অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট
অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বা সংক্ষেপে যাকে বলে ওএসএ, তার মূল রয়েছে ঔপনিবেশিক ভারতে। এর পূর্বজ আইনটি ছিল ইন্ডিয়ান অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯০৪। সে আইন কার্যকরী হয়েছিল লর্ড কার্জনের সময়কালে। কার্জন ভারতের ভাইসরয় হিসেবে ১৮৯৯ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ১৮৮৯ সালে যে ইন্ডিয়ান অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লাগু ছিল, ১৯০৪ সালের আইন তার চেয়ে অনেক বেশি কঠোর। সে সময়ে সারা ভারত জুড়ে বিভিন্ন ভাষায় প্রচুর সংবাদপত্র প্রকাশিত হতে শুরু করে। সে পত্রিকাগুলি অকুতোভয়ে প্রতিদিন সরকারি নীতির সমালোচনা প্রকাশ করে চলত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটানো। এর জেরে সে সব সংবাদপত্রের প্রকাশকরা পুলিশি নির্যাতনের মুখে পড়েছেন, জেলও খেটেছেন। এই আইনের মুখ্য উদ্দেশ্যই ছিল জাতীয়তাবাদী প্রকাশনীর কণ্ঠরোধ করা।
আরও পড়ুন, গোপন নথির সূত্র কিছুতেই প্রকাশ নয়: অনড় এন রাম
১৯২৩ সালের এপ্রিল মাসে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের নতুন সংস্করণ আসে। ইন্ডিয়ান অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট পূর্বতন আইনের স্থলাভিষিক্ত হয়। এ আইনের পরিসর বাড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের সরকারের সমস্ত গোপনীয়তা পর্যন্ত।
আইনের আওতা
গোপনীয়তা আইন মূলত দুটি ক্ষেত্রে কার্যকর হয়, গুপ্তচরবৃত্তি-যা আইনের ৩ নং ধারায় বিধৃত রয়েছে এবং সরকারের গোপন নথি ফাঁস, যা বলা আছে ওই আইনের ৫ নং ধারায়। গোপন তথ্য বলতে অফিসিয়াল কোড, পাসওয়ার্ড, নকশা, প্ল্যান, মডেল. নথি বা তথ্য সহ আরও অনেক কিছুই হতে পারে। যেহেতু গোপন তথ্যে বলতে অনেক কিছুই বোঝায়, ফলে একাধিকবার কথা উঠেছে যে এই ঔপনিবেশিক আইন তথ্যের অধিকার আইন পরস্পরবিরোধী।
আইনের ৫ নং ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ তথ্য পাচার করছে এবং যে ব্যক্তি এ তথ্য গ্রহণ করছে, তাদের দু পক্ষেরই সাজা হতে পারে।
আইনের ব্যবহার
সাম্প্রতিক কালে ২০১৮ সালে এই আইনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন প্রাক্তন কূটনীতিবিদ মাধুরী গুপ্তা। দিল্লি হাইকোর্ট তাঁকে দোষী ঘোষণা করে। তিনি ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশনে চাকরি করতেন। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-কে তথ্য পাচারের দায়ে তাঁকে তিন বছরের কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়। আরেকটি হাই প্রোফাইল মামলা হয়েছিল কাশ্মীর টাইমসের সাংবাদিক ইফতিকার গিলানির বিরুদ্ধে। উপত্যকায় সেনার অবস্থান সম্পর্কিত নথি রাখার দায়ে তাঁকে ২০০২ সালে গ্রেফতার করা হয়। পরে অবশ্য সে মামলা তুলেও নেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে সাংবাদিক পুনম আগরওয়ালকে এ আইনের আওতায় অভিযুক্ত করা হয়। এক সেনা আধিকারিক সেনাবাহিনীর সহায়ক ব্যবস্থার সমালোচনামূলক বক্তব্য নিয়ে স্টিং অপারেশন করেছিলেন পুনম।
Read the Full Story in English