Advertisment

Explained: হিমবাহী হ্রদ বিস্ফোরণের জেরে বন্যা! সেটা আবার কী, কেন হয়?

ইতিমধ্যে এই বন্যায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Glacial lake outburst flood

বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩, উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর প্লাবন। (পিটিআই ছবি)

সিকিম রাজ্যের উত্তর-পশ্চিমে ১৭,০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত দক্ষিণ লোনাক হ্রদ- অবিরাম বৃষ্টির কারণে ভেঙে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ১৪ জন মারা গিয়েছেন এবং কমপক্ষে ২৩ জন সেনাকর্মী-সহ ১০২ জন নিখোঁজ। সিকিম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এসএসডিএমএ) জানিয়েছে, বুধবার (৪ অক্টোবর) মাঙ্গান, গ্যাংটক, পাকিয়ং এবং নামচি-সহ অন্তত চারটি জেলা প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা নদীর জলস্তর বৃদ্ধি এর কারণ।

Advertisment

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, 'উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদ ভেঙে যাওয়ায় অর্থাৎ বিস্ফোরণের ফলে প্রায় ১৫ মিটার/সেকেন্ডের কাছাকাছি খুব উচ্চবেগে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। সিডব্লিউসি (সেন্টার ওয়াটার কমিশন) মেলি অঞ্চলে বর্ধিত জলের পরিমাপ করেছে, সেখানে জলস্তরের উচ্চতা ২২৭ মিটার। যা, বিপদসীমার ৩ মিটার ওপর দিয়ে বইছে। এই পরিমাপ করা হয়েছে সকাল ৬টার সময়।' বছরের পর বছর ধরে অসংখ্য গবেষণা দেখিয়েছে যে হিমবাহ গলনের কারণে দক্ষিণ লোনাক হ্রদের জলস্তর কীভাবে বাড়ছে। একইসঙ্গে এই হ্রদকে হিমবাহ হ্রদ বিস্ফোরণের জন্য বন্যার (জিএলওএফ) কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অথবা, সংবেদনশীল বলে জানিয়েছে।

জিএলওএফ কী?

দক্ষিণ লোনাক হ্রদের মত হিমবাহের হ্রদ, বড় বড় জলরাশি হিমবাহ গলে জমি ক্ষয় করে তার মধ্যে সেই হিমবাহের গলে যাওয়া জলে তৈরি হয়। এগুলি বড় আকারের হয়। সঙ্গে অত্যন্ত বিপজ্জনকও হয়ে থাকে। কারণ হিমবাহের হ্রদগুলি বেশিরভাগই শিলার ধ্বংসাবশেষ এবং তার পলি দিয়ে তৈরি হয়। তার চারপাশের সীমানা ভেঙে গেলে, পাহাড়ের পাশ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে জল নেমে আসে, যা নিম্নধারার এলাকায় বন্যার কারণ হতে পারে। একে হিমবাহী হ্রদ আউটবার্স্ট ফ্লাড বা হিমবাহী হ্রদ ভাঙা বন্যা অথবা জিএলওএফ বলে।

publive-image
ইসরো বলেছে যে প্রায় ১০৫ হেক্টর বিস্তীর্ণ হ্রদ থেকে জল বেরিয়েছে এবং ২৮ সেপ্টেম্বরের একটি ছবি এবং ৪ অক্টোবরের একটি চিত্রের তুলনা প্রকাশ করেছে। বোঝাতে চেয়েছে কীভাবে এটি একটি আকস্মিক বন্যা তৈরি করতে পারে। (ইসরো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি)

বিশেষজ্ঞের বক্তব্য

ক্যান্টারবেরি (নিউজিল্যান্ড) বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগের ঝুঁকি এবং আবহাওয়ার বিশ্লেষক টম রবিনসন ফেব্রুয়ারিতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন যে জিএলওএফ বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে ভূমিকম্প, অত্যন্ত ভারী বর্ষণ এবং বরফের তুষারপাত। তিনি বলেন, 'এই হ্রদগুলি প্রায়শই খাড়া, পার্বত্য অঞ্চলে তৈরি হয়। যার অর্থ, ভূমিধস বা বরফের তুষারপাত কখনও কখনও সরাসরি হ্রদে পড়ে এবং জলকে স্থানচ্যুতও করতে পারে, যার ফলে এই জল প্রাকৃতিক বাঁধ উপচে নীচে পড়ে এবং বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়।' ২০১৩ সালে, উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় চোরাবাড়ি তাল হিমবাহের হ্রদ দ্বারা সৃষ্ট একটি জিএলওএফ ভেঙে আকস্মিক বন্যা হয়েছিল। যার জেরে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

কীভাবে দক্ষিণ লোনাক হ্রদ সংবেদনশীল হয়ে উঠল?

বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার সঙ্গেই সিকিম হিমালয়ের হিমবাহগুলি দ্রুত গলছে। অনেক হিমবাহ হ্রদের জন্ম দিচ্ছে এবং এই অঞ্চলে তাতে জলের পরিমাণ বাড়ছে। সিকিম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি অনুসারে, সিকিম হিমালয়ে বর্তমানে ৩০০টিরও বেশি হিমবাহী হ্রদ রয়েছে। মঙ্গাবেয়ের ২০২০ সালের রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে, এর মধ্যে ১০টি হ্রদ বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত। তার মধ্যে একটি হল দক্ষিণ লোনাক হ্রদ। হিমবাহের এই হ্রদটি এখন বছরের পর বছর ধরে সরকারি কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সিকিম বন ও পরিবেশ বিভাগের রিপোর্টে দেখা গেছে যে গত পাঁচ দশকে হ্রদের আয়তন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বন্যার আশঙ্কা

১৯৮৯ সালে লোনাক তাদের প্রাথমিক আকারের প্রায় ১.৫ গুণ এবং দক্ষিণ লোনাক প্রায় ২.৫ গুণ বেড়েছে। ১৯৯১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভের রিপোর্টে এমনটাই জানানো হয়েছিল। দক্ষিণ লোনাক হ্রদকে মূল হিমবাহের কাছে ৪.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঘটেছে। ভবিষ্যতে বড় আকারের ভূমিকম্প হলে এখানেও ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

আরও পড়ুন- নরওয়ের লেখক জন ফস সাহিত্যে ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার জিতলেন

সিকিম সরকার কি কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে?

হ্যাঁ, ২০১৬ সালে সিকিম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি এবং সিকিমের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের সদস্যরা দক্ষিণ লোনাক হ্রদ থেকে হ্রদের জল সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই কৌশলটি উদ্ভাবক সোনম ওয়াংচুকের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ জল বের করার জন্য হ্রদে তিনটি আট ইঞ্চি চওড়া এবং ১৩০-১৪০ মিটার দীর্ঘ হাই ডেনসিটি পলিথিন (HDPE) পাইপ লাগিয়েছিল। সিকিম এসডিএমএ অনুসারে, তারা প্রতি সেকেন্ডে ১৫০ লিটার জল বের করেছিলেন।

Death West Bengal Flood Situation
Advertisment