কমপক্ষে ১৪ জন নিহত। অসংখ্য ভোটকেন্দ্র ভাঙচুর। ব্যালট পেপার পুড়িয়ে দেওয়া। এসব নিয়ে শনিবার ৮ জুলাই, পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়ে উঠল ব্যাপক হিংসাত্মক। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দায়ী করেছে। আর, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এবং বিরোধী দলগুলো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'গণতন্ত্র ধ্বংস করার' দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
রাজ্যপালের ভূমিকা
পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বিভিন্ন জেলায় গিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'এই ঘটনা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ। কারণ, এই নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে পবিত্র দিন। কিন্তু, নির্বাচন হতে হবে ব্যালটের মাধ্যমে, বুলেটের মাধ্যমে নয়।'
আদালতের নির্দেশ
রাজ্য সরকার ৯ জুন পঞ্চায়েত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গজুড়ে হিংসা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। যার জেরে এখনও পর্যন্ত ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ। এসব দেখেই বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যজুড়ে ১০ দিনের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয়। ১১ জুলাই নির্বাচনী ফলাফলের ঘোষণার পর, 'জনগণ এবং নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে' নির্দেশ দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি
শনিবার সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং মালদা জেলার পৃথক ঘটনায় তিন তৃণমূল কর্মী নিহত হন বলে অভিযোগ উঠেছে। কোচবিহারে বিজেপির এক পোলিং এজেন্টকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পূর্ব বর্ধমান জেলায় আবার গত সন্ধ্যায় গুরুতর আহত সিপিআই(এম) কর্মী আজ (শনিবার) সকালে একটি হাসপাতালে মারা যান।
বিভিন্ন জায়গায় হিংসা
এদিকে, ভোট দিতে যাওয়ার সময় মুর্শিদাবাদের নওদায় এক কংগ্রেস সমর্থককে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই আরও জানিয়েছে যে শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় এক বিস্ফোরণে দুই শিশু আহত হয়েছে। ঘটনাটি যখন ঘটে, সেই সময় ক্ষতিগ্রস্তরা রাস্তার ধারে নোংরায় পড়ে থাকা জিনিসকে বল ভেবে ভুল করে তুলে নিয়েছিল বলেই আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- জাতীয় সংগীতের সময় উঠে দাঁড়ানো, কী নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট?
অশান্তির কারণ
রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনার তারিখ ঘোষণার পর থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন যে নির্বাচনের জন্য ৬০,০০০ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি। আরও দিন বৃদ্ধি প্রয়োজন। শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের আশঙ্কাই সত্যি হয়। দিন ঘোষণার পরের দিনগুলোয় রাজ্যজুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। বাম-বিজেপি-কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সেই থেকে শুরু হওয়া উত্তাপ ভোটের দিনও মেটেনি।