গত একবছরে পেট্রোল, ডিজেল এবং অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার সমালোচনার মুখে পড়েছে। গত সপ্তাহে এবং অতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার কর কমিয়ে পেট্রোপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে পারবে না। কারণ, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ অয়েল বন্ড ছেড়েছিল। তার জন্য সরকারকে অর্থ দিতে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল, পেট্রোলিয়াম পণ্যের কর আরোপের ক্ষেত্রে অয়েল বন্ডগুলি সরকারের হাত কতটা বেঁধে রাখে?
জ্বালানির দামে ট্যাক্সের পরিমাণ কত?
অভ্যন্তরীণ খুচরা মূল্যের দুটি ভাগ আছে। একটি, অপরিশোধিত তেলের দাম। অপরটি, এই মৌলিক মূল্যের ওপর ধার্য কর। যা একসঙ্গে জ্বালানির দাম নির্ধারণ করে। পণ্যভেদে করও বদলায়। যেমন, একলিটার পেট্রোলের জন্য মোট মূল্যের ৫০ শতাংশ এবং ডিজেলের জন্য মোট খুচরো মূল্যের ৪৪ শতাংশই কর।
অর্থমন্ত্রী কী বলছেন?
তিনি দুটি দিক নির্দেশ করেছেন। একদিকে, তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন। অন্যদিক করের ক্ষেত্রে, তিনি ইউপিএ আমলে অয়েল বন্ড বাজারে ছাড়ার বিষয়টিকে দোষারোপ করেছেন। রাজ্যসভায় তিনি বলেছেন, বন্ডগুলো ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তাই বন্ড গ্রহীতাদের আগামী পাঁচ বছরের জন্য অর্থ দিতে হবে। এই অর্থ দেওয়া হবে করদাতাদের থেকেই। এক দশকেরও বেশি আগে এই অয়েল বন্ড চলছে। সরকারের হয়ে বন্ড গ্রহীতাদের অর্থ দিয়ে যাচ্ছেন করদাতারা।
আরও পড়ুন-সোনিয়ার বাড়িতে কংগ্রেসের নির্বাচনী বৈঠক, জল্পনা উসকে হাজির প্রশান্ত কিশোর
অয়েল বন্ড কি? কীভাবে তা ইস্যু হয়?
অতীতে দেশীয় বাজারে জ্বালানির দাম বাড়লে, সরকার হামেশাই তেল বিপণনকারী সংস্থাগুলো দাম কমাতে বলত। কিন্তু, তেল সংস্থাগুলো দাম না-বাড়ালে লাভ করতে পারবে না। সেই জন্য সরকার অন্যভাবে দাম শোধ করবে বলে জানায়। কিন্তু, তেল কোম্পানিগুলোকে অর্থ দেওয়ার জন্য সরকার একই ব্যক্তির ওপর একাধিকবার কর চাপাতে পারে না। সেজন্যই অয়েল বন্ড বাজারে ছাড়া হয়। অয়েল বন্ড হল সরকারের দেওয়া একটি প্রতিশ্রুতি। যা অর্থের বিনিময়ে ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে। এই অর্থে তেল সংস্থাগুলোর ঘাটতি পূরণ হয়েছে। তারা বেশি দামে জনগণকে তেল বিক্রি করছে না। বদলে, তেল সংস্থাগুলো সরকারের থেকে ১০ বছরে হাজার কোটি টাকা পেয়েছে।
একবারে এত টাকা না-থাকায় শর্ত অনুযায়ী, বন্ড মেয়াদ পরিপূর্ণ না-করা পর্যন্ত, সরকার প্রতিবছর ৪০ কোটি টাকা করে তেল বিপণনকারী সংস্থাগুলোকে অর্থ দেবে। এতে তিনটে স্বার্থ পরিপূর্ণ হয়েছে। এক, তেল সংস্থাগুলোকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি। বাজেটে ঘাটতি হয়নি। আর, ক্রেতাদের ভর্তুকি তুলে দিতে হয়নি। তবে, মনমোহন সিংয়ের সরকারই প্রথম না। অতীতে বহু সরকারই অয়েল বন্ড বাজারে ছেড়েছে। নরেন্দ্র মোদী সরকার ২০১৪ সালে যখন ক্ষমতায় এল, তখন দেখা যায় সরকারকে ২০১৫ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা বন্ডের ক্রেতাদের দিতে হবে। তাঁরা সুদ পাচ্ছেন। আর, মেয়াদ শেষে বন্ডের অর্থ ফেরত পাবেন।
Read story in English