বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪। ধর্মনিরপেক্ষ বিবাহ আইনে বিয়ে করতে চান অনেক দম্পতিই। সাম্প্রতিক যেমনটি করেছেন অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর। এই আইন পছন্দের কারণ, এখানে ধর্মীয় পরিচয়টা গৌণ। জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়াটাই প্রধান। আর, এজন্যই বিয়ের পর স্বরা ভাস্কর এই আইনের তারিফ করেছেন। তাঁর টুইট, 'স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টের জন্য থ্রি চিয়ার্স। এই আইনটা ভালোবাসাকে সুযোগ করে দেয়। প্রেম করার অধিকার, আপনার জীবনসঙ্গী বাছার অধিকার, বিয়ে করার অধিকার এগুলোর ওপর কোনও বিশেষ অধিকার থাকা উচিত না।'
বিশেষ বিবাহ আইন কী?
বিশেষ বিবাহ আইন ১৯৫৪ সালের ৯ অক্টোবর সংসদে গৃহীত হয়েছিল। এই আইনে ধর্মীয় পরিচয় ছাড়াই নাগরিকের বিয়ের অধিকারে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়। বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, দত্তক গ্রহণের মত বিষয়গুলো ধর্মীয় আইন দ্বারাও নিয়ন্ত্রিত হয়। এর মধ্যেই মুসলিম বিবাহ আইন, ১৯৫৪ এবং হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ অনুযায়ী, অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করতে হলে স্বামী বা স্ত্রীকে তাঁর ধর্ম পরিবর্তন করতে হয়। বিশেষ বিবাহ আইনে সেসবের কোনও ঝক্কি নেই। ব্রিটেনের ১৯৪৯ সালের বিবাহ আইনের মতই ভারতের বিবাহ আইন। যেখানে ধর্মীয় এবং ধর্মীয় পরিচয়হীন নাগরিকের বিয়ে, উভয়ই স্বীকৃত। এর আগে ১৮৭২ সালে বিশেষ বিবাহ আইনের একটি সংস্করণ চালু হয়েছিল। পরে, ১৯৫৪ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের সুবিধা-সহ সংস্কার হওয়া আইন চালু হয়।
বিশেষ বিবাহ আইনে কারা বিয়ে করতে পারেন?
এই আইনে সব সম্প্রদায়ের মানুষই বিয়ে করতে পারেন। ১৯৫২ সালে যখন এই বিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তখন একবিবাহের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ বিবাহ আইনের ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, পাত্র বা পাত্রীর অন্য কোনও স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকলে তাঁরা বিয়ে করতে পারবেন না। পাত্র ও পাত্রী, উভয়পক্ষ বিয়েতে সম্মত হলে, তবে বিয়ে করা যাবে। আর, পাত্র এবং পাত্রী উভয়কে বিয়ে এবং সন্তানের জন্মদানের জন্য মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। পাত্রের বিয়ের বয়স ন্যূনতম ২১ হতে হবে। আর, পাত্রীর ক্ষেত্রে ১৮। তবে, ধর্মনিরপেক্ষ আইনে বিয়ে হলে এই আইনের ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, নবদম্পতি তাঁদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বলে বিবেচিত হবেন। এতে তাঁদের উত্তরাধিকারের আইন-সহ অন্যান্য আইনগুলোও প্রভাবিত হবে।
বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ের পদ্ধতি কী?
এই আইনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে একমাস (৩০ দিন) আগে থেকে নোটিস দিতে হয়। তাঁকে জানাতে হয়, পাত্র এবং পাত্রী তাঁর এলাকাতেই বাস করছেন। বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার আগে পাত্র-পাত্রী ও তিন জন সাক্ষীকে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের সামনে স্বাক্ষর করতে হয়। এরপর বিয়ের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। তাতে লেখা থাকে, 'বিশেষ বিবাহ আইনে একটি বিয়ে হয়েছে। তার চূড়ান্ত প্রমাণ এই সার্টিফিকেট। আর, সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান হয়েছে।'
এই আইনে নোটিস পিরিয়ডের ব্যাপারটা কী?
এই আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিয়ে নিয়ে কোনও আপত্তি থাকলে ওই সময়ের মধ্যে জানাতে হয়। তাতে উল্লেখ করতে হয়, এই বিবাহ আইনের কোন ধারা বিয়েটি হলে ভাঙা হবে। আপত্তিকারী ব্যক্তি সেই আপত্তি প্রত্যাহার না-করলে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার তা তদন্ত করে দেখবেন। তিনি সন্তুষ্ট না-হওয়া পর্যন্ত বিয়ে হবে না।
আরও পড়ুন- নিজের বাবার দলেরই প্রতীক পেলেন না উদ্ধব, এ কেমন বিচার কমিশনের?
হেনস্তা কম হয়নি
তবে, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাত্র-পাত্রীদের হেনস্তা করার অভিযোগও নেহাত কমে ওঠেনি। সেকথা মাথায় রেখে ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট গোপনীয়তার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে ঠিকানা যাচাইয়ের নামে থানার মাধ্যমে বিশেষ ম্যারেজ অ্যাক্টের নোটিস পাঠানোর প্রথা বাতিল করেছে। এই ব্যাপারে আদালত বলেছে, 'দু'জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বিয়ের পরিকল্পনার অযৌক্তির প্রকাশ এই বিয়েকেই সমস্যায় ফেলতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, এমনকী বাবা ও মায়ের হস্তক্ষেপের জেরে অন্যপক্ষের একজনের জীবন বা অঙ্গ বিপন্নও হতে পারে।'
অতি সম্প্রতি, একমাসের নোটিস জারির প্রয়োজনীয়তাকে চ্যালেঞ্জ করেও মামলা দায়ের হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছে যে বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪-এর অধীনে যে দম্পতিরা তাঁদের বিয়ে করতে চাইছেন, তাঁরা তাঁদের বিয়ের ইচ্ছাপ্রকাশের পর বাধ্যতামূলক ৩০ দিনের নোটিস প্রকাশ না-ও করতে পারেন।
Read full story in English