Uniform Civil Code: আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি, উত্তরাখণ্ড বিধানসভা ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) বিল পাস করার জন্য পেশ করবে। একাধিক টালবাহানার পরে, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি বিধানসভা আহ্বানের কয়েকদিন আগে সরকারের কাছে রিপোর্ট হস্তান্তর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রশ্ন হল, কীভাবে এই ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) বিল এল? এ থেকে কী পরিবর্তন প্রত্যাশিত? চলুন, দেখে নেওয়া যাক।
উত্তরাখণ্ডের ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি)-এর ইতিহাস
ইউসিসি বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রবর্তন হল, ২০১৪ সালের সাধারণ (লোকসভা) নির্বাচনে বিজেপির প্রচারিত প্রতিশ্রুতিগুলোর অন্যতম। বিজেপি ওই বছরের লোকসভা নির্বাচনে বিয়ে, উত্তরাধিকার, বিবাহবিচ্ছেদ এবং দত্তক গ্রহণের মত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে একটি অভিন্ন ব্যক্তিগত আইনবিধি তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই প্রতিশ্রুতি ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৪ থেকে উদ্ভূত। যা বলছে, 'রাষ্ট্র ভারতের সমগ্র অঞ্চলজুড়ে নাগরিকদের জন্য একটি অভিন্ন নাগরিক আইন তৈরি করার চেষ্টা করবে।' এটি রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশমূলক নীতির অংশ (সংবিধানের চতুর্থ অংশ)। যার আইনগুলো কোনও আদালত দ্বারা বলবৎযোগ্য নয়। তবে তাদের অধীনে স্থাপিত নীতিগুলোকে 'দেশের শাসনের মৌলিক আইন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আর, আইন প্রণয়নে এই নীতিগুলো প্রয়োগ করা হবে রাষ্ট্রের কর্তব্য।'
অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরুদ্ধে
২০২২ সালে উত্তরাখণ্ডের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পুনরায় দিয়েছিল। ২০২২ সালের ২৭ মে, বিজেপির নির্বাচনী বিজয়ের পরে, উত্তরাখণ্ড সরকার ঘোষণা করেছিল যে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি, বিলের খসড়া-সহ একটি রিপোর্ট জমা দেবে। এর আগে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল। উত্তরাখণ্ডের কংগ্রেস প্রতিনিধিরা, যেমন উত্তরাখণ্ডের বিধায়ক প্রীতম সিং, বিজেপির বিরুদ্ধে উন্নয়ন এজেন্ডা উপেক্ষা করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করা এবং সমাজের মেরুকরণের দিকে মনোনিবেশ করার অভিযোগ করেন। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং এআইএমআইএম সংসদ সৈয়দ ইমতিয়াজ জলিলও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধির রিপোর্ট জমা
রিপোর্টটি প্রাথমিকভাবে ২০২২ সালের নভেম্বরে জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ২০২৩ সালের জুনে কমিটি তার কাজ শেষ করবে। তারপরও অবশ্য, রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমা একাধিকবার বাড়ানো হয়েছিল। এখন, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে রিপোর্ট অবশেষে জমা পড়তে চলেছে। গঠনের পর থেকে, এই কমিটি জনসাধারণের থেকে ২.৫ লক্ষেরও বেশি পরামর্শ পেয়েছে। যার বেশিরভাগ পরামর্শই চিঠি, নিবন্ধিত পোস্ট, ইমেল এবং অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে লিখিত পরামর্শের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ, কমিটি উত্তরাখণ্ডজুড়ে ৩৮টি জনসভা করেছে। জনসাধারণের সঙ্গে মত বিনিময়ের মাধ্যমে পরামর্শ পেয়েছে।
উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি দ্বারা কি পরিবর্তন আনা হতে পারে?
উত্তরাখণ্ড সরকার এবং কমিটি জানিয়েছে যে রিপোর্ট তৈরি করার সময় লিঙ্গ সমতা একটি মূল বিবেচ্য বিষয় ছিল। উত্তরাখণ্ড রাজ্যে বসবাসকারী সকল মানুষের জন্য অভিন্ন ব্যক্তিগত আইনের পাশাপাশি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এমন আইন চালু করবে, যা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে পুরুষ ও মহিলাদের সঙ্গে সমানভাবে আচরণ করবে। রাজ্যের মুসলিম মহিলাদের জোরালো দাবির জবাবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি- বহুবিবাহ, ইদ্দত এবং হালাল প্রথাগুলোকেও খারিজ করবে বলে জানা গেছে। যাইহোক, পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যই বিয়ের ন্যূনতম বয়স সম্ভবত আগের মতই থাকবে (মহিলাদের জন্য ১৮ বছর এবং পুরুষদের জন্য ২১ বছর)। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লিভ-ইন সম্পর্কগুলোকেও নিয়ন্ত্রিত করবে। আর, লিভ-ইন সম্পর্ক শুরু এবং বন্ধ করার জন্য একটি বাধ্যতামূলক ঘোষণাও করবে।
অন্যান্য রাজ্যগুলো উত্তরাখণ্ডের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে
উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইনি হওয়ার পর, গুজরাত এবং অসমের বিধানসভার সামনেও অনুরূপ বিল পেশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গুজরাত সরকার ২০২২ সালে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিল। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, গত বছর করিমনগরে হিন্দু একতা যাত্রায় ভাষণ দিয়েও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সুর চড়িয়েছিলেন। উল্লেখ্য, গোয়াই দেশের প্রথম রাজ্য যা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বাস্তবায়িত করেছে।
আরও পড়ুন- কোনপথে জ্ঞানবাপী মামলা, কী ঘটেছে এতদিন, তারিখ ধরে দেখে নিন