Covid Vaccination: ভ্যাকসিনেরও সকাল-বিকেল আছে। নতুন গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এমন গল্প হলেও সত্যি কথা। কোভিড সান্তার ঝুলি থেকে ঝলমল করে আরও কত কী যে বেরিয়ে আসবে ভগবান তো দূর, ভাইরাসও জানে না! যাক সে কথা। সার্স কোভ-টু-র ভ্যাকসিন নেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্ত পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখেছেন-- সকালে প্রতিষেধক নিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের চেয়ে দুপুরে প্রতিষেধকপ্রাপ্তদের দেহে অ্যান্টিবডি বেশি। বায়োলজিকাল রিদমস নামে একটি জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে, বেশ হইচইও পড়েছে।
গবেষকরা এই প্রসঙ্গে সার্কাডিয়ান রিদমসের (circadian rhythm) কথা বলছেন। বস্তুটা কী? দিন-রাতের সঙ্গে শরীর-মন এবং আচরণের যে পরিবর্তন হয়, তাকেই সার্কাডিয়ান রিদমস বলা হয়। সারা দিন কারওর সমান নাহি যায়, আলোর সঙ্গে আমাদের ওঠাপড়া চলে, শরীর-ঘড়ির চক্রবৎ পরিবর্তন ঘটে। বিষয়টা কিন্তু পুরো প্রাকৃতিক। ভারসাম্য বোনা। এবং শুধু মানুষ নয়, সব জীবেরই মধ্যেই এইটা অবিরল ঘটে চলে। এমনকি মাইক্রোবও বাদ যায় না। এর সবচেয়ে সহজ প্রকাশটা বললে এখুনি বলবেন, ওহ এই ব্যাপার, এটা নিয়েই এত লম্বা-চওড়া বলে চলেছেন! তা কী সেটা? সেইটি হল নিদ্রা।
না, ভগবানের নয়, আপনার, কুম্ভকর্ণ না হলে গোলোযোগে যা সাধারণত ভেঙে যায়, ধড়মড়িয়ে উঠে বসতে হয়। তাই রাত্রে ঘুমোন আপনি, আমি, আমরা প্রায় সকলেই। এটাই স্বভাব, গোলমালের জন্য শুধু নয়, অন্ধকারের সঙ্গে আমাদের শরীর-মনের সম্পর্কের খাতিরেই আমরা রাতে ঘুমোই। সার্কাডিয়ান রিদমের বশে রাতে নিদ্রা আসে, সকালে আসে না, যদি রাত জাগেন, সকালে ঘুমোতে যান, দেখবেন শরীর ম্যাজম্যাজ করছে, ঘুম হচ্ছে ভাঙা ভাঙা। যাঁরা নাইট ডিউটি করেন, তাঁরা সমস্যাটা গলগ্রহের মতো বোঝেন। অবশ্য অনেকের ক্ষেত্রে হয় যে, সকালে ঘুমোতে ঘুমোতে তাঁদের ওই সার্কাডিয়ান রিদমসটাই রং রুটে চলে গিয়েছে (সকাল তাঁদের কাছে রাতের মতোই অন্ধকার )। এর ফলে সকালে তাঁরা সহজেই নিদ্রাদেবীর আরাধনা করতে পারেন। এটা অবশ্য মানুষের কথা। প্যাঁচারা রাতে জেগে থাকে,হায়নারা হায় হায় করে, বাঘের চোখ আগ্নেয় হয়, তাদের সার্কাডিয়ান রিদিমটা উল্টো। গবেষকরা বলছেন, এই ছন্দের প্রভাব পড়ছে ভ্যাকসিনেও। সকালের চেয়ে দুপুরে ভ্যাকসিন নিলে বেশি অ্যান্টিবডি পাওয়া যাচ্ছে তাই।
কোভিডের ভ্যাকসিনে এমনটা প্রথম সামনে এলেও, মানব শরীরের সার্কাডিয়ান রিদমসের প্রভাব যে বহু ওষুধের কার্যকারিতার উপর পড়ে সে কথা অনেক আগে থেকেই জানা। বেশ কিছু রোগেও শরীরের আলো-অন্ধকারের ছন্দ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের একটি গবেষণা থেকে যেমন বেরিয়ে এসেছিল, ফুসফুসের অসুখের উপসর্গের বৃদ্ধি কিংবা রোগীর পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে উঠেছে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে।
সার্স কোভ-টু-র ভ্যাকসিনের এই পরীক্ষাটি ব্রিটেনের ২ হাজার ১৯০ জনের উপর করা হয়েছে। গবেষকরা ভ্যাকসিনের ধরন, বয়স, লিঙ্গ এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার সময়ের উপর ভিত্তি করে একটি মডেল তৈরি করেছেন। দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে, তত ভ্যাকসিনের রোখ বাড়ছে, মানে অ্যান্টিবডি বেশি তৈরি হচ্ছে। জানা যাচ্ছে সেই মডেল থেকেই। পাশাপাশি, এও সামনে এসেছে যে, ফাইজারের ভ্যাকসিন যে সব মহিলা এবং কমবয়সীরা নিয়েছেন, তাঁধের অ্যান্টিবডি রেসপন্স বেশি হয়েছে।
ভ্যাকসিনের এই টাইমিং-ডেটায় আপনার তেমন কিছু লাভ হবে না। কারণ আপনি তো ভ্যাকসিন নিয়েই ফেলেছেন। আর যদি সত্যি সত্যিই না নিয়ে থাকেন তা হলে পড়ন্ত বেলাকে বেছে নিতেই পারেন সেই পুণ্যকাজে। যদি কর্ম-উপলক্ষে সেই সময়টাকে কব্জা করতে না পারেন, দ্বিধা না করে সকালেই চলে যান, দেরি করা এ কাজে অপরাধ, কারণ, দুয়ারে ওমিক্রন এসে কড়া নাড়তেই পারে। তার যে কোনও সকালসন্ধ্যা সময়জ্ঞান নেই!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখনটেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন