প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেছেন করোনাভাইরাসের জন্য আর্থিক মন্দার সময়ে আমেরিকার কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি নজরে রেখে সাময়িকভাবে আমেরিকায় অভিবাসন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেবেন।
হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক সম্মেলনের সময়ে ট্রাম্প বলেন, "ভাইরাসের কারণে যেসব আমেরিকানদের ছাঁটাই হয়েছে তাঁদের জায়গা বিদেশ থেকে আসা নতুন অভিবাসী দিয়ে ভরাট করা অন্যায় হবে। আমরা প্রথমে আমেরিকান শ্রমিকদের দিকে নজর দেব।"
হোয়াটসঅ্যাপে আর শুধু চ্যাট নয়, ফেসবুক-জিওর চুক্তি থেকে কী পাবে ভারত?
তা সত্ত্বেও মঙ্গলবারের নির্দেশ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, বিশেষ করে আইনি অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্ববর্তী কার্যকলাপের কথা মাথায় রাখলে।
ট্রাম্পের নির্দেশের প্রভাব কাদের উপর পড়তে চলেছে?
ট্রাম্প বলেছেন আমেরিকায় যাঁরা স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে চান, যাকে বলে গ্রিন কার্ড প্রথা, তাঁদের উপর এ নির্দেশ কার্যকর হবে। অস্থায়ী অনভিবাসী ভিসার উপরে এর প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ধরনের ভিসা পর্যটক, ব্যবসার জন্য যাতায়াতকারী ও বিদেশি কর্মীদের দেওয়া হয়ে থাকে।
২০১৯ সালের আর্থিক বছরে আমেরিকা ৪,৬২,০০০ জনকে অভিবাসী ভিসা দিয়েছিল, যা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর। ট্রাম্পের এই নির্দেশের ফলে কতজন অভিবাসী ভিসা আবেদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প বলেছেন, এর কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে, তবে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। ট্রাম্প বলেননি যে এই নির্দেশের ফলে যাঁদের ইমিগ্রান্ট ভিসা এবং আমেরিকায় চাকরি হয়েছে, কিন্তু এখনও সে দেশে গিয়ে পৌঁছননি, তাঁরা এর ফলে প্রভাবিত হবেন কিনা।
ধরিত্রী দিবসের তাৎপর্য কী?
এই ব্যবস্থা কতদিন চলবে?
৬০ দিন চলবে এই ব্যবস্থা, জানিয়েছেন ট্রাম্প। এরপর প্রেসিডেন্ট আমেরিকার আর্থিক পরস্থিতি খতিয়ে দেখে স্থির করবেন যে তা আরও বাড়ানো হবে কিনা। পরবর্তী মেয়াদ ৬০দিনের বেশি সময়ের জন্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
অস্থায়ী বিদেশি কর্মীদের কী হবে?
প্রশাসনের এক বরিষ্ঠ আধিকারিক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন H-1B ভিসা নিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করা দক্ষ শ্রমিক এবং অন্যান্যদের ব্যাপারে হোয়াইট হাউস ভিন্ন নীতি গ্রহণ করতে চলেছে। সম্ভাব্য নির্দেশে যাঁরা করোনা মোকাবিলায় কাজ করছেন এবং কৃষক ও আমেরিকার খাদ্য সরবরাহ বজার রাখতে যাঁরা সাহায্যকারী তাঁরা ছাড় পাবেন। ট্রাম্প মঙ্গলবার জানিয়েছেন পরবর্তী কোনও একটি দিনে দ্বিতীয় আরেকটি নির্দেশ জারি হতে পারে, তবে তার দিনক্ষণ তিনি জানাননি।
ট্রাম্পের কি ইমিগ্রেশন মুলতুবি করবার ক্ষমতা রয়েছে?
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে ট্রাম্প নিরাপত্তার ঝুঁকি খতিয়ে দেখে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশ আটকাতে পারেন, এই ক্ষমতা ফেডেরাল আইনের আওতায় পড়ে। কিছু আইনি বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন আদালতে রায়ের সাপেক্ষে সারা বিশ্বের বৃহত্তর ক্ষেত্রের ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা জারি ট্রাম্পের আওতাধীন নয় এবং আশা করেছেন তাঁর রায় আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
করোনার জন্য কি ভারতীয় অর্থনীতি মার খাচ্ছে?
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ডেপুটি পলিসি ডিরেক্টর আন্দ্রেয়া ফ্লোরেস বলেছেন "ট্রাম্প জীবন বাঁচানোর চেয়ে অভিবাসন বিরোধী আগুনে হাওয়া দেওয়া বেশি অভিপ্রেত বোধ করছেন।"
এর আগে অভিবাসনে কীভাবে বিধিনিষেধ এনেছিলেন ট্রাম্প?
আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কিছু আইনি পদক্ষেপ করেছে। জানুয়ারির শেষে এক নির্দেশ জারি করে তিনি চিন থেকে ভ্রমণকারীদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। ফেব্রুয়ারিতে ইরান ও মার্চে ইউরোপ থেকে আসা আটকান তিনি।
এই অতিমারীর অনেক আগেই জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ট্রাম্প সে দেশে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছেন। জানুয়ারির শেষে তিনি নাইজেরিয়া ও আরও পাঁচ দেশের ভিসা নিষিদ্ধ করেন।
এই মুহূর্তে ইমিগ্রেশনের অবস্থা কীরকম?
১৮ মার্চ থেকে করোনাভাইরাস অতিমারীর কারণে প্রায় সব দেশের রুটিন ভিসা পরিষেবা প্রদান আমেরিকায় বন্ধ রয়েছে, যার ফলে গোটা পদ্ধতি অতি ঢিমে তালে চলছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন দেশ তাদের সীমানা সিল করে রেখেছে যাতে অতিমারী না ছড়ায়, এর ফলে বিশ্বব্যাপী পর্যটন কমেছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মাসিক ভিসা রিপোর্টে সে ছবি ধরা পড়লেও মার্চ মাসের তথ্য এখনও জনসমক্ষে আসেনি।
তেল কিনলে ডলার মিলছে, এমন ঐতিহাসিক পরিস্থিতি হল কী করে?
অভিবাসীদের আটকালে কি অর্থনীতির সুবিধে হবে?
গত মাসে রেকর্ড সংখ্যক ২২ মিলিয়ন আমেরিকান কর্মহীনতা জনিত সুবিধা দাবি করেছেন, মহামন্দার সময়ের পর থেকে হিসেব করলে এই কর্মহীনতার পরিস্থিতি আগে আসেনি।
ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেছেন ভিসা মুলতুবি রাখলে মার্কিন কর্মীদের সুরক্ষা প্রদান করা হবে, যে বার্তার মূল সুর তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারে সামনে এনেছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন বিভাগের পূর্বতন আধিকারিক টমাস হোমান বলেছেন, এর যুক্তি রয়েছে এবং এর ফলে কর্মহীন আমেরিকানদের কাজ পেতে সুবিধা হবে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জিওভান্নি পেরি বলেছেন গবেষকরা সাধারণভাবে একমত হয়ে থাকেন যে আমেরিকায় অভিবাসনের ফলে সে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি অগ্রসর হয়, আর্থনীতি স্ফীত হয় এবং কাজের সুযোগ তৈরি হয়। তিনি বলেন, "অভিবাসনের ফলে আমেরিকানদের কাজের সংকট তৈরি হয়, এমন কথা কোনও পরিসংখ্যানেই নেই।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন