জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে ১৯টি দেশের (এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন) রাষ্ট্রপ্রধান ও নেতারা মিলিত হবেন। এটি আন্তর্জাতিক এই মঞ্চে ভারতের বছরব্যাপী সভাপতিত্বের সমাপ্তি ঘোষণা করবে। এই ধরনের শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তি সাধারণত একটি ঘোষণা বা যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে হয়। যা সদস্যদের সকলের দ্বারা গৃহীত হয়। এটি আন্তর্জাতিক সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতি, ভবিষ্যত সহযোগিতার ক্ষেত্র- ইত্যাদি বিষয়ে অবস্থানের রূপরেখা তুলে ধরে।
২০২৩ সালের জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের এজেন্ডা কী?
জি২০ সম্মেলনের শুরুতে কোনও নির্দিষ্ট এজেন্ডার উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু, চলতি বছরের থিমের ওপর ভিত্তি করে, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম: এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’, ভারত একটি মূল সমস্যা হিসাবে এই বিষয়টির ওপর ফোকাস করেছে। হোয়াইট হাউসের একটি সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, 'জি২০ অংশীদাররা বৈশ্বিক সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন যৌথ প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনা করবে। যার মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ শক্তিকে কাজে লাগানো, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই, ইউক্রেনে বিরুদ্ধে পুতিনের যুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাবগুলো হ্রাস করা, বিশ্বব্যাংক-সহ বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাপী দারিদ্র-সহ বিভিন্ন বিষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা।'
মধ্যপন্থা অবলম্বন
ভারত ইতিমধ্যেই নিজেকে 'গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর' হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছে। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক ব্যাপারে কম প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলোও তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারবে। এর অপর দিক হল, এমন একটি পক্ষ হিসেবে কাজ করা যা ইউক্রেন যুদ্ধের মত বিশ্বব্যাপী সংঘাতে মধ্যপন্থা অবলম্বনের রাস্তা তৈরি করবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অবশ্য দিল্লির সম্মেলনে যোগ দেবেন না। তবে, রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে ল্যাভরভ বলেছিলেন যে রাশিয়া এই মাসে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণার বিরুদ্ধাচারণ করবে না, যদি এটি ইউক্রেন এবং অন্যান্য সংকটের বিষয়ে মস্কোর অবস্থানকেও প্রতিফলিত করে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা সম্মেলনের ফাঁকে পরস্পরের সঙ্গে আলাদা বৈঠকও করতে পারেন। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
গত সম্মেলন যেভাবে কেটেছে
উল্লেখযোগ্যভাবে, গত বছরের শীর্ষ সম্মেলনের সময় ২০২২-এর বালি ঘোষণায় বেশিরভাগ জি২০ সদস্য ইউক্রেন যুদ্ধের কঠোর নিন্দা করেছিল। পাশাপাশি, অন্যান্য ব্যাপারে মতামত জানিয়েছিল এবং পরিস্থিতি এবং নিষেধাজ্ঞার বিভিন্ন মূল্যায়নও করেছিল। আর, তারপর থেকে পশ্চিমী দেশগুলো এবং রাশিয়ার মধ্যে বিভাজন আরও গভীর হয়েছে। এছাড়াও, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত বছরের শীর্ষ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ায় আয়োজিত একটি নৈশভোজের সময় আলাদাভাবে বৈঠক করেছিলেন। এই বৈঠক দুই বছরের বিরতির পরে হয়েছিল।
আরও পড়ুন- ইন্ডিয়া আর ভারত! ব্রিটিশরাজের অবসানে কীভাবে বাছা হয়েছিল দেশের নাম?
ভারত-চিন
ভারত এবং চিন, দুই দেশের মধ্যে 'অস্বাভাবিক' সম্পর্কের কারণে, লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পশ্চিম সেক্টরে সীমান্ত সমস্যাগুলোর জন্য, নয়াদিল্লিতে ভারত এবং চিনের রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে বৈঠক বা যোগাযোগ বজায় রাখা আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। আফ্রিকাতে সম্প্রতি সমাপ্ত ব্রিকস সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট শি তাঁদের এলএসি বরাবর মোতায়েন সৈন্যদের দ্রুত সরিয়ে আনার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু, উভয় দেশই পরে বৈঠকের ফলাফল নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ দিয়েছে। শি এবার আর জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। তার পরিবর্তে চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।