ওলেনা জেলেনস্কা কে জানেন তো? পার্থ-অর্পিতা কিংবা টাকার পাহাড় দেখে যদি তাঁকে ভুলে যান, তো মনে করিয়ে দিচ্ছি। ওলেনা জেলেনস্কা হলেন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি। ইউক্রেনীয় ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির স্ত্রী। ওলেনা কমেডি স্ক্রিপ্ট রাইটার। জনসমক্ষে আসতে এক সময়ে একেবারেই অনিচ্ছুক ছিলেন। যদিও অপরূপ সুন্দরী এই রুশ তনয়া। কিন্তু তাঁর সৌন্দর্য কিংবা স্ক্রিপ্ট এ সব টপকে গিয়ে ওলেনা এখন ইউক্রেনের শৌর্যের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। যুদ্ধের মধ্যেই এ মাসের ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ আলো করেছেন তিনি।
যদিও ভোগের সেই ছবি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে ওলেনা মোটেই ভোগ্য হননি, ছবি থেকে এক লড়াকু চরিত্রের সৌন্দর্য যেন ছিটকে বেরিয়ে আসছে। নামি ফোটোগ্রাফার অ্যানি লেইবোভিটজের হাতের ম্যাজিক রয়েছে যে! ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের পাথরের সিঁড়িতে বসে রয়েছেন। যেন মনে হতে পারে প্রেসিডেন্টের বাড়ি তিনি পাহারা দিচ্ছেন, আর প্রেসিডেন্টের বাড়ি পাহারায় থাকা মানেই তো দেশ পাহারায়--।
পোশাক সাধারণ, কালো প্যান্ট ও সাদা জামা। মেক-আপ নেই, ছবিতে ফোটোশপের কোনও বালাই নেই। না, যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি, দেশ পর্যুদস্ত, তখন মেক-আপের বালাই থাকবে কেন! তাঁর ঠিক পিছনে দেখা যাচ্ছে-- প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের দুটি স্তম্ভের মাঝে ঢোকানো রয়েছে সম্ভবত বালির বস্তা। যেন এই বাড়ি এক দুর্গ, তিনি সম্মুখে সদা জাগ্রত যোদ্ধা। তাকিয়ে রয়েছেন ওলেনা ক্যামেরার দিকে, একেবারে সরাসরি, চোখে চোখ রেখে। শত্রুর চোখে চোখে রেখে লড়াইয়ের বার্তা দিচ্ছেন যেন।
মুখে একটু ক্লান্তিও। অতন্ত্র পাহারায় থাকলে তো ক্লান্তি আসবেই, কিন্তু ভেঙে পড়ছেন না—বোঝাচ্ছে ছবি? ভোগ এ ছবির নাম দিয়েছে-- পোর্ট্রেট অফ ব্রেভারি। বীরত্বের প্রতিকৃতি। ভোগের এই সংখ্যার ভিতরে প্রেসিডেন্টও রয়েছেন। যুগলের পোজ। এক জন যেন অন্যের ভরসাস্থল। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন রয়েছে সর্বত্র ভূমিকা হিসেবে, প্রেক্ষাপট হয়ে, উপসংহারও। তাঁরা দু’জন শত্রুর সংহারের মাঝে যেন সামান্য বিশ্রামে। ভোগ ম্যাগাজিনে।
আরও পড়ুন- তাইওয়ান নিয়ে হুমকি চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের, সুর চড়ালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনও
কিন্তু দেশ যখন আক্রান্ত, তখন কি এমন ছবির ঝলমলানো মানায়? এখন তো উদয়াস্ত ব্যস্ততা, দেশ বাঁচানোর হাজার কাজ, তার মধ্যে কি ভাবে ফটোশুটে মেতে ওঠা সম্ভব! যুদ্ধ এবং যুদ্ধের আবহ তার মানে পণ্য, এটা বিসদৃশ নয় কি! বিতর্কের ঝড় উঠেছে এই প্রশ্নেই। আমেরিকার হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টিভের সদস্য লরেন বোয়েবার বলেছেন, যখন আমরা ইউক্রেনকে ৬০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য পাঠাচ্ছি, তখন জেলেনস্কি ভোগ ম্যাগাজিনে ফোটোশুট করছেন।…
সোশ্যাল মিডিয়ার এমন টোনের আক্রমণের সুনামি চলছে। উল্টো কথাও রয়েছে অবশ্য। যা হোক, ভোগে দু’জনের শুধু ছবিই ছাপা হয়নি, সাক্ষাৎকারও ছাপা হয়েছে। যেখানে যুদ্ধের প্রেক্ষিতের নিজেদের জীবনের কথাবার্তা বলেছেন তাঁরা। সন্তানদের ছাড়া থাকার অভিজ্ঞতা বলেছেন। পত্রিকার কিয়েভের টিম এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে। আর রুশ হামলা? পেরিয়ে গিয়েছে দেড়শো দিন। মারা গিয়েছেন হাজারো ইউক্রেনবাসী।
Read full story in English