Advertisment

পেগাসাসে তদন্ত করছে রাজ্য সরকার, কমিশনের ক্ষমতা কী, এক্তিয়ার কতটা?

West Bengal probes Pegasus: পেগাসাসে লোকুর কমিশনের ভবিষ্যৎ কী, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পেগাসাসে লোকুর কমিশনের ভবিষ্যৎ কী, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন

পেগাসাসে নাভিশ্বাস। তুমুল হইচই। মুখ্যমন্ত্রী পেগাসাসকে বলেছেন ডেঞ্জারাস, ফেরোসাস। এবং এই ইজরায়েলি স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে আড়ি পাতায় রাজ্য তদন্ত কমিশন গড়েছে। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যে জেহাদ ঘোষণা করেছেন মমতা, সেই পথে তিনি এই ভাবে আরও এক পা এগোলেও, কমিশনে কাজের কাজ কিছু হবে কি, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ, অনেকেই বাইনোকুলার দিয়েও এর সুফল কিছু দেখতে পাচ্ছেন না।

Advertisment

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মত, ২০২৪-এর ভোটে যেহেতু বিজেপির বিরুদ্ধে পেগাসাসকে প্রয়োজন, তাই নির্বিষ বা নখদাঁতহীন হলেও এমন একটা পদক্ষেপ না নিলে মোটেই চাকা ঘুরবে না…! দিল্লিতে গিয়েও মমতা দাবি করেছেন, পেগাসাসে মোদীজির উচিত সর্বদল বৈঠক করা। তদুপরি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা স্পষ্ট করে, একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাইছেন, যা করা উচিত ছিল কেন্দ্রের, তা তিনি করে দেখাচ্ছেন। এগিয়ে বাংলা। কিন্তু কমিশন আদৌ কত দূর এগোতে পারবে, তাঁর এক্তিয়ার কি ধোঁয়ায় ঢাকা? এ সবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মাথা চুলকোচ্ছেন।

কমিশন, সংঘাত

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মদন বি লোকুর, হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য-- দুইয়ে মিলে কমিশন। ১৯৫২ সালের কমিশন এনকোয়ারি আইন অনুযায়ী এর গঠন। দেশের যে কোনও অংশ থেকে কাউকে ডেকে পাঠানোর ক্ষমতা রয়েছে এমন কমিশনের। এটি যে কোনও ধরনের নথি চেয়ে পাঠাতেও পারে যে কোনও আদালত বা সংস্থার কাছ থেকে। ওই আইনের ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী তদন্তের স্বার্থে কোনও ধরনের ছানবিন বা তথ্য-তল্লাশ কমিশন করতে পারে। এখন কোনও ঘটনার তদন্তে যদি কেন্দ্র এমন কমিশন গঠন করে আগে, তা হলে রাজ্য ওই একই ঘটনায় কমিশন তৈরি করতে আইনত পারে না।

কিন্তু যদি রাজ্য আগে কোনও বিষয়ে তা গঠন করে, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র ওই একই বিষয় কমিশন তৈরি করতে পারে। তবে, যদি ওই বিষয়টিতে অন্তত দুটি রাজ্যের পরিসরে তদন্ত চালানো প্রয়োজন, এমন যদি মনে করা হয়, তা হলেই। একই বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের তদন্ত কমিশন গড়ায় দু'পক্ষের মধ্যে সংঘাত দেখা দিয়েছে অতীতে। যেমন ২০০২ সাল, নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী (এক ঝলকে নিশ্চয়ই গোধরা-কাণ্ড এবং গোধরা পরবর্তী হিংসা চোখের সামনে!)। মোদী সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জি টি নানাবতী এবং এ এইচ মেহতাকে নিয়ে গোধরায় তদন্ত কমিশন গঠন করল। যে কমিশন গুজরাত সরকারকে ক্লিনচিট দিয়ে দিয়েছিল রিপোর্টে।

আরও পড়ুন পেগাসাসের জের, ভারতের নজরদারি আইন ও গোপনীয়তায় নজর

এর পর, ২০০৪ সাল, লালুপ্রসাদ যাদব, তৎকালীন ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী, প্রাক্তন বিচারপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়-কমিশন গঠন করেন ওই গোধরায়। রাজ্যের কমিশনের বিরুদ্ধে গেল কেন্দ্রের কমিশনের রিপোর্ট। হইচই হল, স্বাভাবিক ভাবেই, এর ফলে। কিন্তু বন্দ্যোপাধ্যায়-কমিশন গঠনকেই বেআইনি বলে দিল গুজরাত হাইকোর্ট। যখন রাজ্যের কমিশন এ নিয়ে তদন্ত করছে, তা হলে কেন্দ্রের কমিশন তৈরির কী প্রয়োজন? এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছল হাইকোর্ট। যদিও, ১৯৫২ সালের ওই আইনের ধারা ২(এ)-তে দেখা যাচ্ছে, সপ্তম তফসিল অনুযায়ী কেন্দ্রের তালিকা, রাজ্যের তালিকা, কিংবা যৌথ তালিকায় থাকা যে কোনও বিষয়ে কোনও ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকার তদন্ত কমিশন গঠন করতে পারে।

আরও পড়ুন ব্র্যান্ড মোদী বাঁচাতেই কি খোলনলচে বদল মন্ত্রিসভার

টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, ওয়্যারলেস এবং সম্প্রচার এবং অন্যান্য যোগাযোগ কেন্দ্রের তালিকার ৩১ নম্বরে। ফলে, পেগাসাস নিয়ে রাজ্যের তদন্ত কমিশন নিয়ে বিতর্ক মহিরুহ। এই ধরনের কমিশনের রিপোর্ট সাধারণত বিধানসভা বা সংসদে পেশ ( কারা গঠন করছে, সেই বিচারে) করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পেগাসাস কমিশনকে ছ'সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। রিপোর্টের ভিত্তিতে কোনও প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নেওয়া গেলেও, তা আদালতে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা যায়।

আপাতত, পেগাসাসে লোকুর কমিশনের ভবিষ্যৎ কী, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন, উত্তরটা জানা কি না, তা হাতড়ানো যেতে পারে!

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Explained Project pegasus
Advertisment