/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/06/cats-104.jpg)
আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যে আরও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ‘বিপর্যয়’। আরব সাগর থেকে উত্তর দিকে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, আগামী বৃহস্পতিবার, ১৫ জুনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় পাকিস্তান ও সংলগ্ন সৌরাষ্ট্র-কচ্ছ উপকূলে পৌঁছে যাবে। মুম্বই থেকে পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। পোরবন্দর থেকে ৫৩০ কিলোমিটার ও করাচি থেকে দক্ষিণে ৮৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়।
আরব সাগরে সৃষ্ট অত্যন্ত বিপজ্জনক ঘূর্ণিঝড় ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছে, আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড় উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই ঘূর্ণিঝড়টি ১৫ জুন বিকেলে পাকিস্তান এবং সৌরাষ্ট্রের কচ্ছের আশেপাশে পৌঁছতে পারে। আবহাওয়া দফতর টুইট করে এ তথ্য জানিয়েছে।
আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের পাশাপাশি করাচি পোর্ট ট্রাস্ট থেকেও ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। ঝড়ের কারণে প্রবল বেগে বাতাস বইতে পারে, তাই নৌপরিবহন কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। তথ্য অনুসারে, আধিকারিকরা এনডিআরএফ দলকে পোরবন্দর, গির সোমনাথ এবং ভালসাদ জেলায় পাঠিয়েছেন। গুজরাট, দমন ও দিউতে ভারতীয় উপকূলরক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে এবং জেলেদের সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে বাংলাদেশ। বিপর্যয়-এর অর্থ হল দুর্যোগ এমনকী, ঘূর্ণিঝড়ের জেরে বন্যা পরিস্থিতি এবং অন্যান্য প্রভাবের বিষয়ে প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। আরও শক্তিশালী অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়! একাধিক রাজ্যে বিপর্যয় ডেকে আনতে চলেছে ‘বিপর্যয়’? হাওয়ার গতিবেগ সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
VSVS Biparjoy over eastcentral Arabian Sea at 0230 hours IST of 11th June, 2023 about 510 km south-southwest of Porbandar. To intensify into an ESCS during next 06 hours. To reach near Pakistan and adjoining Saurashtra & Kutch coasts around afternoon of 15th June, 2023 as a VSCS pic.twitter.com/fE47T9gOna
— India Meteorological Department (@Indiametdept) June 10, 2023
র জেরে কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্র উপকূল জুড়ে কড়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের পাশাপাশি ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে ওমান ও ইরানেও। আবহাওয়া দফতর সূত্রে আগামী কয়েকদিন জেলেদের আরব সাগরে না যেতে সতর্ক করেছে। যারা ইতিমধ্যেই সমুদ্রের গভীরে রয়েছেন তাদের দ্রুত উপকূলে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে “সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে, তিথল সমুদ্র সৈকত ১৪ জুন পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা জেলেদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছি। প্রয়োজনে লোকজনকে সমুদ্র তীরবর্তী গ্রামগুলি থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। আমরা ১৪ জুন পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য তিথাল সমুদ্র সৈকত বন্ধ করে দিয়েছি,”। ইতিমধ্যেই ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে কর্নাটক, গোটা এবং মহারাষ্ট্র উপকূলে। ১০ জুন পর্যন্ত বইবে দমকা হাওয়া। বৃষ্টিপাতের পুর্বাভাস রয়েছে কেরালা, লাক্ষাদ্বীপ, কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে। ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে মণিপুর, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম ও মেঘালয়ে।
পূর্বাভাস বলছে আগামী তিন চার দিন উত্তাল হতে পারে সমুদ্র। একই সঙ্গে ১৩৫ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। হাওয়ার গতিবেগ সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ, উত্তরাখণ্ডেও রয়েছে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পুর্বাভাস।
ঝড়ের নামকরণের আগে দেখা হয় তা যেন আপত্তিকর ও বিতর্কিত না হয়। উচ্চারণ করা সহজ এবং মনে রাখা সহজ হওয়া উচিত। নাম রাখার জন্য ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম ৮ অক্ষরের বেশি রাখা হয় না। প্রথমে ঝড়ের নামকরণের কোন নিয়ম ছিল না। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা এর জন্য একটি আদর্শ পদ্ধতি তৈরি করেন। ভারতের আইএমডি ছয়টি আবহাওয়া কেন্দ্রের মধ্যে একটি যা ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়। এই আবহাওয়া কেন্দ্রগুলি কেবল ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়, তবে নামগুলি এমনভাবে নেওয়া হয় যাতে কারও অনুভূতিতে আঘাত না হয় এবং এই নামগুলির পুনরাবৃত্তি হয় না।
২০০৪ সালে, ভারত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য ঝড়ের নামকরণের জন্য একটি সূত্রে ঐকমত্য পৌঁছেছিল। এই অঞ্চলে যে ৮টি দেশ পড়ে সেগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। ভারত এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলি ২০০০ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের অনুশীলন শুরু করে। ভারত ছাড়াও এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। এই দেশগুলি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য একটি তালিকা সামনে রেখেছে। এছাড়াও, ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্র সংঘের ওয়ার্ল্ড মেট্রোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন কিছু নিয়ম তৈরি করেছে।
আটলান্টিক মহাসাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণের অনুশীলন ১৯৫৩ সালে শুরু হয়েছিল। একই সময়ে, এটি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তা ২০১৪ সালে শুরু হয়েছিল। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আটটি দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ইরান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন যুক্ত হয়। যখন একটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন এই ১৩টি দেশ তাদের ক্রম অনুসারে নাম নির্ধারণ করে। সোমালিয়ায় যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, তার নামকরণ করেছিল ভারত, যার নাম ছিল গতি। একই সঙ্গে ২০২৩ সালের ঘুর্ণিঝড় বিপর্যয়ের নামকরণ করেছে বাংলাদেশ। ঝড়ের নামও নির্ভর করে এর গতির ওপর।