আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। এই মুহুর্তে বাংলায় শাসক দল তৃণমূল ছাড়া প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এবারের নির্বাচনে মমতার হ্যাটট্রিক জয় আটকাতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি সিটের মধ্যে ১৮টি সিটে জিতে বাংলায় গেরুয়া শিবিরের দাপট কিছুটা হলেও দেখিয়েছে তারা। কিন্তু সমস্যা এক জায়গাতেই। নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে তৃণমূলের মুখ তাদের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিজেপির হয়ে বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন কে?
জাতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদী কিংবা অমিত শাহরা সেই শক্ত স্থান দখল করলেও তাঁদের ছত্রছায়ায় থেকে বাংলার আসন জয় সম্ভব নয় এ কথা পদ্মশিবির জানে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা সরকারের সঙ্গে পাল্লা দিতে চাই এক শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব। রাজ্যে ঘাসফুলের ১০ বছরের শিকড় টলাতে তাই নিজেকেই "বিজেপির মুখ" করতে চাইছেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথা বর্ষীয়াণ বিজেপি নেতা তথাগত রায়। সম্প্রতি, "নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক স্রোতে ফিরে আসার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন তিনি।"
আরও পড়ুন, ঘরের বিদ্রোহ সব থেকে বড় বিপদ হতে পারে তৃণমূল কংগ্রেসের
বর্তমানে রাজ্যে পদ্মশিবিরের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু একদা মমতা ঘনিষ্ট নেতা মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগদান এবং কাজের দায়িত্ব পাওয়া থেকেই গেরুয়া শিবিরের অন্দরে দেখা যায় ফাটল। বিধানসভা নির্বাচনে দলের নেতাদের কী কী ভূমিকা দেওয়া হবে সে বিষয়েও এই দুই নেতার মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। সেই বিরোধের আঁচ এতটাই যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাধ্য হয়ে প্রবেশ করেন গোটা বিষয়টিতে। দিলীপ ঘোষের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, অন্যদিকে মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর কলকাতার বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।
বিজেপির অভ্যন্তরে মতানৈক্য বৃদ্ধির অর্থ হল তৃণমূলের গোড়া শক্ত হওয়া, যা অবশ্য হতে দিতে চান না দিলীপ-মুকুল কেউই। অবশেষে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এসে সমঝোতায় আসেন দুই নেতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে সদাসর্বদা ক্ষুরধার আক্রমণ শানান দিলীপ ঘোষই কি তবে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন? মেদিনীপুরের এই সাংসদ রাজনৈতিক মহলে জনপ্রিয় হলেও বাঙালি বুদ্ধিজীবী কিংবা মধ্যবিত্তদের মধ্যে এখনও সেই গ্রহণযোগ্যতা পাননি যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আসনের লড়াইকে জোরদার করবে।
আরও পড়ুন, ‘নেতার নির্দেশ শুনতে হবে না, নিজের যা ঠিক মনে হবে তাই করুন’
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হতে গেলে বাঙালির মননে তো প্রবেশ করতেই হবে। যেমনটা করেছিলেন বামফ্রন্ট নেতা জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য এবং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিজেপি শিবিরে সেই 'মুখ'-এরই যেন অভাব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দিয়ে বাংলার মসনদ দখল করবে সেই প্রার্থী খুঁজতে কোথাও যেন হিমশিম খাচ্ছে পদ্ম শিবির।
সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় রামকৃষ্ণ মঠ এবং মিশনের সন্ন্যাসী স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে এনেছে বিজেপি। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে পাস করে নিল রতন সরকার মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন স্বামী কৃপাকরানন্দ। বর্তমানে তিনি বেনারস হাসপাতালে কর্মরত। মনে হতে পারে হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মোদী ব্রিগেড? ধরে নেওয়া যেতে পারে এটা 'উত্তরপ্রদেশ মডেল'। যেভাবে যোগী আদিত্যনাথকে দিয়ে উত্তরপ্রদেশের মসনদ জয় করেছে বিজেপি সেই একই মডেলে বাংলায় জয় পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা।
আরও পড়ুন, ধনকড় কি রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হবেন?
এদিকে, এরই মধ্যে মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ের বাংলার রাজনীতিতে 'প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছে' ভাবিয়ে তুলছে রাজনৈতিক মহলকে। তিনি যে কেবল রাজনীতিতে ফিরতে চেয়েছেন তাই-ই নন,দল চাইলে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার আশাও প্রকাশ করেছেন একদা বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
কিন্তু আদৌ তা মেনে নেওয়া হবে কি না, সে জলের গভীরতা মাপবে দল এটাই স্বাভাবিক। বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে লড়াইয়ের মঞ্চ ততই জমে উঠছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের বিরুদ্ধে কোন শক্তি দিয়ে আক্রমণ শানায় রাজ্য বিজেপি সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন