Cipher Case: মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানের বিশেষ আদালত। ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে ইসলামাবাদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত। সেই গোপনীয় বার্তাই সর্বসমক্ষে ফাঁস করায় দুই রাষ্ট্রনেতাকে এই কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ইমরান অবশ্য দাবি করেছেন, নথিটি তাঁর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ২০২২ সালে সংসদীয় ভোটে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে ওই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এই বার্তা তারই প্রমাণ। একইসঙ্গে, গোপন বার্তা প্রকাশের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান।
- ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে ইসলামাবাদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত।
- ২০২৩ সালের আগস্টে, আমেরিকান সংবাদ সংস্থা- ‘দ্য ইন্টারসেপ্ট’ নথিটির একটি অংশ তুলে ধরেছিল।
- মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) ইমরান খানকে কারাদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তানের বিশেষ আদালত।
কীসের বার্তা?
বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা নথিতে ২০২২ সালের ৭ মার্চ, হওয়া একটি বৈঠকের কথা বলা আছে। ওই বৈঠক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট ডোনাল্ড লু এবং ওয়াশিংটনের তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খানের মধ্যে হয়েছিল। সেই বার্তায় একটি বৈঠকের বিবরণ আছে। বার্তায় সম্পূর্ণ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। কারণ তা পাকিস্তানের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩-এর ধারা ৫-এর অধীনে সুরক্ষিত। যাইহোক, ২০২৩ সালের আগস্টে, আমেরিকান সংবাদ সংস্থা- 'দ্য ইন্টারসেপ্ট' নথিটির একটি অংশ তুলে ধরেছিল। ওই সংবাদ সংস্থা বলেছিল যে তারা নথিটি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর একটি উত্স থেকে পেয়েছে।
ইমরানের নিরপেক্ষতা নিয়ে অসন্তোষ
বৈঠকে, মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে ইমরানের নিরপেক্ষতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। দ্য ইন্টারসেপ্ট-এর রিপোর্ট অনুসারে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভালমাদির পুতিন যখন ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের ঘোষণা করছেন, সেই সময় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মস্কোতে ছিলেন। লু বলেছেন, 'আমি মনে করি যদি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সফল হয়, তবে ওয়াশিংটনে সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কারণ, রাশিয়া সফরকে প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান খান) সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যথায়, আমি মনে করি যে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।'
'সিক্রেট' বার্তা
এই বিষয়টি আসাদ মাজিদ একটি বার্তার মাধ্যমে ইসলামাবাদে পাঠান। সঙ্গে দেন বৈঠকের বিশদ বিবরণ। বার্তার নাম দেন, 'সিক্রেট'। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বৈঠকের ঠিক একদিন পরেই, ৮ মার্চ, সংসদে ইমরানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা অনাস্থা ভোটের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগত পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়। এক মাসেরও বেশি সময় পরে, ভোটে সফল হওয়ার পর পাকিস্তান তেহরিক ই-ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এই ব্যাপারে মার্কিন বিদেশ দফতরের দিকে বারবার অভিযোগ উঠলেও, মার্কিন আধিকারিকরা বারবার ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পিছনে তাঁদের হাত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাইফার মামলা কী?
ইমরান খান ২০২২ সালের ২৭ মার্চ, ইসলামাবাদে একটি বিশাল সমাবেশে প্রথমবারের মতো গোপন নথি সম্পর্কে বলেছিলেন। ওই সমাবেশে তিনি তাঁর পকেট থেকে একটি 'চিঠি' বের করেছিলেন। যাতে, দাবি করেছিলেন যে তাঁকে শীর্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই চিঠি সেই ষড়যন্ত্রেরই প্রমাণ। এর ১০ দিন পরে, তিনি ওই বার্তা সম্পর্কে আরও বিশদে বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের দূতের মাধ্যমে একটি হুমকি দিয়েছিল।' ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, ইমরান বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া আর ওই বার্তার অভিযোগ করেছেন। এরপরই, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে, পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ শরিফ/এন)-এর নেতৃত্বাধীন সরকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে, 'একটি সরকারি গোপন নথি ফাঁস করা'র অভিযোগ আনে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে ইমরানের একটি সরকারি গোপন নথির অপব্যবহার পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষতি করেছে।
আরও পড়ুন- বাজেট কেমন, বিনা সাহায্যে বুঝতে চান? তাহলে এগুলোয় নজর রাখুন
শেষে যা হয়েছে
পরের মাসে, 'দ্য ইন্টারসেপ্ট' তার রিপোর্ট প্রকাশ করার কয়েকদিন পর, পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) ইমরানের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩-এর ধারা ৫-এর অধীনে গোপন বিষয় প্রকাশ করার জন্য একটি এফআইআর দায়ের করে। পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী এক্ষেত্রে ধারা ৫-এর অধীনে অপরাধ, যদি আদালতে প্রমাণিত হয়, তাহলে দুই থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের সাজাও রয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্টে, তোষাখানা দুর্নীতি মামলায় ইমরানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই সাজা পরে স্থগিত করা হয়েছিল। অন্যান্য মামলার কারণে তিনি কারাগারের আড়ালে আছেন। ইমরানকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেও বাধা দেওয়া হয়েছে।