অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের বাইরে এলজি পলিমার্স কারখানায় গ্যাস লিক করে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। লকডাউনের পর কারখানা খুলেছিল শুক্রবারই। কর্মীরা কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়েই গ্যাস লিক করে।
এই কারখানা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং গ্যাস লিকের ঘটনায় এলাকার পাঁচটি গ্রামের ২০০০ বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিছু গ্রামবাসী পালিয়ে যান, কিছু মানুষ রাস্তার উপরেই সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকেন। ১৯৬১ সালে তৈরি হওয়া এই কারখানায় সাধারণ পলিস্টাইরিন ও উচ্চ প্রভাবশালী পলিস্টাইরিন, একসপ্যান্ডেবেল পলিস্টাইরিন ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্লাস্টিক যৌগ তৈরি হত।
ভারতের আইনে রাসায়নিক দুর্ঘটনার শিকারদের জন্য সুরক্ষার বন্দোবস্ত রয়েছে। সেই বিধিগুলি কী একবার দেখে নেওয়া যাক:
ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি যখন ঘটে সে সময়ে এ ধরনের ঘটনার অপরাধমূলক দায়-দায়িত্বের বিষয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধি ছাড়া আর কোনও আইন ছিল না।
সিবিআই সে সময়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় (অনিচ্ছাকৃত হত্যা) মামলা দায়ের করে।
পরে চার্জ গঠিত হয় ৩০৪ ক ধারায়, যে ধারা অবহেলার কারণে মৃত্যু বিষয়ক। এতে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে। ১৯৯৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে বলা হয় গ্যাস লিক যে ঘটবে এবং তাতে মানুষের মৃত্যু হবে এ সম্পর্কিত বিষয়ে অভিযুক্তদের জানা ছিল না। এর পর ফের চার্জ গঠিত হয়।
ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় ২০০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন। সরকার এর পরেই পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ এনং নির্দিষ্ট রক্ষাকবচ ও শাস্তির জন্য একগুচ্ছ আইন পাশ করে। এরকমই কিছু আইন হল-
১) ভোপাল গ্যাস লিক (দাবি সম্পর্কিত) আইন, ১৯৮৫, যাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির সঙ্গে যুক্ত বা তার দরুণ ওঠা দাবি দাওয়া মেটানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়। এই আইনের বিধি অনুসারে, এ ধরনের দাবি দ্রুত ও সমতার সঙ্গে মেটাতে হবে।
২) পরিবেশ সুরক্ষা আইন ১৯৮৬। এতে কেন্দ্রীয় সরকারকে পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ ও শিল্পসংস্থার মান স্থির করা ও তার অনুসন্ধান করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
৩) পাবলিক লায়াবিলিটি ইনশিওরেন্স আইন। এই আইন বলে বিপজ্জনক দ্রব্য নাড়াচাড়া করার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের এই বিমার মাধ্যমে রিলিফ দেওয়া যায়।
৪) ন্যাশনাল এনভায়ার্নমেন্ট অ্যাপেলেট অথরিটি আইন, ১৯৯৭, যার বলে এই অ্যাপেলেট সংস্থা কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় কোনও শিল্প, বা তৎসম্পর্কিত অপারেশন বা প্রসেসিংয়ের কাজ যাতে না চলে সে সম্পর্কিত আবেদন শুনতে পারে, বা ১৯৮৬ সালে পরিবেশ সুরক্ষা আইনের আওতায় শিল্প বা শিল্পগুলিকে নির্দিষ্ট সুরক্ষাকবচ নেওয়ার আদেশ দিতে পারে।
৫) ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল, ২০১০। পরিবেশ সুরক্ষা ও বনাঞ্চল সংরক্ষণের জন্য কার্যকরী ও দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এই ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠিত হয়।
পিআরএস লেজিসলেটিভ অনুসারে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির মত কোনও ঘটনা ঘটলে, তার বিচার হবে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে এবং তা ১৯৮৬ সালের পরিবেশ (সুরক্ষা) আইন অনুসারে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ওই আইনে বলা হয়েছে, “... এই অপরাধের জন্য সংস্থা, দায়িত্বে থাকা প্রতিটি ব্যক্তি অপরাধী বলে গণ্য হবে, যদি না সে প্রমাণ করতে পারে যে, যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে ব্যাপারে তার কোনও জ্ঞান ছিল না বা এ ধরনের অপরাধ যাতে না ঘটে তা প্রতিরোধের জন্য সে সর্বপ্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।”
ভারতে রাসায়নিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি পরিস্থিতি
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (NDMA) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক কালে সারা দেশে ১৩০টিরও বেশি বড়সড় রাসায়নিক দুর্ঘটনার খবর এসেছে, যাতে ২৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বড়ধরনের ক্ষতি হয়েছে ৫৬০ জনের।
সারা দেশের ২৫ টি রাজ্য ও তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে ৩০১টি জেলায় ১৮৬১টি বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে (Major Accident Hazard, MAH)এমন ইউনিট রয়েছে। এছাড়া হাজার হাজার নথিভুক্ত ছোটবড় কারখানা রয়েছে যেখানে বিপজ্জনক দ্রব্য নিয়ে কাজ হয় এবং নানারকম দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।