আইসিআইসিআই ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি এবং সিইও চন্দা কোছার, তাঁর স্বামী দীপক কোছারকে গ্রেফতারের কয়েক দিন পরে, ভিডিওকন গ্রুপের চেয়ারম্যান ভেনুগোপাল ধুতকে সোমবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) আইসিআইসিআই ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। সংস্থার আধিকারিকদের সংক্ষিপ্ত জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআই গ্রেফতার করেছে ৭১ বছর বয়সি ধুতকে। সিবিআই আগেই জানিয়েছিল, তারা ছন্দা কোছারদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট পেশ করবে। কোটিপতি হয়ে ওঠা কারাগারে পৌঁছে যাওয়া, একনজরে দেখে নেওয়া যাক ধুতের ইতিহাস।
উত্থান, তারপর পতন
১৯৫১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্ম বেণুগোপাল ধুতের। পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বিটেক পাশ করেন। তারপর তাঁর বাবা নন্দলাল মাধবলাল ধুতের সাথে পারিবারিক সংস্থায় যোগ দেন। নন্দলাল মাধবলাল ধুত ১৯৮৫ সালে ভিডিওকন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই প্রথম দেশ রঙিন টেলিভিশন চালু হয়েছিল। ভিডিওকনের ভারতজুড়ে বেশ কয়েকটি উত্পাদন কেন্দ্র ছিল। চিন, মেক্সিকো, পোল্যান্ড এবং ইতালির মতো বিভিন্ন দেশেও কারখানা তৈরি করেছিল এই সংস্থা। ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্রে সাফল্যের পর, সংস্থাটি টেলিযোগাযোগ, তেল এবং বিদ্যুৎ বিভাগের ব্যবসায় প্রবেশ করে।
২০১৫ সালে, ফোর্বস ম্যাগাজিন ধুতকে ভারতের ৬১তম ধনী ব্যক্তি বলে দাবি করে। তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি মার্কিন ডলার বলে দাবি করে ফোর্বস। ক্রিকেট অনুরাগী এই শিল্পপতি ২০১০ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) অধুনা-লুপ্ত পুনে দলকে কেনার চেষ্টা করেছিলেন। যাইহোক সংস্থাটি ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সমস্যায় পড়ে। আর্থিক সমস্যার জেরে তারা ২০১৭ সালে টেলিকম ক্ষেত্রে থেকে সরে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে না-পেরে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এর আধিপত্য হ্রাস পায়।
আরও পড়ুন- ‘আত্মহত্যা না, খুন হয়েছেন সুশান্ত..’, বিস্ফোরক দাবি হাসপাতালের মর্গের ডোমের
ধুতের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সিবিআইয়ের মতে, তাঁর ভিডিওকন গ্রুপের জন্য ঋণ পেত ধৃত চন্দা কোছার এবং তাঁর পরিবারকে উৎকোচ দিয়েছিলেন বেণুগোপাল ধুত। একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে, তিনি দীপক কোছারের NuPower Renewables সংস্থায় ৬৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ব্যাংক থেকে ৩,২৫০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার কয়েক মাস পরে এই বিনিয়োগ করেছিলেন ধুত। সেই সময় ব্যাংকের মাথা ছিলেন আবার দীপক কোছারের স্ত্রী ছন্দা কোছার।
ভিডিওকনকে ঋণ দেওয়া বেশিরভাগ অর্থ অনাদায়ী সম্পদ (এনপিএ)-এ পরিণত হয়। সিবিআইয়ের অভিযোগ, ধুতের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে হাত ছিল চন্দা কোছারের। এজন্য তিনি তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন। যদিও কোছার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। যদিও হাজারো অভিযোগ কাঁধে নিয়েই কার্যত বাধ্য হয়ে চন্দা কোছারকে ২০১৮ সালে আইসিআইসিআই ব্যাংকের এমডি এবং সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
এক বছর পরে, সিবিআই আইসিআইসিআই ব্যাংকের ১,৭৩০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে কোছার, ধুত এবং নুপাওয়ার রিনিউয়েবলস এবং ভিডিওকন ইন্ডাস্ট্রিজ-সহ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের সম্পর্কিত ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ধারাগুলো মামলায় দায়ের করা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, 'অভিযুক্ত (চন্দা কোছার) আইসিআইসিআইকে প্রতারণা করার জন্য অন্যান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে একটি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে কিছু ঋণ অনুমোদন করেছিল।' এই মামলায় সিবিআই সুপ্রিম এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড, ভিডিওকন ইন্টারন্যাশনাল ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (ভিআইইএল) এবং অজ্ঞাতপরিচয় সরকারি কর্মচারীদের নাম অভিযুক্তের তালিকায় উল্লেখ করেছে। সিবিআই আদালত ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেণুগোপাল ধুতকে সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
Read full story in English