মার্কিন রাষ্ট্রপতির কুর্সি দখল করলেন জো বাইডেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর হোয়াইট হাউসের দখল নিলেন তিনি। ভারতীয়দের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের একাত্মতা কয়েক যুগের ইতিহাস। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তাই হিলারি ক্লিনটন ছিলেন ভারতীয় কিংবা আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের পছন্দের তালিকায়। কিন্তু পটচিত্রে পরিবর্তন আনেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর রিপাবলিকান ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্ব বেড়ে ওঠে অনেকটাই। করোনা আবহে ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকাকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দিয়ে সাহায্যও করে মোদীর ভারত। কিন্তু ২০২০-এর কুর্সি দখলের লড়াই পিছিয়ে পড়লেন ট্রাম্প। আর এই আবহেই উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন।
জো বাইডেন ভারতের পক্ষে ভারতের জন্য ভাল?
এই মুহুর্তে এই প্রশ্নের উত্তরই জানতে চাইছে সব ভারতীয়। এখনও পর্যন্ত যা ইতিহাস, অতীতের রেকর্ড, বিবৃতি বলছে যা হবে ভালই হবে।
জো বাইডেন কী ভারতের বন্ধু হয়ে উঠতে পারবেন?
বারাক ওবামার প্রশাসনকালে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। সেই সময় থেকেই বাইডেনের সঙ্গে ভারতের একটা দৃঢ় সম্পর্কের সূচনা হয়। ভারতের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক কিংবা কূটনৈতিকগত ভাবে সম্পর্ক গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বাইডেন। ২০০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে মার্কিন-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি বলেন, "আমার স্বপ্ন যে, ২০২০ সালে বিশ্বের দুটি নিকটতম দেশ হবে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।" ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ভারত-মার্কিন পারমাণবিক চুক্তি অনুমোদনের নেপথ্যেও ছিলেন বাইডেন।
ওবামা প্রশাসনকালে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন আর কী কী গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন জো বাইডেন?
ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার অন্যতম মূল সমর্থনকারী ছিলেন জো বাইডেন। সেই সময়কালে, রাষ্ট্রসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিলের একটি সংস্কার ও সম্প্রসারণে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের সদস্যপদ সমর্থন করার ঘোষণা করেছিলেন। ভারতীয় সরকারের দাবি তিনি তাঁর মেয়াদকালে পূরণ করেছিলেন। ওবামা-বাইডন প্রশাসন ভারতকে একটি “মেজর ডিফেন্স পার্টনার” হিসেবে দেখেছিলেন। প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ভারতের সঙ্গে উন্নত ও সমালোচনামূলক প্রযুক্তি ভাগ করে নেওয়ার কাজও হয়েছিল। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রথমবারের মতো কোনও দেশকে এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল যা মার্কিন জোট সিস্টেমের বাইরে।
আরও পড়ুন, জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলেও ট্রাম্পের নীতিতেই চলতে হবে! কিন্তু কেন?
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?
ওবামা এবং বাইডেন প্রতিটি দেশে এবং অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করেছেন। বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারের বিবৃতি থেকে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায়, সীমান্তবর্তী এলাকায় বা অন্যত্র সন্ত্রাসবাদের পক্ষে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী বাইডেন। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে শোনা যায়নি এই ডেমোক্র্যাট নেতাকে।
চিনের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন কী দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারে?
গত কয়েক বছর ধরে চিনের আগ্রাসী আচরণ নিয়ে ডেমোক্র্যাটস এবং রিপাবলিকানদের প্রায় একই সুর। ভারত সীমান্তে চিনের হামলা নিয়ে গত ছয় মাসে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সমর্থনে চূড়ান্তভাবে সোচ্চার হয়েছে। নয়াদিল্লিও বাইডন প্রশাসনের কাছ থেকে একই ধরণের প্রত্যাশা করবে তা বলাই বাহুল্য। বাইডেন এই একই পথ অবলম্বন করবেন কি না তা সময়ই বলবে।
ভারতীয়দের অভিবাসন এবং ভিসা, বিশেষত দক্ষ পেশাদারদের জন্য এইচ 1 বি ভিসায় বদল কি আসবে?
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ভারতীয়দের জন্য এটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু ডেমোক্র্যাটদের ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে আরও উদার হিসাবে দেখা হয়, তাই বাইডেন আমেরিকাতে পড়াশোনা, কাজ করতে এবং সেখানে বসবাস করতে এবং আরও উন্নত জীবনের জন্য ভারতীয়দের প্রতি নরম হতে পারে বলে আশা করা যায়। নির্বাচনী প্রচারে পরিবারভিত্তিক অভিবাসন সমর্থন, স্থায়ী, কাজের ভিত্তিক অভিবাসন জন্য দেওয়া ভিসার সংখ্যা বৃদ্ধি, উচ্চ দক্ষতার জন্য অস্থায়ী ভিসা ব্যবস্থা, বিশেষায়িত চাকরির সংস্কার, গ্রীন কার্ডের কড়া নিয়মে শিথিলতা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসন যেহেতু নিয়মকানুনকে কঠোর করেছে, তাই বাইডেনের পক্ষে গত চার বছরে গৃহীত সব পদ্ধতি বদলের কাজ করা খুব সহজ নয়।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন