কিনজাল ক্ষেপণাস্ত্র। ইউক্রেন হামলায় যে ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়া প্রথম ব্যবহার করেছে। যে ঘটনা পুতিনদের কাছে স্মরণীয়, আর যুদ্ধবিরোধী মানুষের কাছে তা উদ্বেগের, ক্ষোভের। কিনজাল ক্ষেপণাস্ত্রটি হাইপারসনিক। রয়েছে এর তীব্র মারণ গুণ। সব মিলিয়ে এটি কী বস্তু, সে ব্যাপারে তৈরি হয়েছে আগ্রহ। আমরা তা-ই নিরসনের চেষ্টা করব।
হাইপারসনিক মিসাইল কী?
প্রথমে হাইপারসনিক ব্যাপারটা কী, খায় না মাথায় মাখে, সে সম্পর্কে কিছু বলা যেতে পারে। যদি কোনও কিছুর গতিবেগ শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি হয়, ঘণ্টায় ৬,১৭৪ কিলোমিটার (৩,৮৩৬ মাইল/ঘণ্টা) তা হলে তাকে হাইপারসনিক বলা হবে। হাইপারসনিক মিসাইলটা তা হলে কী রকম? বোঝাই যাচ্ছে, দুরন্ত বেগে লক্ষ্যে গিয়ে আছড়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে এই মিসাইল। না, ব্যালেস্টিক মিসাইলের মতো নয় এটি। ব্যালেস্টিক মিসাইল অনেকটা আকাশে উঠে তার পর গিয়ে লক্ষ্যে আছড়ে পড়ে, যে গতিপথের আকৃতি হয়ে ওঠে অর্ধেক ডিমের মতো। ওঠার সময় গতিবেগ ১৫ হাজার মাইল প্রতি ঘণ্টায় থাকে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল চিরে উঠে যায় মহাশূন্যে, আর যখন সে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করছে লক্ষ্যে আঘাত করতে, তখন তার গতি অনেক কমে হয়ে যায়-- প্রতি ঘণ্টায় ২ হাজার মাইল। কিন্তু হাইপারসনিক মিসাইল বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়েই যায়, এর পথ অনেক নিচুতে। ইঞ্জিনের ক্যারিশমায় সে গিয়ে আঘাত করতে পারে লক্ষ্যে।
দু'ধরনের হাইপারসনিক অস্ত্র রয়েছে। এক, হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল, এবং দুই, হাইপারসনিক গ্লাইড ভেইক্যল বা এইচজিভি। এইচজিভি ছোড়া হয় রকেটের মাধ্যমে। আর হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ছোড়ার জন্য ব্যবহার করা হয়-- স্ক্র্যামজেট। বায়ুমণ্ডলের ভিতর দিয়ে প্রচণ্ড বেগে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই ক্র্যামজেট ইঞ্জিনেরই। বলা যেতে পারে, ক্যারিশমাটিক ক্র্যামজেট।
ছুটে আসার সময় হাইপারসনিক মিসাইল কি চিহ্নিত করা যায়?
এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট বলছে, হাইপারসনিক মিসাইল চিহ্নিত করে ধ্বংস করা সহজ নয়। মিসাইল যে ছুটে আসছে, সেটা চিহ্নিত করতে করতেই অনেক দেরি হয়ে যায়। বা লক্ষ্যের কাছাকাছি চলে এলে একে বোঝা যায়, কিন্তু তখন মিসাইল ধ্বংস করার আগেই যা হওয়ার হয়ে যায়। রিপোর্ট বলছে, আমেরিকার কাছে যে মিসাইল প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে, সেটি দ্রুত এই হাইপারসনিক মিসাইলের গতিপথ বুঝতে পেরে, ব্যবস্থাও নিতে পারে। কিন্তু বহু দেশের কাছেই তেমন শক্তিধর অ্যান্টি মিসাইল সিস্টেম এখনও নেই। কিনজাল বা ড্যাগার যে তাদের কাছে রয়েছে, সে খবর রাশিয়া ঘোষণা করে ২০১৮ সালের মার্চে। চিনের কাছেও এই সিস্টেম রয়েছে। তারা দু'বার এটির ব্যবহার করেছে, যদিও তা পরীক্ষামূলক। ২০২১-এর অগস্টে তাদের ছোড়া হাইপারসনিক মিসাইল পৃথিবী ঘুরে লক্ষ্যের খুব কাছে এসে পড়েছে। ২০১৮-র জুলাইয়ে মিগ-৩১ থেকে রাশিয়ার কিনজাল প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে ছোড়া হয়, ৫০০ মাইল দূরের লক্ষ্যে।
হাইপারসনিক মিসাইল কি ভারতের হাতে আছে?
রিপোর্ট বলছে, ভারত দেশীয় প্রযুক্তিতে হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি করেছে। হাইপারসনিক টেকনোলজি ডেমনসট্রেটর ভেইক্যল প্রোগ্রামে চলছে এই কাজ। সফল পরীক্ষাও হয়েছে এর, ২০১৯-এর জুন এবং ২০২০-র সেপ্টেম্বরে।
Read story in English