Advertisment

Explain: জ্ঞানবাপী মামলায় হিন্দুপক্ষের দাবি, কার্বন ডেটিং কী, কতটা লাভ হবে হিন্দুত্ববাদীদের?

আদালত কার্বন ডেটিং নিয়ে তাদের কোনও আপত্তি আছে কি না তা জানতে চেয়ে সব পক্ষকে নোটিশ দিয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mosque

জ্ঞানবাপী মসজিদ

বৃহস্পতিবার (২২শে সেপ্টেম্বর) বারাণসীর জেলা আদালত জ্ঞানবাপী মসজিদের ভিতরের কাঠামোর কার্বন ডেটিং চেয়ে একটি আবেদনের অনুমতি দিয়েছে। হিন্দু পক্ষের দাবি, এটি একটি 'শিবলিঙ্গ'। আদালত কার্বন ডেটিং নিয়ে তাদের কোনও আপত্তি আছে কি না তা জানতে চেয়ে সব পক্ষকে নোটিশ দিয়েছে।

Advertisment

কার্বন ডেটিং কী?
কার্বন ডেটিং হল একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি যা জৈব উপাদানের বয়স জানতে ব্যবহার করা হয়। বস্তুর মধ্যে বিভিন্ন আকারে কার্বন থাকে। ডেটিং পদ্ধতিতে সি-১৪ নামে কার্বনের একটি আইসোটোপের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ১৪ হল ভর। যা সময়ের সঙ্গে তেজস্ক্রিয়তার মতই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

বায়ুমণ্ডলে প্রচুর কার্বন-১২ আইসোটোপ পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এমন কার্বন পরমাণু, যার ভর ১২। খুব কম পরিমাণে কার্বন-১৪ রয়েছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন-১২ থেকে কার্বন-১৪র অনুপাত প্রায় স্থির থাকে।
উদ্ভিদ তাদের কার্বন পায় সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। যখন প্রাণীরা তা পায় প্রধানত খাদ্যের মাধ্যমে। যেহেতু গাছপালা এবং প্রাণীরা বায়ুমণ্ডল থেকে তাদের কার্বন গ্রহণ করে, তারাও বায়ুমণ্ডলের প্রায় একই অনুপাতের কার্বন-১২ এবং কার্বন-১৪ আইসোটোপগুলি পেয়ে থাকে।

কিন্তু, যখন তারা মারা যায়, তখন বায়ুমণ্ডলের কার্বন গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। বর্জনও হয় না। এরপর, কার্বন-১২ থেমে থাকে। আর ক্ষয় হয় না। অন্যদিকে কার্বন-১৪ তেজস্ক্রিয়। যা প্রায় ৫,৭৩০ বছর পর নিজের অর্ধেক কমে যায়। এটিকে কার্বন-১৪র 'অর্ধ-জীবন' বলা হয়।

সুতরাং, একটি উদ্ভিদ বা প্রাণী মারা যাওয়ার পরে, শরীরে কার্বন-১২ এবং কার্বন-১৪র অনুপাত বা তার দেহাবশেষ পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এই পরিবর্তন পরিমাপ করা যেতে পারে এবং জীবের মৃত্যুর আনুমানিক সময় বের করতে তা ব্যবহার করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন- ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের অবস্থানকে কুর্নিশ করছে দুনিয়া, কেন?

নির্জীব বস্তুর ক্ষেত্রেও কি কার্বন ডেটিং কার্যকর?
কার্বন ডেটিং সব পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা যায় না। বিশেষত, এটি নির্জীব জিনিসের বয়স নির্ধারণ করতে ব্যবহার করা যায় না। যেমন পাথর। এছাড়াও, ৪০ থেকে ৫০ হাজার বছরের বেশি বয়সি জিনিসের বয়স কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা যায় না। এর কারণ হল অর্ধ-জীবনের ৮ থেকে ১০টি চক্র অতিক্রম করার পরে, কার্বন-১৪ এর পরিমাণ প্রায় নগণ্য হয়ে যায়। তখন একে শনাক্ত করা যায় না।

জড় জিনিসের বয়স গণনা করার জন্য অন্যান্য পদ্ধতি রয়েছে। তবে, কার্বন ডেটিং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে পরোক্ষ উপায়েও ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হিমবাহ এবং মেরু অঞ্চলে বরফের বয়স নির্ধারণ করা হয় কার্বন ডেটিং ব্যবহার করে। বড় বরফের চাঙরের ভিতরে আটকে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইডের অণুগুলি খুঁটিয়ে দেখে সেটা করা যায়। আটকা পড়া অণুগুলো বাইরের বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে মিশে যায় না। অনুগুলো যখন আটকা পড়েছিল, সেই একই অবস্থায় পাওয়া যায়।

একটি নির্দিষ্ট স্থানে কতক্ষণ ধরে একটি শিলা রয়েছে, তা-ও অনুরূপ পরোক্ষ পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্ধারণ করা যেতে পারে। যদি পাথরের নীচে জৈব পদার্থ, মৃত গাছপালা বা পোকামাকড় আটকে থাকে, তবে তারা একটি ইঙ্গিত দিতে পারে যে কখন সেই শিলা বা অন্য কোনও জিনিস সেই জায়গায় পৌঁছেছিল।

একটি বস্তুর চারপাশে ক্ষয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করার আরও বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। অবশ্য তা, পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ব্যবহৃত হয়। জ্ঞানবাপী মামলায়, আবেদনকারীরা প্রতিষ্ঠিত করতে চান যে মসজিদটি তৈরি হওয়ার অনেক আগে থেকেই 'শিবলিঙ্গ' তার জায়গায় ছিল। সেকথা সত্যি কি না, বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

এমন কিছু আছে, যার তারিখ জানা যায় না?
একটি নির্দিষ্ট বস্তুর বয়স জানার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। তবে, সবকিছুরই তারিখ জানা যায় না। একই পদ্ধতি সবক্ষেত্রে কাজেও লাগে না। যদিও জ্ঞানবাপী মামলার আবেদনকারীরা কার্বন ডেটিং করার জন্য বলেছেন, তবে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয় যে এই ক্ষেত্রে কার্বন ডেটিং প্রয়োগ করা উপযুক্ত হবে কি না। কিছু পদ্ধতি, যেমন এটির নীচে আটকে থাকা জৈব উপাদানের সন্ধান করা, ব্যবহারিক কারণে সম্ভব না-ও হতে পারে। কারণ, এর কাঠামোকে উপড়ে ফেলতে গেলে সমস্যা তৈরি হবে। তা-ই জ্ঞানবাপী মন্দির ছিল না, মসজিদ- সেটা জানতে গেলে শেষ পর্যন্ত কী করা যেতে পারে, সেটা বিস্তারিত গবেষণার পরই চূড়ান্ত করা সম্ভব।

Read full story in English

Hindu mosque Court Order
Advertisment