সোমবার ব্রিটেনের হাইকোর্ট পলাতক লিকার ব্যারন বিজয় মালিয়ার ভারতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
এবার মালিয়ার সামনে কী উপায়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৪ দিনের মধ্যে ব্রিটেন হাই কোর্টে মালিয়াকে একটি সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হবে, যে সার্টিফিকেটে লেখা থাকবে যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিষয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও হাই কোর্টের চোখে পড়েনি। হাই কোর্ট যদি সে সার্টিফিকেট দেয়, তাহলে প্রত্যর্পণের নির্দেশের বিরুদ্ধে মালিয়া সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবেন। যদি হাইকোর্ট তেমন সার্টিফিকেট দিতে রাজি না হয়, তাহলে মালিয়া সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারবেন না। তেমন পরিস্থিতিতে তাঁর বিষয়টি যাবে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দফতরের সচিব প্রীতি প্যাটেলের কাছে। তিনিই প্রত্যর্পণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। প্যাটেলের অনুমতি পেলে মালিয়াকে ভারতে নিয়ে আসা যাবে।
বিজয় মালিয়াকে আটকানোর দরকার নেই, লিখিত ভাবে জানিয়েছিল সিবিআই
বিজয় মালিয়া ও তাঁর সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
মালিয়া এবং তাঁর সংস্থা কিংফিশার এয়ারলাইনস লিমিটেড, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের ১০ হাজার কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণের ব্যপারে ইডি, সিবিআই, সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো, এবং সেবির নজরে আসে।
মালিয়ার বিরুদ্ধে প্রতারণা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অর্থ পাচার ও ঋণের অর্থ অন্য খাতে খরচ করার অভিযোগ রয়েছে। কিংফিশার এয়ারলাইনস সহ তাঁর আরও কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের কোম্পানি আইন ও সেবি নিয়মভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। বিজয় মালিয়া তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ইডি মালিয়ার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার নিরোধক আইনের ৩ ও ৪ নং ধারায় অভিযোগ এনেছে, সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে ১২০ বি (ষড়যন্ত্র), ৪২০ (প্রতারণা) এবং দুর্নীতিদমন আইনের ১৩ (১) (ডি) ও ১৩ (২) ধারায় অভিযোগ এনেছে।
একইসঙ্গে ইডির অভিযোগ, বর্তমানে নিষ্ক্রিয় কিংফিশার এয়ারলাইনস তাদের দেওয়া ৩৫৪৭ কোটি টাকা ঋণ অন্যত্র খরচ করেছে।
অন্তত ৫টি ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে ইডির অভিযোগ।
আলো, হাওয়া, বিনোদন, দেশের জেলখানায় বিজয় মালিয়ার জন্য রয়েছে সব ব্যবস্থাই, ধরা পড়ল সিবিআই-এর ভিডিওতে
এগুলি হল, ২০০৮ এপ্রিল থেকে ২০১২ মার্চ পর্যন্ত বিমান লিজের ভাড়া হিসেবে ৩৪৩২.৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত চালান, ৪৫.৪২ কোটি টাকা একটি কর্পোরেট জেটের লিজের খরচ, যা বিজয় মালিয়া ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবহার করতেন, কিংফিশার এয়ারলাইন্স থেকে ৫০.৯০ কোটি টাকা মালিয়ার ফর্মুলা ওয়ান টিমে প্রদান, মালিয়ার সংস্থা থেকে ১৫.৯০ কোটি টাকা তাঁর আইপিএল ক্রিকেট টিম রয়াল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অ্যাকাউন্টে প্রদান এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে পুরনো ২.৮০ কোটি টাকার ঋণ শোধ।
ইডির তরফ থেকে অর্থ পাচারে মালিয়াকে সহায়তা করবার জন্য ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ হোল্ডিং লিমিটেডকেও দায়ী করা হয়েছে।
ইডি ও সিবিআই দু পক্ষেরই অভিযোগ, ২০১০ সালে কিংফিশার এয়ারলাইনসের ঋণের পুনর্কাঠামো গঠন হচ্ছে, তখন তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তির হিসেব চুক্তি মোতাবেক দেননি।
দুই সংস্থারই অভিযোগ মালিয়া ভারতের বাইরে, বিশেষত ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স ও আফ্রিকায় বিপুল সম্পত্তি জড়ো করেছেন এবং ভারতের বাইরে বহু সংস্থা কিনেছেন বা অধিগ্রহণ করেছেন।
এই অভিযোগের ব্যাপারে মালিয়ার প্রতিক্রিয়া কী?
মালিয়া সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে প্রত্যর্পণ মামলার শুরু থেকেই তিনি দাবি করে আসছেন তিনি সমস্ত ঋণ মিটিয়ে দিতে প্রস্তুত।
৩১ মার্চ এক টুইটে মালিয়া লেখেন, “কিংফিশার এয়ারলাইনস্কে ব্যাঙ্ক যত ঋণ দিয়েছে তার ১০০ শতাংশ আমি ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত... ব্যাঙ্কগুলিও এতে সাড়া দেয়নি, ইডিও বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। আমার আশা এই কঠিন সময়ে অর্থমন্ত্রী এ কথা শুনবেন।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন