পৃথিবীর মহাসাগরের রং গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছে। এমনটাই বলছে নতুন গবেষণা। পৃথিবীতে ৫৬ শতাংশেরও বেশি মহাসাগর। যা গ্রহের মোট ভূমির চেয়েও বেশি। জুলাই মাসে নেচার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, সমীক্ষায় 'সামুদ্রিক বাস্তুবিদ্যার সূচকে বৈশ্বিক জলবায়ু-পরিবর্তনের প্রবণতা শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে'। এই সমীক্ষা করেছে ব্রিটেন-ভিত্তিক ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টারের বিবি ক্যাল এবং স্টেফানি হেনসন, ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির (ইউএসএ) কেলসি বিসন, ইউনিভার্সিটি অফ মেইন (ইউএসএ) এর ইমানুয়েল বস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউটের (প্রযুক্তি) স্টেফানি ডাটকিউইচ।
মহাসাগরের রঙের পরিবর্তন সামুদ্রিক জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে না
যদিও মহাসাগরের রঙের পরিবর্তন সামুদ্রিক জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে না, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে সম্পূর্ণরূপে ভারসাম্যের বাইরে চলে যেতে পারে। এতে সামুদ্রিক জীবন এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। এই সমীক্ষার প্রধান বিবি ক্যাল, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন যে এই বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনগুলো উত্পাদনকে ঠিক কতটা প্রভাবিত করতে পারে। যার জেরে সমুদ্রের কার্বন সঞ্চয়, মৎস্য চাষের জন্য খাদ্য সরবরাহ প্রভাবিত হতে পারে।
সমুদ্রের রং নীল কেন?
গবেষকদের প্রতিবেদন অনুসারে, 'বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে সমুদ্রগুলি একটি কারণে নীল বা নেভি ব্লু দেখায়। তা হল আলো শোষণ এবং বিচ্ছুরণ-এর কারণে। যখন সূর্যালোক গভীর এবং স্বচ্ছ জলের ওপর পড়ে, তখন লাল-হলুদ এবং সবুজের মতো দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রংগুলো জলের অণু দ্বারা শোষিত হয়। তখনই নীল এবং বেগুনি, যার অনেক কম তরঙ্গদৈর্ঘ্য রয়েছে, ফিরে প্রতিফলিত হয়। যখন সূর্যালোক সমুদ্রে আঘাত করে, তখন কিছু আলো সরাসরি প্রতিফলিত হয় তবে এর বেশিরভাগই সমুদ্রের পৃষ্ঠে প্রবেশ করে এবং জলের অণুগুলোকে চিকচিকে দেখায়। আর, লাল, কমলা, হলুদ এবং সবুজ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষিত হয় যার জেরে আমরা যে অবশিষ্ট আলো দেখি তা সংক্ষিপ্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ব্লু এবং ভায়োলেটের সমন্বয়ে তৈরি।'
আরও পড়ুন- মহাকাশযান কোনও দেশের ওপর ভেঙে পড়লে, তার ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে?
সমুদ্রের রং কখন বদলাতে পারে
সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, যখন জল গভীর বা পরিষ্কার না হয়, তখন একটি মহাসাগর ভিন্ন রঙের হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আর্জেন্টিনার উপকূলরেখা বরাবর, যেখানে প্রধান নদীগুলো আটলান্টিক মহাসাগরে মিলিত হয়েছে, নদীগুলো থেকে মৃত পাতা এবং পলির কারণে সমুদ্রতে একটি বাদামি আভা ছড়ায়। বিশ্বের অন্যান্য অংশে, মহাসাগরগুলো সবুজ দেখায়। যা জলের ওপরের পৃষ্ঠে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের অস্তিত্বের কারণে ঘটে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন হল আণুবীক্ষণিক সামুদ্রিক শৈবাল, যাতে সবুজ রঙের রঙ্গক ক্লোরোফিল থাকে। রঙ্গক ওই শৈবালগুলোকে সূর্যালোক শোষণ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, ওই সব শৈবাল বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড সংগ্রহ করে। তা শর্করাতে রূপান্তরিত করে।