What Election Commission can do: স্বাভাবিক ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। নির্বাচনে এমন অভিযোগ হামেশাই ওঠে। অনেকেই ভাবেন, এমনটা হলে নির্বাচন কমিশনের কী-ই বা আর করার আছে? আসলে, স্বাভাবিক ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে নির্বাচন কমিশনের অনেক কিছুই কিন্তু করার থাকে। স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়া কিন্তু, কোনও স্বাভাবিক ব্যাপার না। কারণ নির্বাচনী বিধানগুলো নিশ্চিত করে যে প্রতিটি ভোট সঠিকভাবে গণনা করা হবে। আর, নির্বাচন জনগণের প্রকৃত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে।
নির্বাচন স্থগিত
কিন্তু, সেসব ঠিকঠাক না হওয়ায়- ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসি), জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১ (আরপিএ)-এর ধারা ৫৮(২) এবং ৫৮এ(২) এর অধীনে, ১৯ এপ্রিল মণিপুরের ১১টি ভোটকেন্দ্র এবং অরুণাচল প্রদেশের ৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোট বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। ওই সব জায়গায় ভোটগুলো যথাক্রমে ২২ এবং ২৪ এপ্রিল নেওয়া হবে। এর মধ্যে ৯ এপ্রিল একজন প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ার কারণে মধ্যপ্রদেশের বেতুল লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনও স্থগিত করা হয়েছে। এখানে ২৬ এপ্রিল ভোট হওয়ার কথা ছিল। সেটাই এবার হবে ৭ মে।
কখন হবে পুনরায় ভোট?
ভারতের নির্বাচনী আইনে ইভিএমে সমস্যা, বুথ ক্যাপচারিং, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা প্রার্থীর মৃত্যু-সহ যে কোনও কারণে স্বাভাবিক ভোটদান প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করতে হবে, তা বলা আছে। পুনরায় ভোট, ভোটদান স্থগিত করা, ভোট বাতিল করা-সহ যাবতীয় বিষয়গুলো রয়েছে এই বিধানে। যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং নিরবচ্ছিন্ন থাকে। যেমন-
ইচ্ছাকৃতভাবে ইভিএম কেড়ে নেওয়া বা ধ্বংস করা
জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিএ এর ৫৮ ধারা অনুযায়ী, 'ব্যালট বাক্সের ধ্বংস, ইত্যাদির ক্ষেত্রে' নির্বাচন কমিশন ভোটদান বাতিল ঘোষণা করে নতুন করে ভোটগ্রহণের ব্যাপারে জানাতে পারে। সেটা তখনই হতে পারে, যখন কোনও ক) অননুমোদিত ব্যক্তি বেআইনিভাবে কোনও ইভিএম কেড়ে নেয়। খ) কোনও ইভিএম দুর্ঘটনাক্রমে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা হয়, তা হারিয়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা ইভিএমে কারচুপি করা হয়। গ) ভোট রেকর্ডিংয়ের সময় যখন কোনও ইভিএমে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়।
কালি দেওয়া হবে বাম হাতেই
এই ধরনের ক্ষেত্রে, রিটার্নিং অফিসার (আর-ও) অবিলম্বে ইসি এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকে প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং বস্তুগত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। যা বিবেচনা করার পরে নির্বাচন কমিশন ভোট বাতিল বলে ঘোষণা করতে পারে। আর, আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন করে ভোটের তারিখ এবং সময় নির্ধারণ করতে পারে। এরপর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী বা তাঁদের নির্বাচনী এজেন্টদের গোটা বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়। ভোটারদের অবহিত করার জন্য ভোটকেন্দ্রে ঢোল বাজিয়ে বা মাইকে ঘোষণার সঙ্গে পাবলিক প্লেসে একটি নোটিশও পোস্ট করা হয়। সমস্ত নির্বাচকদের বা ভোটারদের নতুন করে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। পুনরায় ভোটের সময়, ভোটারদের বাম হাতের মধ্য আঙুলে কালি দেওয়া হয়। যাতে মূল ভোটের সময় দেওয়া চিহ্নের সঙ্গে পার্থক্য করা যায়।
বুথ ক্যাপচারিং
বুথ ক্যাপচারিংয়ের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিএ) ধারা ১৩৫এ অনুযায়ী পুনরায় ভোটগ্রহণ হতে পারে। এটা তখনই ঘটে, যখন- ক) একটি ভোটকেন্দ্র দখল করে, নির্বাচন পরিচালনা প্রভাবিত করা হয়। খ) একটি ভোটকেন্দ্র দখল করে, শুধুমাত্র কোনও ব্যক্তি বা দলের সমর্থকদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। গ) কোনও ভোটারকে ভয় দেখানো হয় বা হুমকি দেওয়া হয়। তাঁকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়। ঘ) ভোট গণনাকে প্রভাবিত করে গণনাকেন্দ্র দখল করে নেওয়া হয়। ঙ) সরকারি চাকুরীতে নিযুক্ত কোনও ব্যক্তি যখন ভোটগ্রহণকে প্রভাবিত করেন। বুথ ক্যাপচারিং সাধারণ লোকেদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম এক থেকে তিন বছরের জন্য শাস্তিযোগ্য। সরকারি কর্মচারীদের জন্য এই শাস্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন- স্কুলের চাকরি থেকে ২৬ হাজার ছাঁটাই! কতটা বিপাকে রাজ্য সরকার, কী করবেন মুখ্যমন্ত্রী?
প্রিসাইডিং অফিসারের ক্ষমতা
জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ৫৮এ অনুযায়ী যদি কোনও ভোটকেন্দ্রে বুথ ক্যাপচারিং হয়, ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার অবিলম্বে ইভিএমের নিয়ন্ত্রক ইউনিটটি বন্ধ করে দিতে পারেন। নির্বাচন বিধিমালা, ১৯৬১-এর ৪৯এক্স অনুযায়ী, ব্যালট ইউনিট এবং কন্ট্রোল ইউনিট আলাদা করে দিতে পারেন। তিনি গোটা বিষয়টি আরও-কে জানাতে পারেন। সেই অনুযায়ী আরও- ক) ভোটকেন্দ্রে ভোট বাতিল ঘোষণা করতে পারেন। নতুন ভোটের তারিখ স্থির করতে পারেন। খ) যদি বিপুলসংখ্যক ভোটকেন্দ্রে বুথ ক্যাপচারিং হয় বা ভোট গণনা প্রভাবিত হয়, তাহলে ওই নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন বন্ধ করা যেতে পারে।