Advertisment

Explained: পরিযায়ীদের জন্য চালু হচ্ছে রিমোট ভোটিং সিস্টেম, কী এটা, কীভাবে হবে ভোটগ্রহণ?

তৃণমূলের বক্তব্য, পরিযায়ী ভোটারের কোনও ডেটাবেস কমিশনের কাছে নেই। তাই, কোনও ব্যক্তি সত্যিই পরিযায়ী কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Votinng

পরিযায়ী ভোটারদের কথা মাথায় রেখে রিমোট ভোটিং সিস্টেম চালু করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। যাতে পরিযায়ীরাও ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। কারণ, কমিশনের তথ্যে ধরা পড়েছে, পরিযায়ীদের কারণেই ভোটদানের হার আশানুরূপ কম হচ্ছে।

Advertisment

কেন রিমোট ভোটিং দরকার?

বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোনও ব্যক্তি কাজের সূত্রে বা অন্যান্য সূত্রে নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্য এলাকায় থাকেন। এমনকী, দূরের রাজ্যে থাকেন। যখন তাঁর নিজের এলাকায় ভোট, সেই সময় তিনি তাই বহু ক্ষেত্রেই ভোট দিতে পারেন না। কারণ, ছুটি ম্যানেজ করতেই পারেন না। অথবা, নিজের এলাকায় ফিরে আসার ব্যবস্থা করতে পারেন না। এতে ভোটের ফলাফল প্রভাবিত হয়। সেই সমস্যা দূর করতেই নির্বাচন কমিশন পরিযায়ী ব্যক্তি বর্তমানে যেখানে আছেন, সেই জায়গায় থেকেই যাতে নিজের এলাকার ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে চাইছে।

কী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে?

ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে কাজ করে, পরমাণু শক্তি বিভাগের অধীনস্থ একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার সাহায্যে নির্বাচন কমিশন একটি প্রোটোটাইপ রিমোট ভোটিং মেশিন (আরভিএম) তৈরি করেছে। যা বর্তমান ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর একটি আধুনিক সংস্করণ। এই নতুন মেশিন বা আরভিএমের সাহায্যে একটি দূরবর্তী ভোট কেন্দ্রের ৭২টি নির্বাচনী এলাকা পরিচালনা করা যায়। নিজের রাজ্যে নির্বাচনের সময় পরিযায়ীদের জন্য বিভিন্ন রাজ্যে এই বিশেষ দূরবর্তী ভোট কেন্দ্রগুলো তৈরি করা হবে।

নির্বাচন কমিশন যে কোনও রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে এই ব্যবস্থাকে প্রাথমিক ভাবে চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। যাতে সেই রাজ্যের পরিযায়ীরা যেখানে অস্থায়ীভাবে থাকেন, সেখান থেকেই নিজের রাজ্যের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। কমিশন জানিয়েছে, এই সুবিধা পাওয়ার জন্য ভোটারকে বাড়ির কাছাকাছি নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁর কাছে অনলাইন বা অফলাইনে আবেদন করে এই সুবিধা পাওয়ার জন্য আগে থেকেই নাম লেখাতে হবে। এরপর প্রত্যন্ত এলাকার ভোটারদের বর্তমান বাসস্থানের কাছে বিশেষ ভোটকেন্দ্র তৈরি করা হবে।

কমিশনের মতে, আরভিএম একটি স্বতন্ত্র এবং নন-নেটওয়ার্কযুক্ত ব্যবস্থা। কাগজের ব্যালট শিটের বদলে RVM-এ একটি গতিশীল ব্যালট বা প্রতীক ডিসপ্লে থাকবে। যা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে। এই ব্যবস্থায় VVPAT-এর মতো একটি ডিভাইস থাকবে, যাতে ভোটাররা যাচাই করে নেবেন, তাঁরা কোথায় ভোট দিয়েছেন। প্রতিটি ভোটিং মেশিন প্রতিটি আসনের জন্য, প্রতিটি প্রার্থীর জন্য, ভোটের সংখ্যা নথিবদ্ধ করবে। সেই অনুযায়ী গণনার দিনে গণনা করা হবে। ফলাফল তারপর পরিযায়ী ভোটারের নিজের রাজ্যের এলাকায় যিনি কমিশনের আরও থাকবেন, বা ভোটিং প্রক্রিয়ার মাথা থাকবেন, তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

নতুন ভোটব্যবস্থায় নিরাপত্তার কী হবে?

কমিশনের বক্তব্য, বর্তমান ইভিএমের মত আরভিএমও ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না। প্রত্যন্ত এলাকায় ভোটগ্রহণের ব্যাপারে যিনি শীর্ষ দায়িত্বে থাকবেন, অর্থাৎ আরও, তিনি ল্যাপটপের মাধ্যমে প্রার্থীদের প্রতীক আরভিএমে যুক্ত করবেন। এই ল্যাপটপগুলোয় আবার ইন্টারনেটের সংযুক্তি থাকবে না। যখন আরভিএমে প্রতীকগুলো প্রবেশ করানো হবে, তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সেখানে আমন্ত্রিত থাকবেন। ভোটিং মেশিন বা আরভিএমে যে প্রতীকগুলো তোলা হয়েছে, তা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের দেখানো হবে।

আরও পড়ুন- ‘বিজেপি আমার রাজনৈতিক গুরু’, বছরের শেষ দিনে একি বললেন রাহুল!

বিরোধীরা কী বলছেন?

কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে মতামত জানানোর জন্য একবছরেরও বেশি, ২০২৩-এর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু কায়দায় কীভাবে ভোটগ্রহণ করা যায়, জানাতে হবে। কীভাবে পরিযায়ী ভোটারদের চিহ্নিত করা সম্ভব, তা-ও জানাতে হবে দলগুলোকে। কীভাবে প্রত্যন্ত ভোটকেন্দ্রগুলোয় আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগ করা সম্ভব, সেটাও দলগুলোকে জানাতে হবে। কিছু রাজনৈতিক দল অবশ্য দ্রুত তাদের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছে। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ ২৯ ডিসেম্বর দলের বক্তব্য জানিয়েছেন।

রমেশের সোজা কথা, কমিশন যা-ই চালু করুক, তা যেন যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য হয়। আর, সেটা নির্বাচন কমিশনকেই নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিক গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে শেষ দিকের ১০ থেকে ১২ শতাংশ ভোটে কারচুপি হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন জয়রাম রমেশ। সেই সন্দেহ বহাল রেখেই রমেশের অভিযোগ, এই কারচুপি যদি নতুন রিমোট ভোটিং সিস্টেমেও চালু থাকে, তবে আখেরে ভোটিং প্রক্রিয়ার প্রতিই জনতার বিশ্বাস ধাক্কা খাবে।

কমিশনের প্রস্তাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়ও। তিনি গত ৩০ ডিসেম্বর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, রিমোট ভোটিং সিস্টেম নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবটি একদমই কাঁচা প্রস্তাব। এর কোনও ভিত্তি নেই। এর পিছনে কোনও যুক্তিও নেই। কারণ, নির্বাচন কমিশনের কাছে পরিযায়ীদের ব্যাপারে কোনও তথ্যই নেই। তাহলে, কার ভোট দেবে?

Read full story in English

Voter Migrant labour election commission
Advertisment