রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী 'বিশ্বকর্মা জয়ন্তী' উপলক্ষে নয়াদিল্লিতে প্রথাগত কারুশিল্প ও দক্ষতায় নিযুক্ত শ্রমিকদের সরকারি সহায়তা দেওয়ার জন্য 'প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা প্রকল্প' চালু করেছেন। প্রায় একমাস আগে তাঁর স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতার সময় প্রথম এই প্রকল্পের কথা প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন। এই প্রকল্পকে ২০২৪ সালের লোকসভার আগে অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়গুলো, বিশেষ করে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) কাছে বিজেপির পৌঁছনোর একটি উপায় হিসেবেও দেখা হচ্ছে। প্রশ্ন হল, এই প্রকল্পে কী বলা হয়েছে?
বিশ্বকর্মা প্রকল্প
এটি একটি নতুন প্রকল্প যার ব্যয় ১৩,০০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের যাবতীয় অর্থ দিচ্ছে। গত ১৫ আগস্ট মোদী বলেছিলেন, 'এই বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে, আমরা প্রায় ১৩,০০০-১৫,০০০ কোটি টাকা দেব সেই লোকেদের, যাঁদের ঐতিহ্যগত দক্ষতা আছে। যাঁরা যন্ত্রপাতি দিয়ে এবং নিজের হাতে কাজ করেন। আর, তাঁদের বেশিরভাগই ওবিসি সম্প্রদায়ের। সে আমাদের ছুতার, আমাদের স্বর্ণকার, আমাদের রাজমিস্ত্রি, আমাদের ধোপা শ্রমিক, আমাদের নাপিত ভাই বা বোন হোক না-কেন।'
দেবতাদের স্থপতি
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে বিশ্বকর্মাকে দেবতাদের স্থপতি হিসেবে দেখা হয় এবং তিনি ছিলেন দেবতাদের কারিগর। তিনি দেবতাদের জন্য অস্ত্রও তৈরি করেছিলেন এবং তাঁদের শহর ও রথ তৈরি করেছিলেন। কিংবদন্তি বলে যে তিনি হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে উল্লিখিত পৌরাণিক শহর লঙ্কার স্থপতি ছিলেন বিশ্বকর্মাই। শুধু তাই নয়, উড়িষ্যার পুরীতে জগন্নাথের মহান প্রতিমাও নাকি তৈরি করেছিলেন তিনি। তাঁকে শ্রমিক, কারিগর ও শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষক দেবতা হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
বিশ্বকর্মা প্রকল্পের জন্য কারা যোগ্য?
সরকারের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও এই প্রকল্প ঘোষণা ইস্যুতে প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, কীভাবে শত শত বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এবং দক্ষতায় পেশাদাররা নিযুক্ত আছেন। আর, এই পেশাদারদের প্রায়শই পরিবারের বড়রাই শিখিয়ে থাকেন। তাঁরা অবশ্যই কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন। যার মধ্যে রয়েছে তাঁদের কাজের জন্য পেশাদার প্রশিক্ষণের অভাব, আধুনিক সরঞ্জামের অভাব। বাজারের যোগ্য মূল্য না-পাওয়া, বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট পুঁজি না-থাকা।
এই ধরনের ১৮টি বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলোকে সম্ভাব্য সব উপায়ে সাহায্য করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যাঁরা এই সব সাহায্য পাবেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন:
(i) ছুতার
(ii) নৌকা নির্মাতা
(iii) অস্ত্রনির্মাতা
(iv) কামার
(v) হাতুড়ি এবং টুল কিট প্রস্তুতকারক
(vi) কামার
(vii) স্বর্ণকার
(viii) কুমোর
(ix) ভাস্কর ও পাথরশিল্পী বা পাথর ভাঙার কাজে যাঁরা যুক্ত
(x) মুচি (জুতো তৈরির কারিগর)
(xi) রাজমিস্ত্রি (রাজমিস্ত্রি)
(xii) ঝুড়ি/মাদুর/ঝাড়ু প্রস্তুতকারক/তাঁতি
(xiii) পুতুল ও খেলনা নির্মাতা (ঐতিহ্যবাহী)
(xiv) নাপিত
(xv) মালা প্রস্তুতকারক
(xvi) ধোপা
(xvii) দর্জি
(xviii) মাছ ধরার জাল প্রস্তুতকারক।
আরও পড়ুন- নতুন সংসদ ভবনের ছ’টি প্রবেশপথ, প্রতিটির আলাদা বিশেষত্ব! কী সেগুলো?
বিশ্বকর্মা প্রকল্পের মাধ্যমে কী কী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে?
এই ক্ষেত্রগুলিতে নিযুক্ত কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে এবং তাঁদের উপার্জনে সহায়তা করার জন্য তাঁদের সহজে ঋণ পেতে সাহায্য করার লক্ষ্যে এই প্রকল্প।
- এই প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বায়োমেট্রিক-ভিত্তিক পিএম বিশ্বকর্মা পোর্টাল ব্যবহার করে কমন সার্ভিসেস সেন্টারের মাধ্যমে বিনামূল্যে নিবন্ধিত করা হবে।
- তারপর তাঁদের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা শংসাপত্র এবং আইডি কার্ডের মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। মৌলিক এবং উন্নত প্রশিক্ষণের সঙ্গে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ১৫,০০০ টাকার একটি ইনসেনটিভ দেওয়া হবে। এছাড়াও প্রথম ধাপে ১ লক্ষ টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতহীন ঋণ পেতে সহায়তা করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৫% সুদের হারে, ডিজিটাল লেনদেনের জন্য অর্থদান করা হবে এবং বিপণনে সহায়তা করা হবে।
এই ইস্যুতে একটি বুকলেটও ১২টি ভারতীয় ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে। সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে ভিডিও, যা কর্মীদের নতুন প্রযুক্তির জ্ঞানকে সহায়তা করবে। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো গত মাসে বলেছিলেন যে দক্ষতা প্রশিক্ষণের জন্য ৫০০ টাকা এবং আধুনিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ১,৫০০ টাকা উপবৃত্তি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, প্রথম বছরে ৫ লক্ষ পরিবার এবং পাঁচ বছরে ৩০ লক্ষ পরিবার এতে উপকৃত হবে। বৈষ্ণো বলেন, 'এই প্রকল্প বিশ্বকর্মাদের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যও নিয়েছে।'