হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর শনিবার (২০ আগস্ট) হিমাচল প্রদেশের বিভিন্ন অংশে প্রবল বর্ষণ এবং হড়পা বানের কারণে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই বন্যায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যেখানে লোকেরা ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকা পড়েছেন বলে জানা গেছে, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর দলগুলো ত্রাণ ও উদ্ধারকাজের জন্য সেসব জায়গায় পৌঁছে গেছেন।
হড়পা বান কী, এবং কেন তা সাধারণ বন্যা থেকে আলাদা?
দিনে নানা পর্যায়ে বা বছরের নির্দিষ্ট ঋতুতে অতিরিক্ত বা অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে জল জমে যেতে পারে। তা থেকেও হতে পারে বন্যা। হড়পা বানের পরিস্থিতি বলতে বোঝায়, যেটা খুব কম সময়ের মধ্যে হয়। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন আবহাওয়া সংস্থা ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস অনুযায়ী, বৃষ্টিপাতের ফলে ৬ ঘণ্টারও কম সময়ে বন্যার সৃষ্টি হলে তাকে হড়পা বান বলে। তবে, বৃষ্টিপাত ছাড়াও অন্যান্য কারণে হড়পা বান হতে পারে। যেমন, জল বাঁধের বাইরে যদি চলে যায়।
ভারতে, হড়পা বানের বিষয়টি প্রায়ই মেঘে বিস্ফোরণের জন্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ, অল্প সময়ের মধ্যে হঠাৎ এবং তীব্র বৃষ্টিপাত। হিমালয় সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে আবার হিমবাহের গলনের ফলেও তৈরি হওয়া হিমবাহের হ্রদের জল উপচে পড়ে বন্যা হয়। গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা বাড়ছে।
ব্রিটেনের জাতীয় আবহাওয়া দফতর মেট অফিসের মতে, যেখানে সরু এবং খাড়া নদী বেশি, সাধারণত সেখানেই হড়পা বান হয়। কারণ, এই অঞ্চলে জল দ্রুত প্রবাহিত হয়। এই বন্যা ছোট নদীর কাছাকাছি কোনও শহরে ঘটতে পারে। কারণ, রাস্তা এবং কংক্রিটের মতো শক্ত ভূপৃষ্ঠ মাটিতে জল শোষণ করতে দেয় না।
আরও পড়ুন- ‘৫ জনকে মেরেছি, আরও মারব’, পেহলু খান হত্যা নিয়ে বিস্ফোরক প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক
বন্যা এবং হড়পা বন্যা কতটা সাধারণ ব্যাপার?
আসামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পরে ভারতই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ এবং বন্যার কারণে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর এক-পঞ্চমাংশ ঘটে ভারতেই। চেন্নাই এবং মুম্বইয়ের মতো শহরেও হড়পা বান দেখা গেছে। উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলে আবার নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণেও হড়পা বান হয়ে থাকে।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যা পরিস্থিতি এত ঘন ঘন ঘটার কারণ, মোট ভারতীয় বৃষ্টিপাতের প্রায় ৭৫ শতাংশ চার মাসের সংক্ষিপ্ত বর্ষা মরশুমেই (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) হয়। ফলে, নদীগুলো এই সব মাসে ভরা থাকে। সেই জল ছাপিয়ে বন্যা হয়। জাতীয় বন্যা কমিশনের তথ্য অনুসারে দেশের প্রায় ৪ কোটি হেক্টর জমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বছরে গড়ে ১ কোটি ৮৬ লক্ষ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভবিষ্যতে দাবানলের পরে হড়পা বান আসতে পারে। কারণ, দাবানল বন এবং অন্যান্য গাছপালা ধ্বংস করে দেয়। ফলে মাটি দুর্বল হয়ে যায়। ফলে জল সহজেই মাটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কায় কার্যত সিলমোহর দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ফিজিক্যাল সায়েন্সেস ল্যাবের আবহাওয়াবিদ অ্যান্ড্রু হোয়েল জানিয়েছেন, 'যদি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে জল জমিতে আর আগের মতো শোষিত হয় না।'
আবার ভারতীয় হিমবিজ্ঞানী সৈয়দ ইকবাল হাসনাইন, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ লিখেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার একটি উপায় হল পাহাড়ি এলাকায় মাটিতে নজরদারি করা। পাহাড়ি অঞ্চলে বাস্তুসংস্থানের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা। আর দরকার ক্ষতির পরিমাণ কমানো।
Read full story in English