রীতিমতো ঘড়ি ধরে প্রতিবছরই বর্ষা অসমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনে। এই বছর, এখনও বর্ষা আসেনি। কিন্তু, তার মধ্যেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই পার্বত্য রাজ্যে বন্যা এবং ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ। সরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ১৫। পার্বত্য জেলা ডিমা হাসাও এই আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পার্বত্য রাজ্য অসমের বাকি অংশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে এই জেলার।
এই নজিরবিহীন ধ্বংসে কারণ কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশি কয়েকটি কারণে এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রথমত, অসমে প্রাক্-বর্ষায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত, ১ মার্চ থেকে ২০ মে পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে ৪৩৪.৫ মিলিমিটার। এই বছর সেই পরিমাণটা দাঁড়িয়েছে ৭১৯ মিলিমিটার। মানে, অসমে এবার প্রাক্-বর্ষায় ৬৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশী রাজ্য মেঘালয়েও এবার রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। তার বড় প্রভাব পড়েছে অসমে। গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবিদ্যার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তথা বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ড. ডিসি গোস্বামী বলেন, 'সাধারণত আমাদের জুন এবং জুলাই মাসে বৃষ্টি বেশি হয়। তখনই আমরা বড়মাপের বন্যার মুখোমুখি হই। এবার প্রাক্-বর্ষাতেই ব্যাপক বৃষ্টি হল। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই এমনটা ঘটেছে। বৃষ্টির তীব্রতা, আগমন এবং প্রস্থানের সময় বদলে যাওয়ায় প্রাক্-বর্ষাতেই ব্যাপক ক্ষতির শিকার হলেন অসমের বাসিন্দারা।'
আরও পড়ুন- ভারতপথিকের পথ কি হারিয়ে ফেলেছে ভারত, আড়াইশো বছরে কোথায় রামমোহন?
ব্যাপক ধসও নেমেছে, তার কারণ কী?
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আরণ্যক-এর কর্তা পার্থজ্যোতি দাস বলেন, 'অসমে ভূমিধস নতুন না। তবে, এবার যে মাত্রা এবং তীব্রতায় ঘটেছে, তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। বৃক্ষচ্ছেদন আর তার সঙ্গে পাহাড়ের গায়ে অবাঞ্ছিত কাঠামো গড়ে তোলার ফলেই ধস বেশি নামছে।' পার্থজ্যোতি দাস জানান, এরকম একটি উদাহরণ হল লুমডিং-বদরপুর রেললাইন। ধসে এই রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই রেললাইন মধ্য আসামের লুমডিংকে দক্ষিণ অসমের বদরপুরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। গিয়েছে ডিমা হাসাওয়ের পার্বত্য জেলার মধ্য দিয়ে। ২০১৫ সালে এটি ব্রডগেজে রূপান্তরিত হয়। এই বহু বিলম্বিত সম্প্রসারণের কাজ আবার ১৯৯৭ সালে শুরু হয়েছিল, কিন্তু জটিল ছিল। এই রেলপথ যে এলাকা দিয়ে গিয়েছে, তার মধ্যে ৫৮টি এলাকাই ধসপ্রবণ। ফলে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধসের পথে এই লাইনের ট্রেনগুলো ১ জুলাই পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে।
Read full story in English