পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মদতে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান খান। ছিলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল হয়ে। সেনাবাহিনী পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তানের ট্র্যাডিশন মেনে ইমরানও মেয়াদের আগেই ক্ষমতাচ্যুত হলেন। এখন প্রশ্ন হল, ইমরানের এই অপসারণ, ভারতের জন্য কতটা ভালো বা খারাপ হল?
পাকিস্তানের গণতন্ত্র
ভারত বরাবরই অভিযোগ করেছে, প্রতিবেশী দেশটির গণতন্ত্র ত্রুটিযুক্ত গণতন্ত্র বা পরিচালিত গণতন্ত্র। এবারও দেখা গেল আস্থাভোট এড়ানোর চেষ্টা করলেন সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আস্থাভোটের বিঘ্ন ঘটিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানার ব্যাপারে অনিচ্ছা স্পষ্ট করে দিলেন। যা বোঝাল, গণতন্ত্রের পথে পাকিস্তান এখনও টলমল পায়ে হাঁটছে।
ইমরান খানের পতন
ইমরান ক্রিকেট দুনিয়া থেকে রাজনীতিতে এসেছেন। মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে তাঁর খুব একটা বেশিদিন পরিচয় হয়নি। ক্ষমতায় এসে তিনি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যা স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তিনি কোনও উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসেননি। স্বাভাবিক ভাবেই কোনও প্রতিশ্রুতিই ইমরান রাখতে পারেননি। তাই খুব দ্রুত তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে।
সেনাই এখনও পাকিস্তানের শেষ কথা
এটা আলাদা বিষয় যে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া অভ্যুত্থান ঘটাতে চাননি। কিন্তু, তাঁর আগের সেনাপ্রধানরা যা নজির রেখেছেন, তাতে স্পষ্ট যে সেনাবাহিনীই পাকিস্তানের শেষ কথা। এবারও তা ঘুরিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেল। ইমরান ছিলেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মনোনীত প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু, এবার বহু চেষ্টার পরও শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। তাই ইমরানকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যা
রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের প্রত্যক্ষ প্রভাব পাকিস্তানের ওপর পড়েছে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সময় ইমরান রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। তাঁর এই ধরনের কূটনীতিতে গোটা বিশ্বের চোখ কপালে উঠেছিল। আমেরিকা তো মোটেও বিষয়টা ভালোভাবে নেয়নি। এমনকী, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতেও ইমরানকে মানা করেছিল আমেরিকা। কিন্তু, ইমরান তা শোনেননি। যার ফল তাকে ভুগতে হয়েছে।
ইন্ডিয়া ফ্যাক্টর
পাকিস্তান সবসময় ভারতকে ধরেই যাবতীয় হিসেব কষে। অতি সম্প্রতি তাঁর বক্তব্যে, ভারতের নাম বারবার উচ্চারণ করেছেন ইমরান খান। ভারতের বিদেশনীতির প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি, নিরাপত্তা এবং বিদেশনীতি নির্ধারণে অতিরিক্ত ভূমিকা নেওয়ায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীরও প্রশংসা করেছেন। এতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতর রাওয়ালপিন্ডির ক্ষোভ স্বভাবতই ইমরানের ওপর বেড়ে গিয়েছিল।
শরিফদের প্রত্যাবর্তন
শাহবাজ শরিফ ফের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। দীর্ঘদিনই তিনি পাক পঞ্জাবের শাসক ছিলেন। নিজে ব্যবসায়ী। দাদা নওয়াজের ছত্রছায়ায় থাকলেও, বরাবরই শাহবাজই নওয়াজের ডানহাত বলে পরিচিত। আর, এই নওয়াজের আমলেই লাহোর যাত্রা আবার মোদীর বিমান নিয়ে আচমকা উড়ে যাওয়া। সম্প্রতি, শাহবাজের বক্তব্যে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর দাদা নওয়াজ শরিফের নাম। বর্তমানে নওয়াজ শরিফ লন্ডনে থাকেন। তবে, নওয়াজ বরাবর পিছন থেকে ছুরি মারতে অভ্যস্ত। লাহোরে বাসযাত্রার পর কার্গিলের লড়াই যেন তারই প্রমাণ। তবে, ভারতীয় রাজনীতিবিদদের একাংশের কাছে শরিফরাই ভালো। কারণ, গত আড়াই বছরে মোদী আর বিজেপি-আরএসএস নিয়ে একটু বেশিই সরব হয়েছিলেন ইমরান।
Read story in English