দি মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), পাকিস্তানের পার্লামেন্টে এই দলের সদস্যসংখ্যা মাত্র সাত। পাকিস্তানের শাসক দল তেহরিক-ই-ইনসাফের জোটসঙ্গী ছিল এই দল। তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান সরকারের শাসক জোটে দ্বিতীয় বড় দল এমকিউএম। কিন্তু, সেই শরিক দলই বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ফলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যালঘু ইমরানের সরকার। তবে এই শিবির বদলের আগে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত এমকিউএম নেতারা পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ), পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও জামিয়াত উলেমা ইসলামি (এফ) দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে লাগাতার বৈঠক করেছে। তার পরই ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার প্রস্তাবে সই করেছে। আর এভাবেই লহমায় শাসক দল থেকে এমকিউএম পাকিস্তানে হয়ে উঠল 'কিং ব্রেকার'।
কারা এমকিউএম?
সাতের দশকের মাঝামাঝি অল পাকিস্তান মোহাজির স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন থেকে এমকিউএম তৈরি হয়। যে উর্দুভাষী মুসলিমরা দেশভাগের সময় ভারত থেকে পাকিস্তানে গিয়েছিল, তাদের মোহাজির বলা হয়। মহম্মদ আলি জিন্নাহ মুসলিমদের জন্য উপমহাদেশে এক নতুন দেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই টানে পাকিস্তানে বহু উর্দুভাষী মুসলিম গিয়েছিলেন। কিন্তু, সেদেশে তাঁরা মোহাজির হিসেবে চিহ্নিত হন। যেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। এঁদের দাবি-দাওয়াকে সামনে রেখেই তৈরি হয় অল পাকিস্তান মোহাজির স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন বা (এপিএমএসও)। আটের দশকে যখন সব গণতান্ত্রিক দল জিয়া উল-হকের নেতৃত্বাধীন সেনা শাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, এপিএমএসও সেই সময় পাকিস্তান পিপলস পার্টির বিরোধী সংগঠন হিসেবে দ্রুত বেড়ে ওঠে। পিপলস পার্টির শক্ত ঘাঁটি, পাকিস্তানের বন্দর শহর করাচি এবং সিন্ধ প্রদেশে এপিএমএসও নিজেদের মজবুত জায়গা করে নেয়। হামেশাই করাচির রাস্তায় পাকিস্তান পিপলস পার্টি সমর্থকদের সঙ্গে এপিএমএসও-র রাজনৈতিক সংগঠন এমকিউএমের সমর্থকদের মুখোমুখি সংঘর্ষে নামতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও এমকিউএমের সমর্থকদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ধরপাকড়ে নামে।
দুর্বল হয়ে পড়ে এমকিউএম
পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে পারভেজ মুশারফের কলঙ্কজনক বিদায়ের দু'বছর পর, ২০১০ থেকে এমকিউএম ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে। এই দলের প্রবীণ নেতা ইমরান ফারুক লন্ডনে নিজের বাড়ির সামনেই নিহত হন। তদন্তে নেমে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা ফারুকের বাড়ি এবং অফিসে লুকিয়ে রাখা বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করে। যার জেরে তহবিল তছরুপের মামলা শুরু হয়। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে দলের অন্যতম নেতা আলতাফ হুসেনের গোপন যোগাযোগের অভিযোগ প্রচার করে ব্রিটেনের সরকারি সংবাদমাধ্যম। এরপর ২০১৬ সালে করাচিতে হুসেনের বক্তৃতার জেরে ব্যাপক দাঙ্গা বাধে। দুটি গণমাধ্যমের দফতরও সেই দাঙ্গায় আক্রান্ত হয়। পাকিস্তান সরকারের চাপে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ হুসেনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদতের অভিযোগ দায়ের করে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই অভিযোগ থেকেই বেকসুর খালাস হয়ে যান হুসেন। শেষ পর্যন্ত সরকার টেকাতে ইমরান এমকিউএম-পি দলকে জাহাজ দফতরের দায়িত্ব দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু, তার আগেই ইমরানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে দেন এমকিউএম-পি নেতৃত্ব।
Read story in English