ভারতের মত দেশে এক একটি বিধানসভা কেন্দ্রেই লাখখানেকের বেশি ভোটার। এত বিপুল সংখ্যক ভোটগণনা চাট্টিখানি কথা নয়। রীতিমতো জটিল ব্যাপার। বৃহস্পতিবারই আবার গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল। তার আগে একবার দেখে নেওয়া যাক, কাউন্টিং রুমে কারা থাকেন আর তাঁদের ভূমিকাই বা কী, সেই বিষয়টি।
ভোট গণনা কোথায় হয়?
সাধারণত, কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে এক জায়গাতেই ভোট গণনা হওয়ার কথা। লোকসভা নির্বাচনের সময় একাধিক বিধানসভা কেন্দ্র থাকে। সেই কারণে পরিস্থিতি অনুযায়ী একাধিক গণনাকেন্দ্রের ব্যবস্থাও করা হয়। এক্ষেত্রে কত ভোটের গণনা হবে, সেটা একটা বিচার্য হয়ে ওঠে। গণনাকেন্দ্র ঠিক করেন রিটার্নিং অফিসার (আরও)। আর, একাধিক গণনাকেন্দ্রগুলোর প্রতিটি অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসারের (এআরও) তত্ত্বাবধানে থাকে। কাউন্টিং সেন্টারে একটা বড় হলের মধ্যে অনেকগুলো টেবিল থাকে। তবে, রিটার্নিং অফিসার মনে করলে একাধিক ঘরের ব্যবস্থা করতে পারেন। এজন্য অবশ্য নির্বাচন কমিশনের আলাদা অনুমতি লাগে। কাউন্টিং সেন্টারগুলোয় যাবতীয় ব্যবস্থাপনা থাকে। পাহারা নিয়ে কড়াকড়ি চলে। কাউন্টিং সেন্টার হিসেবে সাধারণত সরকারি স্কুল বা কলেজগুলোই ব্যবহার করা হয়।
রিটার্নিং অফিসার
নির্বাচন কমিশন প্রত্যেক বিধানসভায় রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করেন। নির্বাচন চলাকালীন রিটার্নিং অফিসারদেরই হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া থাকে। ভোটগ্রহণ যাতে শান্তিপূর্ণ এবং পক্ষপাতিত্বহীনভাবে চলে, সেই দায়িত্ব থাকে রিটার্নিং অফিসারদের হাতে। গণনার সময় রিটার্নিং অফিসারদের নিম্নলিখিত দায়িত্ব থাকে।
১) কাউন্টিং সেন্টার ঠিক করা। আগেই নির্বাচন কমিশনের থেকে সেই কাউন্টিং সেন্টারের অনুমোদন নিয়ে রাখা।
২) প্রার্থীকে গণনার দিন, সময় এবং গণনাকেন্দ্রের ঠিকানা জানানো।
৩) ভোটগণনা এবং ফল ঘোষণা।
রিটার্নিং অফিসার নিজেরা ভোট গোনেন না। তাঁরা গণনা ঠিকমতো চলছে কি না, তা বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই করে নেন। আর, গণনার ফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে ভোট গণনার ব্যাপারে তাঁরাই কর্তৃপক্ষ হিসেবে চূড়ান্ত দায়িত্ব পালন করেন। রিটার্নিং অফিসারদের এই কাজে সাহায্য করার জন্য নির্বাচন কমিশন বেশ কয়েকজন সহকারি রিটার্নিং অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করে থাকে। একটি নির্বাচনী কেন্দ্রে একাধিক গণনাকেন্দ্র থাকলে, প্রতিটি কেন্দ্র অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার বা এআরওদের তত্ত্বাবধানে থাকে। নির্বাচনী কেন্দ্রের প্রয়োজন অনুযায়ী কতজন অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার নিযুক্ত হবেন, তা ঠিক হয়। সাধারণত, লোকসভা নির্বাচনে জেলাশাসক রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকেন। আর, বিধানসভা নির্বাচনে মহকুমাশাসক রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।
কাউন্টিং সুপারভাইজার এবং সহকারি
একটা কাউন্টিং রুমে অনেকগুলো টেবিল থাকে। প্রতিটি টেবিলে প্রতি রাউন্ডে থাকে পোস্টাল ব্যালট ও ইভিএম। প্রতিটি টেবিলে একজন করে কাউন্টিং সুপারভাইজার থাকেন। তাঁদের সঙ্গে থাকেন দু'জন সহকারি। তাঁরাই মূলত গণনা করেন। এই গণনাকারীরা প্রত্যেকেই গেজেটেড পদমর্যাদার অফিসার। রিটার্নিং অফিসারই তাঁদের নিযুক্ত করেন। এই গণনার কাজের জন্য তাঁদের আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইভিএম গণনা আর পোস্টাল ব্যালট গণনার মধ্যে ফারাক থাকে।
কমিশন নিযুক্ত পর্যবেক্ষক
প্রতিটি কাউন্টিং রুমের জন্য নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে। এই পর্যবেক্ষকরা গোটা প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখেন। আর, সেই অনুযায়ী রিপোর্ট তৈরি করেন। এই পর্যবেক্ষকরা সাধারণত ভারত সরকারের কর্মী হন। তাঁরা গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর নজরদারির দায়িত্বে থাকেন। তাঁদের অধীনে থাকেন মাইক্রো অবজারভার। তাঁরা গণনাকেন্দ্রের প্রতিটি টেবিলে থাকেন। পর্যবেক্ষকরাও প্রতিটি রাউন্ডের গণনার ফলাফল লাগাতার যাচাই করে নেন। কারণ, নির্বাচনে এই পর্যবেক্ষকরাই হলেন কমিশনের চোখ এবং নাক। গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া ঠিকঠাক চলছে, সেটা পর্যবেক্ষকদেরই নিশ্চিত করতে হয়।
প্রার্থী এবং কাউন্টিং এজেন্ট
প্রার্থীরা তাঁদের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি গণনাকেন্দ্রের মধ্যে থাকতে পারেন। সব দলই গণনাকেন্দ্রে কাউন্টিং এজেন্টদের পাঠায়। যাতে ভোটগণনা স্বচ্ছভাবে এবং পদ্ধতি মেনে চলতে পারে এবং কোনও অভিযোগ থাকলে যাতে নথিবদ্ধ করা যায়। কাউন্টিং এজেন্টদের কমিশনের কিছু নির্দেশ মেনে চলতে হয়। তাঁরা গণনা প্রক্রিয়ায় বাধাদান করবেন না, সেটাও তাঁদের নিশ্চিত করতে হয়।
আরও পড়ুন- জিতেছে আপ, তবুও দিল্লি কর্পোরেশনের ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে বিজেপি, কীভাবে?
নিরাপত্তা
কাউন্টিং রুম বা গণনাকক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ানরা গণনাকেন্দ্রের বিভিন্ন স্তরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। তাঁরা গণনাকেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি, স্ট্রং রুম থেকে কাউন্টিং রুমে যে পথে ইভিএম নিয়ে আসা হয়, তাঁরা সেই পথের নিরাপত্তার দায়িত্বেও থাকেন। গণনা শেষে সেই স্ট্রং রুমেই ইভিএমগুলো রাখা হয়। নির্বাচনী কেন্দ্রে সিআরপিএফ এবং স্থানীয় পুলিশ রিটার্নিং অফিসারদের তত্ত্বাবধানেই থাকেন।
Read full story in English