপ্তাহ (গর্ভধারণকাল মোটামুটি ৪০ সপ্তাহ)।

আরও পড়ুন- মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের গর্ভপাত রায় লিঙ্গ সমতা বিরোধী, কঠোর সমালোচনা রাষ্ট্রসংঘের

রো ভার্সেস ওয়েড মামলার রায়ের ১৯ বছর পর ফের গর্ভপাত সংক্রান্ত এক মামলা আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে যায়। প্ল্যান্ড পেরেন্টহুড ভার্সেস কেসি মামলা তার নাম। পেনসিলভেনিয়া অ্যাবর্সন কন্ট্রোল অ্যাক্ট (১৯৮২ ) নিয়েই এই মামলা। তাতে রো ভার্সেস ওয়েড মামলার রায়ের কিছু বদল হলেও, মূল রায়ের কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি আনডিউ বার্ডেন বা অযাচিত বোঝা হিসেবে দেখে এই আইনটিকে বিচার করা হবে, নাকি গর্ভপাতে ভ্রুণের স্ব-ক্ষমতায় পৌঁছানোর সময়কালকে বিচার করা হবে, এ নিয়ে তর্ক হয়। অবশ্য আনডিউ বার্ডেনেই সিলমোহর পড়েছিল তখন।

কিন্তু এবার রো-মামলার রায় ৫০ বছর পর একেবারে নাকচ হয়ে যাবে, সেটা যেন অনেকেই ভাবতে পারছেন না। এ যেন উল্টো দিয়ে হাঁটা মানবাধিকারের, বলছেন অনেকেই। ১৯৯৪-এর পর থেকে পোল্যান্ড, এল-সালভাদোর, নিকারাগুয়ার মতো দেশ গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেছে। আমেরিকা সেই তালিকাতেই নাম লেখাল এবার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও শাসক পক্ষ এর বিরুদ্ধে হলেও, তাঁরা এর নিয়ে বিশেষ কিছু করতে পারবেন কি না, সেই জল্পনাও চলছে।

Read full story in English

supreme court Biden America
Advertisment