বুধবারই বৃহৎ দুধ উৎপাদনকারী সংস্থা আমুল তার সমস্ত বাজারজাত দুধের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে। মাদার ডেয়ারিও দিল্লি ও তার উপকণ্ঠে দুধের দাম আমুলের মতো একই পরিমাণে বাড়িয়েছে। গোটা দেশের আরও কয়েকটি দুগ্ধ উৎপাদনকারী সংস্থাও ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা শিগগিরিই দুধের দাম বাড়াবে। মঙ্গলবারই এক বিবৃতিতে আমুল জানিয়েছিল, তারা দুধের দাম ৪% বাড়াতে চলেছে। যা বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির হারের চেয়ে কম।
এই বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে আমুলের তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সামগ্রিক পরিচালন ও দুধ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। শুধু গবাদি পশুর খাদ্য খরচই গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০% বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে, আমাদের সদস্য দুগ্ধ উৎপাদক সংগঠনগুলোও গত বছরের তুলনায় কৃষকদের পিছনে খরচ ৮-৯% বাড়িয়েছে।'
উৎপাদনে ঘাটতি
দেশের দুধ উৎপাদন সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই তাদের উৎপাদনে ৮-১০% ঘাটতির রিপোর্ট করেছে। ইন্দাপুর ডেয়ারি অ্যান্ড ডেয়ারি প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে এই সংস্থা ' সোনাই' ব্র্যান্ড নামে দুধ বিক্রি করে। পুনে-ভিত্তিক এই সংস্থার চেয়ারম্যান দশরথ মানে জানিয়েছেন, তাঁরা সম্প্রতি কৃষকদের জন্য খরচের পরিমাণ বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, 'আমাদের ডেয়ারি এখন প্রতিদিন ২০ লক্ষ লিটার দুধ সংগ্রহ করছে। গত বছরের আগস্টেই এর দৈনিক পরিমাণটা ছিল ২৩ লক্ষ লিটার। এই ঘাটতির জন্যই প্রধানত আমরা দুধের দাম বাড়িয়েছি।'
গবাদি পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে
গবাদি পশুর খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুধের ফলন কমেছে। দেশের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সবুজ চারার ফলন কম হয়েছে। ইন্দাপুর ডেয়ারি অ্যান্ড ডেয়ারি প্রোডাক্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান দশরথ মানে বলেন, ' প্রোটিন এবং খনিজ মিশ্রণের দামও বেড়েছে। যার ফলে গবাদি পশুর খাদ্যের খরচ বেড়ে গেছে।' ফ্রেঞ্চ ডেয়ারি সংস্থা ল্যাকটালিস প্রভাতের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক রাজীব মিত্র বলেন, 'দুধের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। শুধু গবাদি পশুর খাদ্য খরচই ২৫%-র বেশি বেড়েছে।'
গবাদি পশুর রোগ
কিছু প্রধান দুধ উৎপাদনকারী রাজ্যে গবাদি পশুদের মধ্যে রোগের ঘটনা বেড়েছে। গুজরাট, পঞ্জাব এবং হরিয়ানায় দুধের উৎপাদনও কমছে। এর পিছনে রয়েছে লম্পি স্কিন ডিজিজ। এমনই অভিযোগ উঠেছে বারবার।
আরও পড়ুন- তাঁকে ধর্ষণকারী, স্বজনদের হত্যাকারীরা মুক্ত, হাড়হিম আতঙ্কে ভুগে আদালতের মুখাপেক্ষী বিলকিস
অন্যান্য ব্যাপার
পরিবহন, লজিস্টিক, জনশক্তি এবং জ্বালানি খরচও বেড়েছে। ফ্রেঞ্চ ডেয়ারি সংস্থা ল্যাকটালিস প্রভাতের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক রাজীব মিত্রর মতে, 'উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে, দুধ সংগ্রহের খরচের হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫-২৫% বেড়েছে।'
চাহিদা-জোগানে ঘাটতি
করোনা মহামারির ছায়া পড়েছিল দুগ্ধ শিল্পেও। সেই পরিস্থিতি থেকে দুগ্ধ শিল্পকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বিগত বছরের তুলনায় এবছর তরল দুধের চাহিদাও বেশি। কিন্তু, দেশের অধিকাংশ ডেয়ারিতে স্কিমড মিল্ক পাউডার (এসএমপি) এবং সাদা মাখনের সরবরাহ কম। সেকথা মাথায় রেখে ডেয়ারিগুলো অক্টোবরের আগে দুধের দাম আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ বেজায় শঙ্কায়। তবে, সেই সময় উৎপাদন আরও বাড়বে বলেই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এটুকুই যা ভরসা ক্রেতাদের।
Read full story in English