Advertisment

APSSDC দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার চন্দ্রবাবু নাইডু, কী এই কেলেঙ্কারি?

সুকৌশলে কোটি কোটি তছরুপ। কী অভিযোগ সিআইডি-র?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
What is the alleged AP skill development scam in which Chandrababu Naidu has been arrested , অন্ধ্রপ্রদেশের স্টেট স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন কেলেঙ্কারির অভিযোগে গ্রেফতার চন্দ্রবাবু নাইডু কী এই দুর্নীতি?

চন্দ্রবাবু নাইডু।

শ্রীঘরে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা তেলেগু দেশম পার্টি'র (টিডিপি) সভাপতি এন চন্দ্রবাবু নাইডু। দুর্নীতির অভিযোগে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) তাঁকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। অন্ধ্রপ্রদেশের স্টেট স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisment

স্টেট স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন কেলেঙ্কারি আসলে কী?

২০২৪ সালে, ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পরে, মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু স্টেট স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। এর অধীনে রাজ্য জুড়ে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাস্টার স্থাপন করার কথাও বলা হয়। বেকার যুবকদের দক্ষতা দেওয়াই ছিল এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য। এই কর্পোরেশন সমগ্র দেশে এবং বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষামূলক কোর্স থেকে বিষয়বস্তু সংগ্রহ করে সেগুলিকে ফের কোর্সে রূপান্তর করত। এরপর স্টেট স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন নথিভুক্ত শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সেই কোর্সের ভিত্তিতে পাঠ দেওয়া হত।

নাইডুর সরকার স্কিল ডেভেলপমেন্ট কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সিমেন্স ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতা (মৌ) স্বাক্ষর করেছিল। সিমেন্স, ইন্ডাস্ট্রি সফটওয়্যার ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং ডিজাইন টেক সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেডের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে অংশীদারিত্বে স্টেট স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন প্রকল্পটি কার্যকর হয়েছিল। সিমেন্সকে ৬টি স্কিল ডেভেলপমেন্ট কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

সমঝোতা অনুসারে, প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৩,৩৫৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে রাজ্য সরকার ১০ শতাংশ দেয় শুধুমাত্র অনুদান হিসাবে। অবশিষ্ট অংশ সিমেন্স বিনিয়োগ করে।। ২০১৫ সলের ১৯ জানুয়ারি, নাইডু কার্যত রাজ্য জুড়ে ১৭টি স্কিল ডেভেলপমেন্ট কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।

২০২১ সালের মার্চ মাসে, মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগনমোহন রেড্ডি অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভায় বলেছিলেন যে, 'স্টেট স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন একটি কেলেঙ্কারি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু এই কেলেঙ্কারীর প্রধান অপরাধী এবং সুবিধাভোগী ছিলেন'। প্রাথমিক তদন্তের পর অন্ধ্রের সিআইডি ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর একটি এফআইআর দায়ের করে কেঙ্কারির তদন্ত শুরু করে।

অন্ধ্রপ্রদেশ সিআইডি'র অভিযোগ কী?

মূল অভিযোগ হল যে, চন্দ্রবাবুর নেতৃত্বে টিডিপি সরকার তাড়াহুড়ো করে প্রকল্পটি চালুর মাত্র তিন মাসের মধ্যে ৩৭১ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছিল। কিন্তু তখন সিমেন্স এক টাকাও বিনিয়োগ করেনি।

এই প্রকল্পে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা খরচ করা হলেও, ২৪১ কোটি টাকা অন্তত পাঁচটি অন্য বা সহযোগি সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছিল। এই পাঁচটি সংস্থা হল- অ্যালাইড কম্পিউটারস, স্কিলার্স ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, নলেজ পডিয়াম, ক্যাডেন্স পার্টনারস এবং ইটিএ গ্রিনস। এই সংস্থাগুলির স্কিল ডেভেলপমেন্ট কেন্দ্রে কম্পিউটার, সফটওয়্যার এবং অন্যান্য জিনিস সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু ওই পাঁচ সংস্থা অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারকে কোনও জিনিসই সরবরাহ বা বিক্রি করেনি। ইনভয়েসে উল্লেখিত আইটেমগুলির প্রকৃত বিতরণ বা বিক্রি ছাড়াই ভুয়ো চালানের উপর ভিত্তি করে এই সংস্থাগুলিতে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে বলে সিআইডি-র তদন্তে উঠে এসেছে।

এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ একটি অংশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাস্টার তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যা সরকারি প্রক্রিয়ার বিরোধী। বাকিটা অন্য বা সহযোগি সংস্থার মাধ্যমে তছমছ হয়েছে বলে সিআইডির অভিযোগ।

তদন্তে সিআইডি অধিকারীদের নজরে পড়েছে যে, যে কোনও নোট ফাইলে তৎকালীন প্রিন্সিপাল সেক্রেটরি, ফাইন্যান্স এবং তৎকালীন মুখ্যসচিবের কোনও সই নেই। ফলে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সিআইডি গোয়েন্দারা মনে করে যে, কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নথি, প্রমাণ ধ্বংস করার জন্যই এই বিষয়টি সুকৌশলে করা হয়েছিল।

সিআইডির মতে, নাইডু এবং শাসক দল টিডিপি কেলেঙ্কারির চূড়ান্ত সুবিধাভোগী ছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এই কেলেঙ্কারির প্রধান ষড়যন্ত্রকারী এবং মূল হোতা। মুখ্যমন্ত্রীই ব্যক্তিগত সংস্থাগুলিতে সরকারি তহবিল স্থানান্তরে সহায়তা করেছিলেন।

অন্ধ্রপ্রদেশ সিআইডির এফআইআরের ভিত্তিতে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও একটি পৃথক তদন্ত চালাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত মামলার অগ্রগতি কতদূর?

২০২৩ সালের১০ মার্চ, ইডি সিমেন্স ইন্ডাস্ট্রি সফটওয়্যার (ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেডের প্রাক্তন এমডি সৌম্যদ্রি শেখর বোসকে গ্রেফতার করেছে। এরপর ধরা হয় বিকাশ ডিজাইনটেক সিস্টেম লিমিটেডের এমডি বিনায়ক খানভালকার, পিভিএসপি আইটি স্কিল প্রজেক্টস লিমিটেডের এমডি মুকুল চন্দ্র আগরওয়াল, এসএসআরএ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সুরেশ গোয়েলকে। ধৃতদের বিরুদ্ধে অন্য বা সহযোগি কোম্পানির মাধ্যমে ২৪১ কোটি টাকা তছরুপে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং আইনের (পিএমএলএ) অধীনে এই চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

শনিবার নাইডুকে গ্রেফতার করার সময়, সিআইডির অতিরিক্ত ডিজি এন সঞ্জয় বলেছেন যে, 'তদন্ত আরও বিস্তৃত হবে।' তাঁর কথায়, 'পাচার করা অর্থ কোথায় গেল? নাইডুকে হেফাজতে সেই প্রশ্নেরই উত্তরই জানার চেষ্টা করা হবে। এমন প্রমাণ রয়েছে যে টাকাগুলি অন্য বা সহযোগি সংস্থাগুলিতে গিয়েছিল এবং তারপরে নাইডু এবং তাঁর ছেলে নারা লোকেশের সঙ্গে সম্পর্কিত অ্যাকাউন্টগুলিতে টা স্থানান্তর হয়। নারা লোকেশ, নাইডুর ছেলের সঙ্গে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জড়িত, যাঁরা এই বেআইনিভাবে সরকারি তহবিল ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরে জড়িত। ফলে লোকেশ নাইডুর ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না'

চন্দ্রবাবু নাইডুর বিষয়ে সিআইডি কী বলছে?

সিআইডি অভিযোগ করেছে যে, চন্দ্রবাবু নাইডু এই প্রকল্পের নেপথ্যে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী, অন্য বা সহযোগি সংস্থাগুলির মাধ্যমে সরকারি তহবিল বেসরকারি সংস্থাগুলিতে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করেছিলেন, যার ফলে সরকারি কোষাগারের ক্ষতি হয়েছিল। অভিযোগ যে,এই বেআইনি লেনদেনের সবই জানতেন চন্দ্রবাবু। কৌশলেই সরকারি আদেশ এবং সমঝোতা হয়েছি। ফলে কেলেঙ্কারিক মূল হোতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীই বলে মনে করছে সিআইডি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতারও করা হল।

তদন্তে চন্দ্রবাবু নাইডু প্রধান অভিযুক্ত এবং তৎকালীন শাসক দল টিডিপি, সেই দলের নেতৃত্ব অপব্যবহারকৃত তহবিলের সুবিধাভোগী হিসাবে অভিযুক্ত।

Chandrababu Naidu Andhra Pradesh TDP
Advertisment