Advertisment

Explained: যার নামে একসময় থরথর করে কাঁপত পঞ্জাব, কে পরমজিৎ সিং পাঞ্জওয়ার?

একসময়ের সরকারি ব্যাংককর্মী আচমকাই হয়ে উঠল মূর্তিমান বিভীষিকা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Paramjit Singh Panjwar

পরমজিৎ সিং পাঞ্জওয়ার, ভারতের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধী এবং জঙ্গি সংগঠন খালিস্তান কমান্ডো ফোর্স (কেসিএফ) এর প্রধান, শনিবার (৬ মে) পাকিস্তানের লাহোরে নিহত হয়েছে। কট্টরপন্থী শিখ সংগঠন দল খালসার নেতা কানওয়ার পাল সিং নিশ্চিত করেছে পাঞ্জওয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি। কানওয়ার পাল জানিয়েছে, 'আমাদের তথ্য অনুযায়ী, পাঞ্জওয়ার মর্নিং ওয়াকে যাচ্ছিল। তখন দুই বন্দুকধারী তাকে গুলি করে হত্যা করে। পাঞ্জওয়ারের রক্ষী পাকিস্তান সরকার যাকে নিয়োগ করেছিল, সে-ও পালটা বন্দুকধারীদের ওপর গুলি চালায়। গুলিতে বন্দুকধারীদের একজন প্রাণ হারিয়েছে। অন্যজন আহত হয়েছে।'

Advertisment

কে পরমজিৎ সিং পাঞ্জওয়ার?
পরমজিৎ সিং পাঞ্জওয়ার জন্ম ১৯৬০ সালে পঞ্জাবের তরন তারনের পাঞ্জওয়ার গ্রামে। ১৯৮৬ সালে খালিস্তান কমান্ডো বাহিনীতে যোগদানের আগে সোহলে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকে কাজ করত পরমজিৎ সিং। ১৯৮৬ সালে পরমজিৎ খালিস্তান কমান্ডো ফোর্সে যোগ দেয়। যার কমান্ডার ছিল পাঞ্জওয়ারের খুড়তুতো ভাই তথা প্রাক্তন পুলিশকর্মী লাভ সিং। তার প্রভাব পাঞ্জওয়ারের ওপর পড়েছিল।

জেনারেল বৈদ্য হত্যায় জড়িত সংগঠন
কেসিএফ ১৯৮৬ সালে মনবীর সিং চাহেরু তৈরি করেছিল। এক স্বাধীন খালিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি হয়েছিল এই সংগঠন। এই জঙ্গি সংগঠন ব্যাংক ডাকাতি এবং অপহরণ করে মুক্তিপণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেছিল। এই অর্থ ব্যবহার করা হয়েছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র কিনতে। অপারেশন ব্লু স্টারের সময়কার সেনাপ্রধান জেনারেল অরুণ বৈদ্যকে হত্যা-সহ ভারতের মাটিতে বিভিন্ন জঙ্গি হামলার জন্য এই খালিস্তান কমান্ডো ফোর্সই দায়ী ছিল।

পাঞ্জওয়ারের ভাই দায়িত্বে
চাহেরুর গ্রেফতারের পর, লাভ সিং ওরফে সুখদেব সিং বা সুখা সিপাহি এই সংগঠনের দায়িত্ব নেয়। ১৯৯০-এর দশকে লাভ সিং-এর মৃত্যুর পর, খালিস্তান কমান্ডো ফোর্স একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যার মধ্যে একটির নেতৃত্বে ছিল পাঞ্জওয়ার। এক সময় পাঞ্জওয়ার ছিল ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের মাঝা বেল্টের সন্ত্রাস। নিরাপত্তা বাহিনী খালিস্তানিদের ওপর ধরপাকড় তীব্র করার সঙ্গে সঙ্গেই পাঞ্জওয়ার পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। আর, তখন থেকে সে সেখানেই বসবাস করছিল। ভারত সরকার বারবার পাকিস্তানের কাছে পাঞ্জওয়ারকে ফেরত চেয়েছে। জঙ্গিদের যে তালিকা পাকিস্তানকে দিয়েছে, তার মধ্যে পাঞ্জওয়ারেরও নাম ছিল।

যাবতীয় দুষ্কর্মের মাথা
পাঞ্জওয়ার আন্তঃসীমান্ত হেরোইন পাচারের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে খালিস্তান কমান্ডো ফোর্সকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, 'পাঞ্জওয়ার লাগাতার পাকিস্তানে পঞ্জাবের যুবকদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছিল। সে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করত। পরবর্তীকালে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) ওপর হামলা আর্থিক সংস্থাকে বিপর্যস্ত করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সে কাজ করছিল। ভারতে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশে সে সাহায্য করত।'

ভারতের বিরুদ্ধে প্রচারকারী
এর পাশাপাশি, ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের উসকানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে রেডিও পাকিস্তানে অত্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী অনুষ্ঠান সে সম্প্রচার করত। শুধু তাই নয়, মাদক চোরাচালানেও পাঞ্জওয়ার সক্রিয় ছিল। চোরাকারবারি এবং জঙ্গিদের মধ্যে যোগাযোগের সে ছিল অন্যতম মাধ্যম। পঞ্জাবে মাদক ব্যবসার বাড়বাড়ন্তে পাঞ্জওয়ার জড়িত ছিল। জালনোট পাচারের কাজেও সে যুক্ত ছিল।

আরও পড়ুন- কেন দিনের পর দিন মণিপুরে খুনখারাপি লেগেই থাকে, কী এর ইতিহাস?

স্ত্রী-সন্তান থাকে বিদেশে
১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত, মাত্র একবছরে পাঞ্জওয়ারের বিরুদ্ধে ৭টি খুন, ২টি জঙ্গি ও বিশৃঙ্খলামূলক কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (TADA)-র অধীনে এফআইআর নথিবদ্ধ হয়েছিল। তার স্ত্রী ও সন্তান জার্মানিতে বসবাস করে বলেই তদন্তকারীদের অনুমান। ২০১১ সালে পঞ্জাব পুলিশ জানতে পেরেছিল যে পাঞ্জওয়ারের পরিবার ভারতের কয়েকজনের সাহায্যে জাল পাসপোর্ট বানিয়েছিল। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।

Punjab Khalistani Death
Advertisment