মুম্বইয়ের গোরেগাঁওয়ে চাউল উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউতের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। মুম্বইয়ের ভাণ্ডুপে রাউতের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা। রবিবার প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে চলে তল্লাশি। কিন্তু, চাউল উন্নয়ন প্রকল্প কী? আর, সঞ্জয় রাউতের সঙ্গে এই উন্নয়ন প্রকল্পের যোগসূত্রই বা কোথায়?
পাত্র চাউল প্রকল্পটা কী?
সিদ্ধার্থ নগর। যার অন্য নাম পাত্র চাউল। মুম্বইয়ের উত্তর শহরতলির গোরেগাঁওয়ে এই চাউল। এখানে ৬৭২টি বাড়ি আছে। ৪৭ একর এলাকাজুড়ে এই চাউল। ২০০৮ সালে মহারাষ্ট্র হাউসিং অ্যান্ড এরিয়া ডেভলপমেন্ট অথরিটি (এমএইচএডিএ) এই চাউলের উন্নয়নভার হাতে নেয়। উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় গুরু আশিস কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডকে (জিএসিপিএল)। ওই সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৬৭২টি বাড়িরই উন্নয়ন ঘটানোর। পাশাপাশি, এলাকার উন্নয়ন ঘটানোরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই সংস্থাকে। এনিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল জিএসিপিএল, আবাসিক সোসাইটি আর এমএইচএডিএর মধ্যে। তারপর থেকে গত ১৪ বছর ধরে পাত্র চাউলের আবাসিকরা তাঁদের বাড়ি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছেন।
ইডির অভিযোগ কী?
ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে কথা ছিল জিএসিপিএল পাত্র চাউলের ৬৭২ জন আবাসিককে নতুন ঘর বানিয়ে দেবে। আর ফ্ল্যাটগুলোর উন্নয়ন করবে এমএইচএডিএ। চাউলের বাকি জমি বিভিন্ন উন্নয়নকারী সংস্থাকে বেচে দেওয়া হবে।
কিন্তু, ইডির দাবি, সঞ্জয় রাউতের ঘনিষ্ঠ প্রবীণ রাউত এবং গুরু আশিস কনস্ট্রাকশনের অন্যান্য ডিরেক্টররা এমএইচএডিএকে ভুলপথে চালিত করেছিল। আর, ওই চাউলের জমিতে আবাসন তৈরি হবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার গ্রাউন্ড ফ্লোর ন'টি প্রোমোটার বা ডেভলপিং সংস্থাকে বেচে দিয়েছিল। তা থেকে লাভ করেছিল ৯০১.৭৯ কোটি টাকা। আর, এমএইচএডিএর অংশে ৬৭২ জন বাস্তুচ্যুত আবাসিকের যে ঘর বানিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বানিয়েও দেয়নি।
এরপর জিএসিপিএল 'মিডোস' নামে একটি প্রকল্প তৈরি করে। যে জমিটা বেচে দিয়েছিল সেখানে ফ্ল্যাট তৈরি করে। সেই ফ্ল্যাট বিক্রি করে ক্রেতাদের থেকে ১৩৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ইডির অভিযোগ, এই পুরো অপরাধটা করে গুরু আশিস কনস্ট্রাকশন ১,০৩৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল।
আরও পড়ুন- কাজ দিল বিরোধীদের আন্দোলনে, সাসপেনশন প্রত্যাহারের পথে হাঁটলেন স্পিকার
ইডি তদন্তে কী পেয়েছে?
তদন্তে ইডি জানতে পেরেছে এই কেলেঙ্কারিতে সঞ্জয় রাউতের ঘনিষ্ঠ প্রবীণ রাউত রিয়েল এস্টেট সংস্থা হাউসিং ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড (এইচডিআইএল)-এর থেকে ১০০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ, পরিবারের সদস্য, ব্যবসায়িক সঙ্গী আর, সঞ্জয় রাউতের পরিবারের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিল।
ইডির অভিযোগ, ২০১০ সালে ৮৩ লক্ষ টাকা সঞ্জয় রাউতের স্ত্রী বর্ষা রাউতের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছিল। তিনি সেই টাকায় দাদারে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। এছাড়াও মহারাষ্ট্রের আলিবাগের কিথিম সৈকতের কাছে কমপক্ষে আটটি জমি বর্ষা রাউত ও স্বপ্না পাটকরের নামে কেনা হয়েছিল।
এই প্রকল্পে অনিয়মটা কী ছিল?
ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী নির্মাতা সংস্থারই বাস্তুচ্যুত ৬৭২ জন আবাসিকের প্রত্যেক মাসের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল। যতদিন না-প্রকল্পের কাজ শেষ হয়, ততদিন পর্যন্ত এমনটাই চলবে বলে বলা ছিল চুক্তিতে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ভাড়া দেওয়া হয়েছিল কেবলমাত্র ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত। পাত্র চাউলের বাসিন্দারা এমনটাই অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি, তদন্তে দেখা গিয়েছে যে প্রবীণ রাউত-সহ জিএসিএলের ডিরেক্টররা এমএইচএডিএকে ভুলপথে চালিত করেছিল। বদলে ন'জন ডেভলপারকে জমি বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল।
বাস্তুচ্যুত আবাসিকদের বাড়ি ভাড়া না-দেওয়ায়, ভাড়া দিতে দেরি হওয়ায়, আর বেনিয়মের জন্য এমএইচএডিএ ডেভলপারদের বরখাস্তের নোটিস দিয়েছিল ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি। এই নোটিসের বিরুদ্ধে যে ন'টি ডেভলপার সংস্থা ফ্ল্যাটের নীচতলা জিএসিএলের থেকে কিনেছিল, তারা বম্বে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। ৬৭২ জন আবাসিককে অথৈ জলে ফেলে দিয়ে পুনরায় সংস্কারের প্রকল্পটি স্তব্ধ হয়ে যায়।
এই প্রকল্পের বর্তমান পরিস্থিতি কী?
২০২০ সালে মহারাষ্ট্র সরকার অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব জনি জোসেফের নেতৃত্বে এক সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, বাস্তুচ্যুত ৬৭২ জন আবাসিককে কীভাবে পুনর্বাসন দেওয়া যায়, তাঁদের বাড়ি ভাড়ার অর্থ কীভাবে দেওয়া যায়, তা ঠিক করার জন্য। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এবং এমএইচএডিএর থেকে তথ্য পেয়ে ২০২১ সালের জুনে মহারাষ্ট্র মন্ত্রিসভা ফের পাত্র চাউল পুনরায় উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ২০২১ সালের জুলাই মাসে এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি, থেমে থাকা নির্মাণকাজ পুনরায় চালু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। এমএইচএডিএকে এই নির্মাণকাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ৬৭২ জন আবাসিক যাতে নিজেদের ঘর পান, তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল এমএইচএডিএকে। কথা ছিল বাকি ৩০৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ হবে। আর, লটারির মাধ্যমে আবাসিকদের হাতে ফ্ল্যাটগুলো তুলে দেওয়া হবে। এই ব্যাপারে মহারাষ্ট্র সরকারের এক আধিকারিক বলেন, 'এমএইচএডিএই এখন গোটা প্রকল্পটির কাজ করবে। ডেভলপারের দায়িত্ব পালন করবে। ৬৫০ বর্গফুটের কার্পেট এরিয়া ফ্ল্যাট ৬৭২ আবাসিকের প্রত্যেকের হাতে অথবা অবর্তমানে তাঁদের নিকটাত্মীয়ের হাতে তুলে দেবে।'
Read full story in English